E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে টুল-পিঁড়িতে বসে চুলদাড়ি কাটা

২০২২ অক্টোবর ১৪ ১৭:৫৫:৪৬
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে টুল-পিঁড়িতে বসে চুলদাড়ি কাটা



অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল আর দাড়ি মানুষের ব্যক্তিত্বকে শাণিত করে। এই চুল-দাড়ি নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। সেই কারণে কেশ বিন্যাসের কারিগরদের অর্থাৎ নরসুন্দরদের কদর ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গতিধারায় এসেছে পরিবর্তন, লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।

সেই ধারায় হাট-বাজারের বটবৃক্ষের ছায়ায়, খেয়াঘাটে, ফুটপাতে কিংবা গ্রাম-গঞ্জের জলচৌকিতে বা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে নাপিতের হাঁটুর কাছে মাথা পেতে দিয়ে আবহমান গ্রাম-বাংলার মানুষের চুল-দাড়ি কাটার সেই আদি পরিচিত দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না। দক্ষতার অভাবেও অনেকে পুরানো নিয়মে পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। এখন আধুনিক যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন তারা হার মানতে বসেছেন।

বর্তমানে এ পেশায় যারা নিয়োজিত আছেন হাতে গোনা কয়েকজন। বাকিরা এখন প্রায় সব বেকার। আয়-রোজগার কম আর এ পেশায় খুব বেশি একটা সুবিধাজনক না থাকায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে হারিয়ে যাচ্ছেন সেই চিরপরিচিত নরসুন্দররা। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কিছু সাপ্তাহিক হাট-বাজারে এখনো নিভে যাওয়া সলতের মতো জেগে রয়েছেন কিছু মেঠো নরসুন্দর।

এ পেশায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এখন আর সেই আগের দিনের মতো বাছ-বিচার নেই। কোনো বিশেষ শ্রেণির মানুষ এখন আর এই পেশায় যুক্ত হয় না। বরং সব সম্প্রদায়েই কেউ না কেউ এ পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি বিউটি পার্লারও পিছিয়ে নেই। হাট-বাজারে বটতলা বা অশ্বত্থ গাছের নিচে নরসুন্দরদের মাটিতে বসে লাইন দিয়ে কাজ করতে দেখা যায় না। কোনো সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও চুল, দাড়ি কাটাতে ডাক পড়ে না নরসুন্দরদের।

কথা হয় হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শ্রিফলতোলা এলাকার বাসিন্দা সমর বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি জানান, হাটও গ্ৰামে গ্ৰামে ঘুরে বসে পুরানো দিনের মতো চুল-দাড়ি কামানোর প্রথাকে আঁকড়ে ধরে রুটি রুজির সন্ধানে আজও সময় পার করছি। বয়স এখন তার প্রায় ৭০। হাট ও গ্ৰামে ঘুরে প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার। সাপ্তাহিক হাটের দিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। অন্যান্য দিনগুলোতে কোনো গ্ৰামে ঘুরে দিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার কাজ হয়। আর জন প্রতি চুল কাটা ৩০ টাকা ৪০ টাকা করে দেয়। কোনো দিন তাও হয় না। আজ পর্যন্ত হাটবাজারের বড় আয়না ঝুলানো দোকান দিতে পারিনি। তাই আজও টুল-পিঁড়িতে বসে কাজ করছি।

একই এলাকার সঞ্জয় শীল (৪০) জানান, তিনি ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে প্রতিদিন বিভিন্ন হাট-বাজারে যেতেন এবং তার কাজে সহযোগিতা করতেন। সেই থেকে কাজের সূচনা, বর্তমানে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চরপাড়া বাজার এলাকায় প্রতিদিন ফুটপাতে বসে তারা কয়েকজন মিলে কাজ করছেন বলে জানান।

(একে/এএস/অক্টোবর ১৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test