E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুলিশ ভেরিফিকেশন কী ও কেন করা হয়?

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৬:০৮:৩১
পুলিশ ভেরিফিকেশন কী ও কেন করা হয়?

ফিচার ডেস্ক : বাংলাদেশ পুলিশের একটি অন্যতম সেবা হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন তথা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। বিভিন্ন কাজে পুলিশের এই ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন পড়ে। পুলিশ প্রশাসন এদেশের নাগরিকদেরকে এই সেবা প্রদান করেন।

তবে এই পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে অনেকের মনেই থাকে নানা ধরনের প্রশ্ন। চলুন তবে একে একে জেনে নেওয়া যাক পুলিশ ভেরিফিকেশন আসলে কী, এটি কেন করা হয় ও করতে কী কী তথ্যাদি ও কতদিন সময় লাগে-

* পুলিশ ভেরিফিকেশন কী?

সাধারণত চাকুরি, পাসপোর্ট, লাইসেন্স বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অবদানকারী প্রদত্ত তথ্যাদি সঠিক আছে কি না তা পুলিশ কর্তৃক যাচাই করাকে ভেরিফিকেশন বা সত্যতা প্রতিপাদন বলে।

ভেরিফিকেশনকালে প্রার্থীর প্রদত্ত তথ্যাদির সত্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি প্রার্থরি চারিত্রিক ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কেও তথ্য নেওয়া হয়।

* কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে পারে?

>> সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি (ঐচ্ছিক) প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ
>> পাসপোর্ট প্রাপ্তি
>> বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও
>> বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

* পুলিশ ভেরিফিকেশন এর আবেদনপত্রে প্রার্থীর কোন ঠিকানা (স্থায়ী/অস্থায়ী) দিতে হয়?

এক্ষেত্রে উভয় ঠিকানাই দিতে হয়। স্থায়ী ঠিকানা বলতে বুঝায় প্রার্থীর নিজ নামীয়, পিতার নামীয় বা দাদার নামীয় বাড়িসহ যে কোনো ভূ-সম্পত্তি।

যেখানে প্রার্থীর অধিকারসত্ত্ব ও বসতবাড়ি আছে। যে ভূ-সম্পত্তিতে প্রার্থীর অধিকারসত্ত্ব ও বসতবাড়ি নেই, সেক্ষেত্রে যেখানে প্রার্থী বসবাস করেন সেখানকার অস্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে।

* পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ব্যতীত অন্য কোনো ঠিকানা দিতে হয় কি?

স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ছাড়াও সাধারণত প্রার্থী বিগত ৫ বছর যেসব ঠিকানায় ৬ মাসের অধিক সময় অবস্থান করেছেন ও প্রার্থী ১৫ বছর বয়স হতে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছেন বা যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন ও অধ্যয়নকালীন বা কর্মরত থাকাকালীন সময়ে যেসব ঠিকানায় অবস্থান করেছেন, সেগুলোও উল্লেখ করতে হয়।

* পুলিশ ভেরিফিকেশনের তদন্তের সময় প্রার্থীকে কি থানায় যেতে হয়, নাকি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার প্রার্থীর ঠিকানায় তদন্ত করতে যাবেন?

পুলিশ ভেরিফিকেশনের তদন্তের সময় প্রার্থীকে সাধারণত থানায় যেতে হয় না। কারণ তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপনে ও প্রকাশ্যে প্রার্থীর উল্লিখিত ঠিকানা সমূহে সরজমিনে তদন্ত করে থাকেন।

তবে তদন্তকালে প্রার্থী যদি তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদামতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে পরবর্তী সময়ে ওই ডকুমেন্ট পৌঁছে দিতে আলোচনা সাপেক্ষে থানায় যেতে হতে পারে।

* পুলিশ ভেরিফিকেশনের তদন্তের সময় প্রার্থীকে কি তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের নিকট কোন ডকুমেন্ট ও কি কি দিতে হয়?

পুলিশ ভেরিফিকেশনের তদন্তের সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রার্থীর নিকট হতে কতিপয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে পারেন। যেমন- প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানার স্বপক্ষে সে বাড়ির দলিলের কপি বা বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/ওয়াসার বিল/টেলিফোন বিল ইত্যাদির কপি।

এ ছাড়াও, প্রার্থীর ভি-রোলে (প্রার্থীর তথ্য সম্বলিত ফর্ম) যেসব তথ্য প্রদান করা হয়েছে, সেগুলোর যাচাই বা প্রমাণের জন্য সেগুলোর সমর্থনে প্রামানিক দলিলাদি।

* পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হতে সর্বোচ্চ কতদিন সময় লাগে?

