মাদারীপুরে হিন্দু জেল সুপারের উদ্যোগে মসজিদ নির্মাণ

মাদারীপুর প্রতিনিধি : প্রায় ছয় বছর আগে মাদারীপুরে নতুনভাবে কারাগার নির্মাণ হয়। কিন্তু এর আশে-পাশে কোন মসজিদ না থাকায় কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বন্দিদের দেখতে আসা স্বজন এবং স্থানীয়দের নামাজ পড়তে অসুবিধা হতো। সেই চিন্তা থেকেই মাদারীপুরের জেল সুপার তুহিন কান্তি খান নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন মানুষজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে নির্মাণ করেছেন দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ। কারাগারের প্রধান গেট থেকে একটু দুরে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে মাত্র চার মাসেই মাদারীপুর কারা জামে মসজিদ নির্মাণ করায় সবাই খুশি। মসজিদে এক সাথে দুই শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এই মসজিদ নির্মাণ করায় বন্দিদের স্বজন, কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের জেল সুপার তুহিন কান্তি খান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরে প্রথম কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪২ সালে। তখন কারাগারটি ছিল শহরের শকুনী লেকের পূর্ব পাড়ে পুলিশ লাইনের পাশে। কারাগারটি পুরাতন ও আকারে ছোট হওয়ায় বন্দিদের থাকতে কষ্ট হয়। সে জন্য ২০১৮ সালে মাদারীপুর শহরের পাশে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি এলাকায় সাড়ে ১৩ একর জায়গার উপর নতুন করে কারাগার নির্মাণ করা হয়। কারাগারটি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেও বন্দি স্থানান্তর করা হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। কারাগারটিতে বর্তমানে বন্দিদের ধারণ ক্ষমতা ৫০৭ জনের। যার মধ্যে পুরুষ বন্দি ৪৪৭ জন এবং মহিলা বন্দি ৬০ জন। কারাগারটি বড় পরিসরে নির্মাণ হলেও মুসল্লীদের নামাজ পড়ার জন্য কোন মসজিদ নির্মিত হয়নি। মসজিদ না থাকায় কারাগারের ব্যারাকের একটি রুমে নামাজ আদায় করতো কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যারাকের রুমটি ছোট ও ভিতরে হওয়ায় কারাগারে বন্দিদের সাথে দেখা করতে আসা স্বজনদের নামাজ পড়তে সমস্যা হতো। মুসল্লিদের নামাজ পড়ার সমস্যার কারণে বর্তমান জেল সুপার তুহিন কান্তি খান নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের জন্য কোন সরকারি অনুদান ছিলো না। তাই প্রথমে কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়ে এবং নিজেরা নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে থেকে শ্রমিকের কাজ করে মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন।
জেল সুপার নিজেও বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের সাথে থেকে মসজিদের ইটের গাথনির দেয়ালে পানি দেয়াসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ নিজ হাতে করেছেন। পরে জেল সুপার মসজিদ নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী, কারাগারে আটক থাকা বন্দিদের স্বজন, মাদারীপুরের বড় ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের লোকজনের কাছে আর্থিকভাবে সহযোগিতা চান। তখন তারা মসজিদ নির্মাণের জন্য কেউ নগদ টাকা, ইট, সিমেন্ট, বালু, ইটের সুরকি দিয়ে সহযোগিতা করেন। হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়েও জেল সুপার তুহিন কান্তি খানের রাত-দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মসজিদটি মাত্র চার মাসেই নির্মাণ সম্পন্ন হয়। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মসজিদটি দেখতে চমৎকার ও দৃষ্টি নন্দন হওয়ায় স্থানীয়রা সবাই খুশি। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের জেল সুপার হয়েও তিনি এভাবে নিজ উদ্যোগে এমন একটি মসজিদ নির্মাণ করায় মাদারীপুর জেলাজুড়ে প্রশংসা শোনা যায়।
