E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রিকশার প্যাডেলে যেন দম বন্ধ হয়ে যায় মুনছুরের

২০২২ ডিসেম্বর ০২ ২৩:২৫:০৯
রিকশার প্যাডেলে যেন দম বন্ধ হয়ে যায় মুনছুরের

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : বৃদ্ধ মুনছুর আলী। বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই। বয়সের ভারে কমেছে শারীরিক শক্তি। দেহে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। তিন যুগ ধরে রিকশা চালিয়ে পেটের ক্ষুধা ও ওষুধের খরচ যোগাতে হচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণ রিকশার প্যাডেল ঘুরালে যেন দম আটকে যায় তার। তবুও থেমে নেই জীবনযুদ্ধ। এই রিকশা দিয়ে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে চলে মুনছুরের সংসার।

মুনছুর আলীর বাড়ি গাইবান্ধার সাদুলাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত টাঙ্গারু শেখের ছেলে। সম্প্রতি তার সঙ্গে দেখা হয় সাদুল্লাপুর শহরে। এ শহরে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন। গন্তব্যে না পৌঁছাতে শরীর হাঁপিয়ে ওঠে তার। মাঝে মাঝে হেঁটে টেনে নিয়ে চলেন রিকশা।

জানা যায়, একদম ছিন্নমূল মানুষ মুনছুর আলী। স্ত্রী-ছেলে ও তিন মেয়েসহ ৬ সদস্যের সংসার। অন্ন-বস্ত্র যোগাতে তিন চাকার রিকশা একমাত্র সম্বল তার। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে হাতে হ্যান্ডেল আর পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন।

কয়েক বছর আগে তার রিকশা রেখে নামাজে গেলে চুরি হয়ে যায় সেটি। ফলে থমকে যায় জীবনযুদ্ধ। এরই মধ্যে গাইবান্ধার এক চিকিৎসক কিনে দেন একটি রিকশা। তবে সেটি কোনো ব্যাটারি চালিত নয়। তবুও জীবিকার তাগিদে পায়ে প্যাডেল মেরে লাগাতার যাত্রী বহন করে চলেছেন তিনি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই উপার্জনের টাকা দিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটিও বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই তার। এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের ভূমিতে বসবাস। বৃদ্ধ বয়সেও নেই কোনো অবসর।

সকাল হলেই রিকশা নিয়ে বের হতে হয় তাকে। যাত্রী নিয়ে ছোটেন নানা দিক। এর পাশাপাশি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভুলেনি কখনো। তাকে রিকশা নিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে। তবে যাত্রী উঠে কম। কারণ, বার্ধক্য বয়স আর প্যাডেল চালিত রিকশা। তাই যাত্রীরা উঠতে অনাগ্রহী। খুব মিনতি করে যাত্রী তুলে নেন এই বৃদ্ধ মনুছুর আলী। এভাবে দিন শেষে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনমতে চলছে জীবিকা। যেন নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা তার। শেষ বয়সেও মুনছুর আলী তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় রিকশা নিয়ে ছুটে চলা তার।

রিকশা চালক মনছুর আলী জানান, একদম ভূমিহীন ব্যক্তি তিনি। বয়সও এখন বার্ধক্যে। ঝুঁকিপুর্ণ ঘরে করেন বসবাস। সীমিত আয়-রোজগারে স্ত্রীকে নিয়ে কোনভাবে বেঁচে আছেন।

তিনি আরও বলেন, বুড়ো হওয়ার কারণে আমার রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তারপরও রিকশাটি যদি ব্যাটারি-চার্জার চালিত হতো, তাহলে হয়তো কিছু যাত্রী পাওয়া যেত। কিন্তু টাকার অভাবে গাড়িতে ব্যাটারি লাগাতে পারছি না। কেউ যদি একটি অটোরিকশা দিয়ে সহযোগিতা করতেন তাহলে হয়তো কিছুটা আরামে গাড়ি চালাতে পারতাম।

খালেদ হোসেন নামের এক প্রবীণ শিক্ষক জানান, মুনছুর আলী যে বয়সে অবসর সময় কাটানোর কথা, সেখানে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন রাস্তা-ঘাটে। পায়ে চালিত এ রিকশায় যাত্রী নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও তবুও জীবিকার তাগিদে ছুটছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। পথচলা কঠিন হলেও পৃথিবীতে থেমে থাকার লড়াইয়ে থেমে নেই এই বৃদ্ধের যুদ্ধ।

বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। এখনো শপথ নেওয়া হয়নি। দায়িত্ব পেলে মুনছুর আলীকে সহযোগিতা করব।

সাদুল্লাপুর উপজেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে মুনছুর চাচার সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়। জীবিকার সন্ধানে বার্ধক্য বয়সেও তাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে। রিকশাটি ব্যাটারি চালিত হলে ভালো হতো। তাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা দরকার

(এসআইআর/এএস/ডিসেম্বর ০২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test