E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাওরে সৌন্দর্য বাড়িয়েছে সূর্যমুখী 

২০২১ মার্চ ১০ ১৫:৩২:৪৬
হাওরে সৌন্দর্য বাড়িয়েছে সূর্যমুখী 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : পুরো হাওর জৃুড়ে মনজুড়ানো মায়াময় চির সবুজের হাতছানি যে কাউকে মুগ্ধ করবে নিঃসন্ধেহে। যে দিকেই মন যাবে সে দিকেই শুধু প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হাতছানি দিবে। বলছিলাম মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিন্নার হাওরের কথা। যেখানে প্রতিবছর ধান চাষ করে আসছেন কৃষকরা, সেখানের প্রকৃতিতে এখন সৌন্দর্য বাড়িয়েছে সূর্যমুখী ফুলের নজরকাড়া বাহারি রূপ। 

আজকাল অনেকেই সূর্যমুখী ফুল শখ করে বাসার ছাদে কিংবা ঘরের বাড়ান্দায় থাকা টবে অন্যান্য ফুলের সাথে লাগিয়ে থাকেন সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। নানা রকম ফুলের মধ্যে সূর্যমুখী ফুল সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করে। মায়াময়ী ঘন হলুদ সূর্যমুখী ফুলের প্রতিটি শাখা জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে নানান রঙের প্রজাপতি আর মৌমাছী। এতে করে হাওর প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে পর্যটনের নতুন এক সম্ভাবনা। সূর্যমুখী চাষ কী শুধু মাত্র শোভা আর সৌন্দর্য বাড়ায়? না বরং এর রয়েছে আরও নানা রকম গুণাগুণ। এই ফুল থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার গুণ অনন্য, দেশীয় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। ফলে সূর্যমুখী ফুলের বাগান ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে পর্যটন শিল্পের অমিত সম্ভাবনা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা মৌলভীীবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটের পাশাপাশি এখন অনেকে নতুন করে সূর্যমুখী বাগান দেখতেও আসছেন প্রতিদিন।

গত সোমবার (৮মার্চ) দুপুরের দিকে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী লুৎফুল বারীসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা সরেজমিন পরিদর্শনে যান মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২ নং গিয়াসনগর ইউনিয়নের আজেমেরু গ্রামের পাশের বিন্নার হাওরে আবস্থিত কৃষক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন ও এসএম উমেদ আলীর মালিকানাধীন খামার বাড়িতে। বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা এই খামার বাড়িটি এখন পর্যটকদের আকর্ষনের পাশাপাশি কৃষি ভিত্তিক উদ্যেক্তাদেরও উদ্দীপনা যোগাবে নিঃসন্দেহে। বিস্তির্ন হাওর এলাকার কৃষি জমি জুড়ে সারি সারি লাগানো সূর্যমুখী গাছ গুলো দেখলে মনে হবে দাঁড়িয়ে আছে যেন নতুন অথিতিদের ফুলেল অভ্যার্থনা জানাতে। দিগন্ত জুড়ে তাঁক লাগানো এমন হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের দিকে তাকালে মননে সৃষ্টি হবে অনন্য এক শিহরণ।

শুধু যে সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে তা নয়। এই খামার বাড়িতে শীতকালিন শাক-সবজি, উচ্চ ফলনশীল দেশী টমেটো,নানান জাতের আমসহ নানান জাতের ফসল বাণিজ্যিকভাবে নিয়মিত চাষাবাদ হচ্ছে। খামারে রয়েছে বেশ কয়েকটি পুকুরও। পুকুর গুলোতে চাষ করা হয় নানান প্রজাতির দেশীয় মাছ।

২০২০ সালের দিকে প্রথমবারের মত কৃষক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন ও এসএম উমেদ আলী ২২ কিয়ার কৃষি জমিতে অধিক লাভের আশায় শুরু করেন সূর্যমুখী চাষ। অগ্রাহয়ন মাসে আমন ঘরে তোলার পর শুরু হয় এর চাষাবাদ।

কৃষক এসএম উমেদ আলী জানান, সূর্যমুখী চাষের জন্য স্থানী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিনা মূল্যে বীজ দিয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এবছর দ্বিতীয় বারের মত নিজেদের কৃষি জমির এক পাশে প্রায় ৬ কিয়ার জমির উপর সূর্যমুখী চাষাবাদ করা হয়েছে। প্রতি কিয়ার জমিতে এক কেজি বীজ ব্যবহার হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে মৌলভীবাজার জেলায় সূর্যমূখী চাষ শুরু হয়। ফলন ভাল হলে প্রতি একর জমিতে সর্বোচ্চ ৩৫ মন সূর্যমূখী চাষ সম্ভব। আর বিক্রি হয় মন প্রতি ২৫শ টাকা দরে। সূর্যমুখী চাষের জন্য প্রয়োজন দোয়াস বা বেলে দোয়াস জাতিয় মাটি। এখানকার মাটি এডেল দোয়াস হওয়ায় ফলন খুব একটা ভাল হচ্ছে না। মাটির পাশাপাশি এখানে চাষাবাদের ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পানি সঙ্কট, দেরিতে রূপন করা ও যথাযত ধারণা না কিংবা প্রশিক্ষণ না থাকা।

জানা যায়, এ বছর গিয়াসনগর ইউনিয়নে প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী চাষাবাদ হচ্ছে। তবে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠায় আগামীতে চাষাবাদ আরো বাড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, সরকারের পলিসি হলো কৃষিকে বাণিজ্যিকরণ করা, সে লক্ষে আমরা উচ্চ ফলনশীল কৃষির উপর জোর দিচ্ছি, তার মধ্যে সূর্যমুখী অন্যতম,কারন এর ভোজ্য তেল অনেক উন্নত ও পুষ্টি সমৃদ্ধ। এর ফুল গুলো যখন ফুটে তখন এটা খুবই নান্দনিক। এখানে অনেক পর্যটক আসেন, কাজেই এখানে এই ফসলটির ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল।

তিনি জানান, গত বছর মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলায় ৫৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হলেও এ-বছর তা বেড়ে ৫শ ৬৫ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে, যা আগামীতে আরো বাড়বে বলে মনে করি। সেক্ষেত্রে আমরা প্রশিক্ষণসহ বিনা মূল্যে বীজ দিচ্ছি কৃষকদের।

(একে/এসপি/মার্চ ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test