E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় এবং ভূমিকম্পের পরে করণীয়

২০১৫ এপ্রিল ২৭ ২০:৪৮:৩৫
ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় এবং ভূমিকম্পের পরে করণীয়

নিউজ ডেস্ক : বড়সড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নেপাল। তবে কম্পনের অনুভূতি থেকে রক্ষা পেল না ঢাকাও। দু-মিনিটের দুলুনিতে রাজপথে পুরো শহর। মানুষের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ ভীষণ ভূমিকম্পপ্রবণ। যেকোন সময় বড় মাত্রার কোন ভূমিকম্প এখানে লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে সবকিছু। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার কোনভুমিকম্প হলে সাথে সাথেই প্রায় ৭২০০০ ভবন ধসে পড়বে এবং হতাহত হবে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ। এতো বড় মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলা করার জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে।

আসুন জেনে নেই ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় এবং ভূমিকম্পের পরে আমাদের করণীয়।

ভূমিকম্পের আগে করণীয়

১. বাড়ির ভেতরে এবং বাইরে নিরাপদ স্থানগুলো চিহ্নিত করা জরুরি, যাতে ভূমিকম্পের সময় ভাবতে না হয় কোথায় আশ্রয় নেবেন আপনি। বাড়িতে ছোটদের এই বিষয়টি ভালো করে বুঝিয়ে দিন।

২. ভারী মালপত্র উপরে রাখবেন না, শেলফের নিচের দিকে রাখুন। ঝাঁকুনিতে যাতে এগুলি গায়ের ওপর যাতে না পড়ে।

৩. লিক হওয়া গ্যাস লাইন, বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করে নিন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন।

৪. মাঝে মধ্যেই জরুরি প্রয়োজনে দৌড়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার মহড়া দিন যাতে কম্পন অনুভূত হলেই সবাই এক দৌড়ে বাইরে বের হতে পারেন।

৫. নিজের কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে এবং প্রতিবেশীদের এ বিষয়ে সচেতন করুন, যাতে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সাবধানে থাকতে পারেন।

৬. শুকনো খাবার ও জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু সরঞ্জাম হাতের কাছে রেখে দিন।

৭. অন্ধকারে দেখার জন্য টর্চ রাখুন হাতের কাছে।

৮. স্কুলে স্কুলে ভূমিকম্প সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের অবহিত করুন। বাড়িতেও আপনার সন্তানকে এ বিষয়ে শিক্ষা দিন।

ভূমিকম্পের সময় ঘরে থাকলে করণীয়

১. ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে বসে পড়ুন, শক্ত-মজবুত কোনও আসবাবের নিচে ঢুকে যেতে পারেন এবং সেটিকে হাত দিয়ে শক্ত করে রাখুন, যাতে সরে না যায়। মনে রাখবেন, আমাদের দেহের মধ্যে মাথা হল সবচেয়ে নমনীয় অঙ্গ, আসবাবের আশ্রয় না পেলে হাত দিয়ে মাথা রক্ষা করুন।

২. আসবাবপত্র না পেলে ঘরের ভেতরের দিকের দেওয়ালের নিচে বসে আশ্রয় নিতে পারেন। বাইরের দিকের দেওয়াল বিপজ্জনক।

৩. জানালার কাচ, আয়না, আলমারি, দেওয়ালে ঝুলানো বস্তু থেকে দূরে থাকুন। এগুলো ভেঙে মাথায় পড়তে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।

৪. বহুতলে থাকলে ঘরের ভেতরে থাকাই ভালো। কারণ নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর আগেই ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া নামতে নামতেও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

৫. ভূকম্পন থেমে গেলে বের হয়ে আসুন।

৬. নিচে নামতে চাইলে কোনও ভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামুন। নামার সময় মোবাইল ফোন আর ঘরের চাবিটা সম্ভব হলে হাতেই রাখুন।

৭. বিছানায় শুয়ে থাকলে বেশি দূরে না গিয়ে মজবুত বিছানা হলে তার নিচেই আশ্রয় নিন।

ঘরের বাইরে থাকলে করণীয়

১. খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন। বহুতলের নিচে কোনও ভাবেই দাঁড়াবেন না।

২. লাইটপোস্ট, বিল্ডিং, ভারী গাছ অথবা বৈদ্যুতিক তার ও পোলের নিচে কোনও অবস্থাতেই দাঁড়াবেন না।

৩. রাস্তায় ছোটাছুটি করবেন না। মাথার ওপর কাচের টুকরো, ল্যাম্পপোস্ট অথবা বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

চলমান গাড়িতে থাকলে করণীয়

১. তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে খোলা জায়গায় পার্ক করে গাড়ির ভেতরেই আশ্রয় নিন।

২. কখনই ব্রিজ, ফ্লাইওভারে থামবেন না।

৩. বহুতল কিংবা বিপজ্জনক জায়গা থেকে দূরে গাড়ি থামান।

৪. ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই অপেক্ষা করুন।

ভূমিকম্পের পরে করণীয়

১. ভূমিকম্প শেষ হলেও আগামী কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। প্রায়ই পরপর কয়েকবার কম্পন হয়। এই আফটার শকের কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। এবারের আফটার শক এক ঘণ্টার মধ্যেই দুইবার হয়ে যায়। কখনও এক মাসের মধ্যেও হতে পারে।

২. যথাসম্ভব শান্ত থাকুন। কম্পন থেমে গেলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর বের হন। ওপর থেকে ঝুলন্ত জিনিসপত্র কিছুক্ষণ পরেও পড়তে পারে।

৩. নিজে আহত কিনা পরীক্ষা করুন, অপরকে সাহায্য করুন। বাড়িঘরের ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করুন। নিরাপদ না হলে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যান।

৪. গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ পেলে জানালা খুলে বের হয়ে যান এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন।

৫. কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে মেইন সুইচ বা ফিউজ বন্ধ করে দিন। ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে সাবধান থাকুন। অগ্নিকাণ্ড হতে পারে।

ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে করণীয়

১. আগুন জ্বালাবেন না। বাড়িটিতে গ্যাসের লাইন লিক থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

২. ধুলাবালির মধ্যে পড়লে হাত অথবা রুমাল দিয়ে নাক মুখ ঢেকে নিন।

৩. ধীরে নড়াচড়া করুন এবং উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকুন।

৪. উদ্ধার কাজের সময় নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে পাইপ অথবা দেওয়ালে আস্তে আস্তে টোকা দিয়ে শব্দ করুন। চিৎকার না করাটাই ভালো, এতে প্রচুর পরিমাণে ধূলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যেতে পারে।

(ওএস/পিএস/এপ্রিল ২৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test