E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফুটেছে বাহারি ঝুমকো লতা

২০১৫ এপ্রিল ২৯ ১৮:১৯:২৫
ফুটেছে বাহারি ঝুমকো লতা

বরগুনা প্রতিনিধি : ‘হঠাৎ কিসের মন্ত্র এসে/ভুলিয়ে দিলে এক নিমেষে/বাদল বেলার কথা,/হারিয়ে পাওয়া আলোটিরে/নাচায় ডালে ফিরে ফিরে/ঝুমকো ফুলের লতা।’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্টিতে এভাবেই ঝুমকো লতার বর্ণনা করেছেন। এসেছে ফররুখ আহমদের ছড়ায়ও- ‘ঝুমকো লতা কানের দুল,/উঠল ফুটে বনের ফুল।/সবুজ পাতার ঘোমটা খুলে,/ঝুমকো লতা হাওয়ায় দোলে।’

দেখতে অনেকটাই কানের অলংকার ঝুমকোর মতো। সেই সুবাদে ফুলটির পরিচিতি ঝুমকো লতা বলে। আবার স্থানীয়ভাবে এর পরিচিতি রাধিকা নাচন। হালকা বেগুনি রঙের আভায় ফোটা ঝুমকো লতা সত্যি বাহারি এক ফুল। একসময় গ্রাম-গ্রামান্তরে বাগানের ঝোপঝাড়ে এই লতাজাতীয় ফুলটি বেশ চোখে পড়ত। এখন আর তেমনটা দেখা মেলে না।

সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ঝুমকো লতা ফুল ফোটে। গ্রীষ্মের শেষ ভাগে ফুটে বর্ষাকালজুড়ে এটি টিকে থাকে। এ জন্য বর্ষার ফুল হিসেবেই এর পরিচিতি। অসম্ভব দৃষ্টিনন্দন ফুলটি ফোটার মৌসুম সমাগত। তবে উপকূলীয় বরগুনার বামনা উপজেলার নিভৃত পল্লী আমতলী গ্রামের মনোতোষ হাওলাদারের বাড়ির এক ঝাড় লতা আগেভাগেই বর্ষার সাজে সাজতে বসেছে। বসতঘর লাগোয়া একটি আম গাছ আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠা নয়নাভিরাম ঝুমকো লতা গাছে ফুল ফুটেছে। পাতার গোড়া থেকে গজানো একক আকর্ষী দিয়ে অনেক দূর উঠে গেছে গাছটি। লতায় লতায় পুরো আম গাছটি ছেয়ে গেছে। ফোটার অপেক্ষা নিয়ে লতায় শোভা পাচ্ছে আরো বেশ কিছু কলি।

লতানো গাছটি ঘন সবুজ পাতায় ভরা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora incarnata। এটি একটি লতাজাতীয় উদ্ভিদ। প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে একটি ঝুমকো লতা। এই গাছের পাতা দেখতে হাতের তালুর মতো। পাতায় তিনটি খাঁজ আছে। প্রতিটি অংশই হাতের আঙ্গুল সদৃশ। পাতার অগ্রভাগ সুচালো। পাতার কক্ষ থেকে আকর্ষী বের হয়। ফুল ফোটে এককভাবে। ফোটা ফুল বাতাসে সুবাসিত গন্ধ ছড়ায়। হালকা বেগুনি রঙের পাপড়ি বাইরের দিকটা সজ্জিত থাকে। এই গাছের পাতা ছিঁড়লেও কিছুটা গন্ধ বের হয়।

ফুলটির মঞ্জুরিপত্র থেকে একধরনের আঠালো পদার্থ নিঃসৃত হয়। এর সুবাদে মঞ্জুরিপত্রের সাহায্যে লতাটি ক্ষতিকর পোকামাকড়কে ফাঁদে ফেলতে পারে। এই গাছের ঔষধি গুণ রয়েছে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া এই লতায় প্রচুর পরিমাণে স্যাপনিনস থাকায় এটি কোথাও কোথাও সাবানের বিকল্প ডিটারজেন্ট হিসেবে ব্যবহারের নজিরও আছে।

ঝুমকো লতা বা প্যাশন ফ্লাওয়ার মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা, মেক্সিকো, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রাণ-প্রকৃতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং হাওয়াইয়ের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও জন্মে ঝুমকো লতা। বাংলাদেশে এর বিস্তার লাভের সঠিক তথ্য জানা নেই।

ঝুমকো লতা ফুলটির রং সাদা বা ক্রিম অথবা উভয় রঙের মিশ্রণে হয়ে থাকে। তবে সাধারণত বেগুনি রঙের আভায় বর্ণিল হয় ফুলটি। ফুলের ব্যাসার্ধ পাঁচ থেকে ছয় সেন্টিমিটার। আর ফলের আকৃতি গোলাকার। বহু বিচিসমৃদ্ধ ফলটির ব্যাসার্ধ দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার। পাকার সময় ফলটি হলদে কমলা থেকে লাল রং ধারণ করে। শুকনো জায়গায় টিকে থাকতে পারলেও ভেজা স্যাঁতসেঁতে জায়গা মূলত ঝুমকো লতার জন্য উপযোগী।

(এমএইচ/এএস/এপ্রিল ২৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test