E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সু নজর না দিলে নিভে যাবে মৃৎশিল্পের শেষ বাতিটি

২০২১ আগস্ট ০১ ১৫:৪৩:৫১
সু নজর না দিলে নিভে যাবে মৃৎশিল্পের শেষ বাতিটি

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি : বাবার দাদা মৃত বাল্যক রামপাল তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মৃৎশিল্পের কাজ শুরু করেন। দাদার বড়ো ভাই মৃত দীপ নারায়ণ পাল সেসময় একজন ভালো মৃৎশিল্পী ছিলেন। দাদার পূর্বপুরুষের জন্মস্থান ছিল ভারতের বিহার রাজ্যে। শিউল প্রসাদ পালের ছেলে রামায়ণ প্রসাদ পাল ছয় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ধামইরহাটের মাটিতে গৃহস্থালি কাজে ব্যাবহৃত বাহারী নক্সার আসবাবপত্র তৈরি করে এলাকায় সুনাম অর্জন করেন। সেই থেকে তাদেরকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে রামায়ণ প্রসাদ পাল ৮৫ বছর বয়সে এসে নানান অসুখ-বিসুখে দিন কাটাচ্ছেন।

রামায়ণ প্রসাদ পাল বলেন, বাবু, আমি এখন আমার বংশের ১৪ পুরুষের হাল ধরে আছি। আমার তিন ছেলে। ছেলেদের এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে মাঠির কাজ করতে বললেই বলে, বাবা বর্তমানে মাটির জিনিস তৈরি করে আমাদের জীবন সংসার চলবেনা। তোমাদের সময় এর কদর ছিল সম্মান ছিল। প্রয়োজনে মাঠে কাজ করবো ভ্যান রিক্সা চালাবো। এসব বলে এড়িয়ে যেতো। তবে আমার দ্বিতীয় ছেলে সন্তোষ কুমার পাল বংশের একমাত্র শেষ ভরসা কেবল মাত্র সেই আমার ১৪ পুরুষের হাল ধরে আছে।

ভারাক্রান্ত কন্ঠে রামায়ণ প্রসাদ পাল বলেন, বাবু কি আর বলি! আমাদের পুর্বপুরুষরা শৈশব থেকেই মৃৎশিল্পের কারিগর। আমি এবং আমার বড় ভাই দু'জনেই বাবার কাছ থেকে এ শিল্পের কাজ শিখি। বর্তমান সময়ে অভাবের তাড়নায় বউ-বাচ্চা, নাতি পুতিদের নিয়ে খুব কষ্টে জীবন পার করছি। ইজ্জতের ভয়ে এতো কষ্টের মাঝেও কারও কাছে হাত পাতিনি। একসময় গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে মাটির জিনিসপত্রের কদর ছিলো। উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত থেকে নি¤œ শ্রেনির মানুষ তাদের ঘর সাজাতেন বাহারি রঙের মাটির ফুলদানি ব্যালকনি দিয়ে। ছাদের উপরে শোভা পেত ফুলের টব, কুপি, ভাপা পিঠা বানাতে মাটির খুরি, মাটির ঢাকনা, সো-কেসে শোভা পেতো বাচ্চাদের হরেক রকমের খেলনা পুতুল, হরিণ, ঘোড়া, বদনা, মসলা বাটা বাটি, মাটির কলসি ইত্যাদি। পান্তা-ইলিশের মাটির থালা ছাড়া বৈশাখ মাসে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় কখনো ভাবাই যেতনা। প্রতিদিন ক্রেতা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যেত দিনে অন্তত পক্ষে দু-চার হাজার টাকা বেচাকেনা হতো দিব্যি সংসার চলতো।

শিল্পীর জাদুকর রামায়ণ প্রসাদ পাল আলাপচারিতার এক পর্যায়ে আক্ষেপ করে বলেন, শুধু বৈশাখ এলেই সাহেব বাবুদের আমাদের কথা মনে পড়ে। কারণ পান্তা-ইলিশে তাদের মাটির থালা দরকার হয়.! অথচ আমি এবং আমার চৌদ্দ পুরুষ দু-হাত দিয়ে বাঙালীর ঐতিহ্য মৃৎ শিল্পকে বুকে লালন পালন করে আসছি। সরকার যদি আমাদের এ শিল্প রক্ষায় কিছু করতো পরিবেশটাও ভালো থাকতো আমরাও ভালভাবে বাঁচতে পারতাম।

কথাগুলো বলতে বলতে রামায়ণ প্রসাদ পাল আবেগে কন্ঠ ভারী হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আমার দ্বিতীয় ছেলে সন্তোষ কুমার পাল এই বংশের একমাত্র শেষ বাতি। সরকার আমাদের দিকে সু নজর না দিলে আমার এই বাতি টিপ টিপ করে জ্বলতে জ্বলতে একদিন নিভে যাবে।

(এবি/এসপি/আগস্ট ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test