E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৫:৩৫:৩৫
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে শত বর্ষের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামবাসী শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নতুন প্রজন্মকে মোবাইল ও মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে এ প্রতিযোগিতার আযোজন করে। বিগত ১শ’ বছর ধরে এখানে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বিকাল ৪ টায় কুমার নদের হোগলাকান্দি ব্রীজের পশ্চিম থেকে ‍সুরুপী পর্যন্ত ২ কিলোমিটার জুড়ে এ বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩টি রাউন্ডে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা।

ঠিকারী, কাশির বাদ্যের তালে জারি সারি গান গেয়ে এবং নেচে - হেঁইও হেঁইও রবে বৈঠার ছলাৎ- ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়। দু’পাড়ে দাড়িয়ে থাকা হাজার-হাজার মানুষের হৃদয়ে জাগে দোলা। মাল্লাদের সাথে সমবেত হন অগনিত সমর্থক ও দর্শক। তারা উৎসাহ দেন বাইচে। নদীর দু’পাড়ে দাড়িয়ে থাকা মানুষের করতালী ও হর্ষধ্বনিতে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও ফরিদপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ১২টি বাছারি নৌকা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

নৌকা বাইচে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মোবাইল বাছারি ১ম, কাশিয়ানী উপজেলার দোলাগ্রামের রেজাউলের বাছারি ২য় ও ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার তামারহাজী গ্রামের বাকু শেখের বাছারি ৩য় স্থান অধিকার করে।

প্রতিযোগিতা শেষে সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি কাশিয়ানী থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ খুরশিদ আলম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, সালথা, ভাঙ্গা উপজেলার ২০টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ কুমার নদের দু’পাড়ে দাড়িয়ে শরতের মনোরম বিকেলে শত বর্ষের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। উৎসব মুখর পরিবেশে দু’ জেলার মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয় এ নৌকা বাইচ। এ উপলক্ষ্যে কুমর নদ তীরে বসেছিলো গ্রামীণ মেলা। সেখানে শতাধিক স্টলে ব্যাপক কেনা বেচা হয়েছে।

আয়োজক কমিটির সদস্য কমিটির আহবায়ক কামাল খান বলেন,গোপালগঞ্জ জেলা বাওড়, বিল,খাল ও নদী বেষ্টিত জেলা। এ জেলায় বর্ষা মৌসুমে শত শত বছর ধরে নৌকা বাইচের আয়োজন হয়ে আসছে। কালের বির্বতনে আমাদের কৃষ্টি, কালচার ও নিজস্বতার বিনোদন মাধ্যম নৌকা বাইচ হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজম্ম বিনোদন বিমুখ হয়ে মোবাইল ও মাদকাসক্ত হয়ে পরছে। তাদের মেবাইল ও মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখতে আমরা ১শ’ বছর ধরে এই আযোজন করে আসছি। আগামীতে ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

হোগলাকান্দি গ্রামের গিয়াস উদ্দিন গালিব বলেন, এখানে বর্ণিল আয়োজনে মনোরম পরিবেশে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক রাউন্ডে নৌকায় নৌকায় তুমুল প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেছি। এ প্রতিযোগিতা দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছি। এটি শত বছর ধরে টিকে রয়েছে। এ নৌকাবাইচ উপভোগ করতে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ গভীর আগ্রহে কুমার নদের পাড়ে সমবেত হন। এখানে দু’ জেলার মানুষের মিলন মেলা বসে। বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসেন। আয়োজন হয় ভাল খাবারের।আগামীতে এখানে আরো জাকজমকপূর্ন নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।

নৌকা বাইচের আয়োজক কমিটির সদস্য আড়পাড়া গ্রামের নজির খান ও ইদ্রিস খান বলেন, নৌকা বাইচ আমাদের সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের পূর্বপুরুষরা ১শ’ বছর আগে এখানে নৌকা বাইচের প্রচলন করেন । নদী, খাল,বিল ও বাওড় শুকিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন বাইচের নৌকাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপরও ঐতিহ্য এবং নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা এ আয়োজন করে আসছি।

(এমএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test