কারাগারে বন্দিদের সাথে দেখা করতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, কারাগারে আটক থাকা স্বজনদের সাথে দেখা করতে এসে দেখলাম কারাগারের প্রবেশ মুখে খুব সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। জানতে পারলাম হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়েও জেল সুপার দৃষ্টি নন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা কয়েকজন স্থানীয় মানুষ জানান, কারাগারটি পাঁচ-ছয় বছর আগে নির্মাণ করা হলেও এখানে কোন মসজিদ ছিল না। তুহিন কান্তি খান জেল সুপার হয়ে যোগদানের পরেই কারাগারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসী ও বড় বড় ব্যবসায়িসহ নানা মানুষের সহযোগিতায় অল্প সময়ে খুবই চমৎকার একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তিনি হিন্দু ধর্মের হয়েও ইসলাম ধর্মের মানুষজনদের জন্য এভাবে চিন্তা করে মসজিদ নির্মাণ করে দেয়া সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
মাদারীপুরের জেলা কারাগার জামে মসজিদের ঈমাম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, আমাদের জেল সুপার স্যার অল্প সময়ের মধ্যেই একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ উপহার দিয়েছেন। তা প্রশংসা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। এখানে কোন মসজিদ ছিলো না, আশে পাশেও মসজিদ নেই। কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামাজ পড়তে অসুবিধা হতো। সেখানে একজন হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়েও জেল সুপার স্যার উদ্যোগ নিয়ে অল্প সময়ে মসজিদটি নির্মাণ করে দিয়েছেন। মসজিদটি এত সুন্দর করে রুপায়ন করেছেন, যা দেখেই মুগ্ধ হয়ে যাই।
কারাগারের স্টাফ আল আমিন বলেন, এখানে একটি মসজিদ খুব দরকার ছিলো। সেই মসজিদটি আমাদের স্যার (জেল সুপার) নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত রেখেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজান তালুকদার বলেন, এখানে কোন মসজিদ ছিলো না, সুপার স্যার এখানে মসজিদ নির্মাণ করায় আমরা খুব খুশি আর এখানে আমরা নামাজ পড়তে পারছি। তাই সুপার স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইমরান হোসেন বলেন, এখানে কোন মসজিদ ছিলো না। নামাজ পড়তে খুব অসুবিধা হতো। পরে সুপার স্যার নিজ উদ্যোগে সকলের সহযোগিতায় খুব সুন্দর একটি মসজিদ নিমার্ণ করে দিয়েছেন। স্যার না থাকলে হয়তো এমন সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা সম্ভব হতো না।
মাদারীপুর জেলা কারাগারের জেলার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের কারাগারের নতুন জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মসজিদটি নির্মাণে সহযোগিতা করায় কারা মহাপরিদর্শক, জেল সুপার, কারাগারের স্টাফ ও এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।
মাদারীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার তুহিন কান্তি খান বলেন, নতুন কারাগারটি নির্মাণ করা হলেও এখানে নামাজ আদায় করার জন্য কোন মসজিদ ছিল না। আমি এখানে যোগদানের পরে মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রথমে কারাগারের সকল স্টাফদের নিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেই কিভাবে এখানে দ্রæত একটি মসজিদ নির্মাণ করা যায়। পরবর্তীতে কারা মহাপরিদর্শক স্যারকে মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি জানালে স্যার আমাদের পরামর্শ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করেন। মসজিদ নির্মাণের জন্য কোন অর্থ ছিল না। আমরা শূণ্য থেকে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করি। মসজিদটি নির্মাণের জন্য আমাদের কারাগারের প্রতিটি স্টাফ, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলস শ্রম ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি অত্র এলাকার লোকজন, জেলার বড় বড় ব্যবসায়িরা অর্থ, ইট, সিমেন্টসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
