E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বিলুপ্তির পথে তাঁত শিল্প

২০২১ সেপ্টেম্বর ১০ ১৫:৩৮:৩৭
বিলুপ্তির পথে তাঁত শিল্প

এ কে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার কারিগর পাড়ায় আর পাওয়া যাচ্ছে না খট খট শব্দ। রং ও সুতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ক্রমাগত লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁত শিল্প। চরম অর্থ সংকট ও সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ার কারণে পুঁজির অভাবে তাঁত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

যদিও এক দশক আগেও ২ হাজার তাঁত কল সচল থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৫০টির মতো তাঁত শিল্পী। পুঁজির অভাবে অনেক তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে পড়ার কারণে শ্রমিক ও মালিকরা তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের পাটকিয়াবাড়ী, গঙ্গারামপুর, মধুপুর, খালিয়া, ছোটহিজলী, বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের পূর্ব মৌকুড়ী, ইসলামপুর ইউনিয়নের বারাদী, সারুটিয়াসহ বেশ কিছু গ্রামে তাঁতের তৈরী লুঙ্গি, শাড়ী, গামছা তৈরী হতো। এখন বেশির ভাগ এলাকায় তাঁত বন্ধ হয়ে পড়েছে। বারাদী, পূর্ব মৌকুড়ি, সারুটিয়া এলাকার তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁত শ্রমিকরা বিভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছে।

গত ৯ আগস্ট বিকেলে উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামে সড়ক দিয়ে যেতেই শোনা যাচ্ছিল তাঁতের খট খট শব্দ। বাপ-দাদার আমলের পেশা ধরে রেখেছে এ গ্রামের কয়েকজন তাঁতী।

গঙ্গারামপুর গ্রামের মোঃ চাঁদ আলী মল্লিক বলেন, কাপড়ের দামের চেয়ে সুতার দাম বেশি হওয়ায় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। এক থানে ৪পিছ লুঙ্গি হয়, এতে ব্যয় হয় ৫শত টাকা আর বিক্রি হয় ৬শত ৩০ টাকা। তাও কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে সুতা আমদানী করে তৈরী করার পর আবারও কাপড় কুমারখালীতে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। এতে শ্রমিকের বেতন, যাতায়াতসহ আনুসাঙ্গিক খরচ পোষাতে পারি না। শুধু বাপ-দাদার ঐতিয্য রক্ষার্থে শ্রমিক বাদ রেখে আমরা পরিবারের ৫জন সদস্য শ্রম দেই।

তাঁতী আলাউদ্দিন মল্লিক বলেন, কাচামাল তুতে, সাগু, আতপ চাউল, সোহাগা, রং, সুতাসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলেও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে ৫টি তাঁত কারখানার মধ্যে একটি সচল রেখেছি। অর্থাভাবে এটিও বন্ধ করে না দিতে হয়।

গঙ্গারামপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মল্লিক বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার তাঁত শিল্পের মধ্যে সবই প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমাদের গঙ্গারামপুর গ্রামে ১০টি তাঁত শিল্প চালু রয়েছে। আমরা এখন তাঁত শিল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাপ-দাদার ঐহিয্যকে ধরে রাখতে যেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধের পথে। তাই এ তাঁত শিল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। অনেক তাঁতী এ শিল্প বাদ দিয়ে কৃষি ও অন্যান্য কাজে যোগ দিচ্ছে। সরকার যদি নতুন উদ্যোগে আমাদের পাশে এসে দাড়ায় তাহলে বাপ-দাদার গড়ে তোলা এ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের বাবর আলী মল্লিক বলেন, আমার পিতা আহেদ আলী মল্লিক ছিলেন স্বশস্ত বাহিনীর সদস্য। তিনি ১৯৭২-৭৩ সালে সরকারী ভাবে সুতাসহ অনুদান পান। তারপর আর কোন সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কেউ। ক্রমাগত লোকসানের কারণে আমার দু,টি তাঁত কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। এখন পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি।

নারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, এ ইউনিয়নে অনেক তাঁত শিল্প ছিল। আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখনো অনেকেই ধরে রেখেছেন। তবে এদেরকে সহজ শর্তে ঋনের ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আম্বিয়া সুলতানা বলেন, তাঁতীরা এখন অন্য পেশায় ঝুকে পড়ার কারণে তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নিকট থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। শিঘ্রই বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাঁত শিল্প রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test