এটি নির্ভর করে সাধারণত কত জায়গায় ভেরিফিকেশন করতে হয় তার উপর। যদি একটি পুলিশ ইউনিটের অধিক্ষেত্রের মধ্যে ভেরিফিকেশন করতে হয়, তাহলে সাধারণত ৩ দিনের মধ্যেই তদন্ত সম্পন্ন করতে হয়।

তবে যদি প্রার্থীর স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন জেলায় হয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা চাকুরির প্রতিষ্ঠানও ভিন্ন ভিন্ন জেলায় হয় সেক্ষেত্রে ১৫ দিন বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে।

* পুলিশ ভেরিফিকেশন চলাকালে প্রার্থী যদি কোনো ধরনের হয়রানীর শিকার হন সেক্ষেত্রে প্রার্থী কোথায় অভিযোগ করবেন?

পুলিশ ভেরিফিকেশন চলাকালে প্রার্থী যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হন, সেক্ষেত্রে ওই তদন্তকারী কর্মকর্তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার নিকট অথবা বিশেষ পুলিশ সুপার (ভিআর) বা অতিরিক্ত আইজিপি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ, রাজারবাগ, ঢাকা বরাবর লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ জানাতে পারেন।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় সাধারণত প্রার্থীর যেসকল বিষয়ে তদন্ত করা হয়, সেগুলো হলো-

>> প্রার্থীর পুরো নাম

>> প্রার্থীর জাতীয়তা

>> প্রার্থীর পিতার পুরো নাম ও জাতীয়তা

>> প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা (বাড়ির দলিলের কপি বা বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/ওয়াসার বিল/টেলিফোন বিল, ইত্যাদির কপি)

>> প্রার্থীর বর্তমান বাসস্থলের ঠিকানা

>> প্রার্থীর বৈবাহিক অবস্থা

>> প্রার্থী বিগত ৫ (পাঁচ) বছর যেসব ঠিকানায় অবস্থান করেছেন সেগুলোর ঠিকানা

>> প্রার্থীর জন্মতারিখ (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট বা জন্ম সনদ)

>> প্রার্থীর জন্মস্থান (গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলা, জেলা ইত্যাদি)

>> প্রার্থীর ১৫ বছর বয়স হতে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি) অধ্যয়ন করেছেন সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য।

>> প্রার্থী যদি কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, স্থানীয় সরকারের কোনো সংস্থা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পূর্বে চাকুরি করে থাকেন বা বর্তমানে কর্মরত থেকে থাকেন সেগুলোর তথ্য।

>> প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার পুত্র/কন্যা/নাতি/নাতনি কি না?

>> প্রার্থী অন্য কোনো কোটাধারী কি না?

>> প্রার্থীর কোনো ধরনের শারীরিক অক্ষমতা আছে কি না?

>> প্রার্থী ফৌজদারি, রাজনৈতিক, বা অন্য কোনো মামলায় অভিযুক্ত, গ্রেফতার, দণ্ডিত ও নজরবন্দি বা কোনো বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা হতে বহিষ্কার হয়ে থাকলে তার তথ্য।

>> প্রার্থীর নিকট আত্বিয়-স্বজন (পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আপন মামা, চাচা, খালু, ইত্যাতি বা শ্বশুরের দিকের অনুরূপ কোনো নিকট আত্মীয়) বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত থাকলে সেগুলোর তথ্য।

>> প্রার্থী কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বা নৈতিক স্খলনের রেকর্ড আছে কি না?

>> এরই মধ্যে প্রার্থী কোনো সরকারি চাকুরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন কি না?

>> প্রার্থী কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী বা নাশকতামূলক কর্যকলাপে জড়িত আছেন বা ছিলেন কি না?

>> প্রার্থীর চারিত্রিক ও সামাজিক অবস্থান।

>> এ ছাড়াও আবেদনের ধরন অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় অন্য যে কোনো বিষয়ে তদন্ত হতে পারে।

সূত্র: বাংলাদেশ পুলিশ

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test