E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ভাঙা-নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো, ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

২০২৫ জুন ৩০ ১৪:৫৯:৪৪
ভাঙা-নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো, ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : একটি নদী ও তার উপর বাঁশ দিয়ে তৈরি ভাঙা সাকো।  সেই সাকো দিয়েই পারাপার শত শত মানুষের। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত, গ্রামবাসীর বাজারে পণ্য আনা-নেওয়াসহ দৈনন্দিন কাজের জন্য এই নদী পার হয়ে যেতে হয়।  যদিও পাকা সেতুর দাবি বহুদিনের, কিন্তু আজও তা  বাস্তবে রুপ পায়নি।  সেতুর অভাব পূরণ করতে এলাকাবাসী নিজেরাই গ্রাম থেকে বাঁশ কেটে সাঁকো তৈরি করেছেন। এর নির্মাণে রয়েছে দু’পাড়ের শত শত মানুষের কঠোর পরিশ্রম।  সাকোটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চিত্রা নদীর উপর অবস্থিত।  যা এপারে একতারপুর ও ওপারে পারখিদ্দা গ্রামকে বিভক্ত করেছে।

এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ পারাপার হয়। একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নদীর ওপারে পারখিদ্দা দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পথ। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুল ও মাদরাসায় যেতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়,পারখিদ্দা দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সাঁকো দিয়ে নদী পার হচ্ছে। তারা নদী পার হয়ে ওপারে যাবার পর একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে নদী পার হচ্ছে। এভাবেই একজন এপাড় থেকে ওপারে গেলে আরেক জন ওপার থেকে আসা যাওয়া করছে। বাঁশের সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও শিক্ষার্থীসহ এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা ভাঙাচোরা সাঁকোটি। গ্রামের বয়স্ক নারী পুরুষ, শিক্ষার্থী ও শিশুরাও এই সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে ঝুঁকিতে থাকে।

জানা যায়,কালীগঞ্জ উপজেলার ৮নং মালিয়াট, ৯নং নিয়ামতপুর ও জহোরপুর ইউনিয়নের ২৫/৩০ গ্রাম এবং ৭নং রায়গ্রাম ইউনিয়নসহ ২২টি গ্রামের মানুষ চিত্রা নদী পারাপারে এই সাঁকো ব্যবহার করে। একতারপুর ও পারখিদ্দা গ্রামের মাঝামাঝি এই সাঁকোটির দক্ষিণে ৩ কিলোমিটার দুরত্বে পারখিদ্দা ও মঙ্গলপতিয়া গ্রামের মাঝে একটি সেতু রয়েছে এবং উত্তর দিকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে বনখিদ্দা ও বেথলী মল্লিকপুর গ্রামের মাঝে সেতু রয়েছে। একসময় এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার হলেও বর্তমান ৮ কিলোমিটার দূরত্বে দুটি সেতু হওয়ায়, একটু সময় বেশি লাগলেও উপজেলা শহরে যাতায়াত এবং কৃষিপণ্য বহনের জন্য সেতু দুটি ব্যবহার করে থাকে সবাই। তারপরও নদীর এপার ওপারে বড় বড় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থী ও ৩০ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা এই সাঁকো। তবুও যতদিন পর্যন্ত সেতু নির্মাণ না হয়, ততদিন এই বাঁশের সাঁকোই তাদের জীবনচক্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

একতারপুর গ্রামের রহিম আলী বলেন,‘গ্রামবাসী বারবার পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বাইরে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর সেগুলো আর বাস্তবায়িত হয় না।

তিনি বলেন, অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাঁকো পার হওয়া অনেক সময় অসহনীয় হয়ে ওঠে। বর্ষাকালে সাঁকো ডুবে যায়, তখন নদী পার হওয়ার জন্য কোনো উপায় থাকে না।’

শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন,‘আমাদের স্কুলটা নদীর ওই পাড়ে। যাতায়াতের খুবই অসুবিধা হয়। যখন বর্ষাকাল হয় তখন নদীটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এখানে থাকা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বেশ কয়েকবার ভেঙেও গেছে। এসময় আমাদের স্কুলে যাতায়াতের খুবই অসুবিধা হয়। অন্য পথ দিয়ে যেতে গেলে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। এতে অনেক সময় সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারি না। এখানে একটা সেতু হলে আমাদের আর কষ্ট হতো না।’

পারখিদ্দা দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী মোছা.আশরিন নাহার বলেন, ‘বাঁশের এই সাঁকো দিয়ে আমরা প্রতিদিন যাওয়া আসা করি। আমাদের জন্য এই সাঁকোটি বেশিই ঝুঁকি। ওইপাড় থেকে স্কুলে আসে এবং আমরা এই পাড় থেকে মাদরাসায় যাই। আমাদের সবসময় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। আমাদের দাবি এখানে একটা স্থায়ী সেতু করে দেওয়া হোক।

একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আশরাফ আলী,‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিত্রা নদী পার হয়। বর্ষাকালে যখন সাঁকোর বাঁশগুলো পিচ্ছিল হয়ে যায় তখন পার হওয়া আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। শিশু বা বয়স্করা সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। কিন্তু কোনো বিকল্প না থাকায় সবাই বাধ্য হয় এই পথেই চলাচল করতে। গ্রামের কৃষকরাও তাদের ফসল বাজারে নিয়ে যেতে এই সাঁকোর ওপর নির্ভর করে। ভারি বোঝা নিয়ে সাঁকো পার হওয়া তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। বছরে অন্তত দু’বার সাঁকোটি মেরামত করতে হয়। বর্ষাকালে নদীর পানি বেড়ে গেলে সাঁকো অনেক সময় ভেঙে যায়। তখন গ্রামের লোকজন মিলে আবার সেটি ঠিক করে।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন,‘আমাদের পক্ষ থেকে জনকল্যাণে যেটা করা প্রয়োজন আমরা সেটাই করবো। তবে এই মুহূর্তে আমাদের হাতে সেতু নির্মাণের কোনো বাজেট নেই। পরবর্তীতে বাজেট আসলে বা সরোজমিনে দেখে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।’

(এসই/এএস/জুন ৩০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test