(এএসএ/এএস/আগস্ট ০৪, ২০২৪)
পাঠকের মতামত:
- ‘বিএনপি নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিরই বিরোধিতা করছে’
- জুলাই সনদ কার্যকর ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন
- ঢাকা পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের ২১০ টি রাস্তার নাম পাল্টে দিয়ে ইসলামী নাম রাখে
- ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৭০, আহত তিন শতাধিক
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ
- যশোরে প্রথম বারের মত অনুষ্ঠিত হলো ‘রান ফর যশোর ১.০’ ম্যারাথন
- ঝিনাইদহে বিএনপি নেতা জয়ন্ত কুন্ডুর সমাবেশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ
- মোংলা বন্দরে করোনা সংক্রমণ রোধে বিশেষ সতর্কতা জারি
- বাবুর্চি থেকে কোটিপতি হওয়ার গল্প
- ফরিদপুরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জখম গৃহবধূ সুমী, অস্বীকার স্বামীর
- ‘সাতক্ষীরার গ্রামীন উন্নয়নে ৩৬৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে’
- বৃদ্ধাশ্রমে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিদেশী চিকিৎসক
- জীবন অন্বেষণ: বেড়ে ওঠা, শেখা এবং সততার এক যাত্রা
- দেবহাটায় ইটভাটা মালিককে ছুরিকাঘাত-লুটপাট, আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
- জমকালো আয়োজনে রূপপুর এনপিপি’র গ্রীণসিটিতে ‘রুশ ডে’ উদযাপন
- নড়াইলে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা
- গোপালগঞ্জে সুদের টাকা লেনদেনের বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষে পুলিশ সহ আহত ২৫
- ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু শনিবার, অংশ নিচ্ছে যে দলগুলো
- গোলাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়ায় বেদম মারপিট
- সুবর্ণচর গভর্ণমেন্ট এমপ্লয়িজ ফোরামের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
- সমু চৌধুরীর ভাইরাল ইস্যুতে ক্ষোভ ঝাড়লেন নায়ক সাইমন
- অস্বস্তি ছিলো ঈদযাত্রা তবে কর্মস্থলে ফিরতে স্বস্তি
- ফিরে দেখা, ঘুরে দেখা: ছিটমহলের এইদিন সেইদিন
- ফুলপুরে জামায়াতের সহযোগী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- জামালপুর হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
- রাজাকার সাঈদীর মরদেহ পাকিস্তানে পাঠানোর দাবি
- শৈলকূপায় জাল সার্টিফিকেটে একযুগ চাকরি করে যাচ্ছেন এক শিক্ষিকা!
- এই শীতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল
- প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটদের ভরাডুবি, ভাগ্য ঝুলছে সিনেটে
- সোনাগাজীতে গাছসহ গাঁজা চাষী গ্রেফতার
- স্যামসাং নিয়ে এলো আকর্ষণীয় ‘বিবাহ উৎসব’ অফার
- তরুণরা ভোটাধিকার হরণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে
- নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার পক্ষে প্রচারণায় সংসদ সদস্যের দুই ভাই, জনপ্রতিনিধিদের চাপ প্রয়োগ
- ঝালকাঠিতে সড়কে ঝরল ১৪ প্রাণ
- লক্ষ্মীপুর কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির মৃত্যু
- ফুলপুরে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত
- বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের জনগণ একই ছাদের নিচে বসবাস করতে পারে না
- গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮১ জন নিহত
- পঞ্চগড় মুক্তাঞ্চল: নৈসর্গিক প্রকৃতির রূপসী কন্যা
- জিয়া সেদিন বঙ্গবন্ধুকে কথা দিয়েছিলেন, 'স্যার, আমার বুক বিদ্ধ না করে বুলেট আপনার গায়ে লাগতে পারবে না'
- ‘মাতৃভাষায় যার ভক্তি নাই সে মানুষ নহে’
- শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১৫৫ জনের নামে বগুড়ায় মামলা
- অনিশ্চিত মেসি, চিলির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য একাদশ
- ঈশ্বরদীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন