E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানী

২০১৫ নভেম্বর ১৬ ১৩:৪৪:১০
গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানী






 

জাকিয়া সুলতানা

আপনি যদি একটি কয়েন নিয়ে ৫১ বার টস করেন তবে ৫০ বারই হেড এবং ১বার টেইল পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২২লক্ষ কোটি বারে মাত্র ১ বার অথচ গত ৮০ বছরের ইতিহাসে ৫২ জনেরও বেশি সংখ্যক পুরুষ গণিতবিদের পর এই প্রথম কোন নারী গণিতবিদ গনিত দুনিয়ার নোবেল বলে খ্যাত ‘ফিল্ড মেডেল’ পুরষ্কার পেল।কিন্তুআজব ব্যাপার হলো এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে গণিতে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই নারী।তাহলে কি এবারের ফিল্ড মেডেল জয়ী মরিয়ম মির্জাখানী গণিতে নারীদের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসে পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হবে?

মরিয়ম মির্জাখানী ১৯৭৭ সালে ইরানের তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবে তার বয়সী আর দশটা শিশুর চাইতে একটু বেশিই কল্পনাপ্রবণ ছিলেন । আট বছর বয়সে শিশুরা যখন রূপকথার গল্প শোনা নিয়ে ব্যাস্ত তখন মির্জাখানী রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় নিজেকেই রূপকথার চরিত্র হিসেবে কল্পনা করতো। কখনো সে হয়ে উঠত কোন গড়ে উঠা শহরের মেয়র, বিশ্বপরিব্রাজক অথবা কোন ইচ্ছাপূরণকারী দেবী।

অথচ এই ছোট্ট বালিকার স্বপ্নের চরিত্রগুলো একসময় পরিবর্তীত হয়ে যায় হাইপারবোলিক সার্ফেস, মডুলাই স্পেস আর ডায়নামিক্যাল স্পেসের মতো চরিত্রে। মির্জাখানী বলেন, “যেকোন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা আশলে একটা উপন্যাস লিখে ফেলার মতো, যেখানে লেখকও জানেনা উপন্যাসের চরিত্র তাঁর কাহিনীকে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে, এবং সে চরিত্র কোথায় গিয়ে উন্মোচিত হবে তা হবে প্রথম অভিব্যাক্তির চাইতে সম্পুর্ণ ভিন্ন”।
ইরানীয় এ গণিতবিদ তাঁর গল্পের চরিত্রের রেখা ধরে এগিয়ে যান এবং কখনো একটি চরিত্রের স্বরূপ প্রকাশিত হতে বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। মির্জাখানীর হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট উপদেষ্টা কার্টিস ম্যাকমুলানের মতে, “ছিমছাম গড়নের এ নারীর কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যেকোন গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সুনাম রয়েছে। গণিতের ক্ষেত্রে তাঁর আকাঙ্ক্ষা দূর্দমনীয়”।
নম্র অথচ দৃঢ় কণ্ঠস্বর আর বাদামী নীল চোখের মির্জাখানীকে অটল আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। অথচ তাঁকে গণিতের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অবদানের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে মৃদু হেসে জবাব দেন, “আসলে সত্যি বলতে গেলে- এ ব্যাপারে আমার অবদান অতি সামান্য”।
গত ফেব্রুয়ারী মাসে যখন মির্জাখানীকে তাঁর ফিল্ড মেডেল পাওয়ার বিষয়টি ইমেইল করে জানানো হয় এবং পরে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে গণিতবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়, তিনি তখনো ভেবেছিলেন- যে অ্যাকাউন্ট থেকে মেইলটি পাঠানো হয়েছিল তা বোধহয় কোন দুষ্ট লোক হ্যাক করে তাঁর নামে পাঠিয়েছিল।

শৈশবের সে দিনগুলিতে তাঁর একটা মাত্র কাজই খুব ভালো লাগত আর তা হলো- যেখানেই যে বই পাওয়া যাক না কেন, তা এক নিমিষেই পড়ে ফেলা। এভাবেই তাঁর বিশ্বসাহিত্যের সাথে পরিচিতি ঘটে। টিভি সিরিয়ালে তখন হেলেন কেলার, মেরী কুরীদের মতো বিখ্যাত নারীদের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হতো। তা তার ছোট্ট মনকে খুব প্রভাবিত করতে পেরেছিল।ভিনসেন্ট ভ্যানগগের “Lust for Life” উপন্যাসটি তাঁর মধ্যে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হয়ে লেখিকা হওয়ার এক অসংজ্ঞায়ীত আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে দেয়।তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করে যে একদিন অনেক বড় লেখিকা হবেন।

এ পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে তাঁর বড়ভাই বেশ ভুমিকা রেখেছিল। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে স্কুলে যা যা শিখেছে তা নিয়ে আলোচনা করত। একদিন তাঁর বড়ভাই স্কুল থেকে ফিরে তাঁকে১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল নির্ণয়ের কৌশল শিখিয়ে দেয়। এবং সেই ধাঁধার সমাধান যেন মির্জাখানীর চোখের সামনে নতুন রহস্যের দুয়ার খুলে দেয় এবং সে এটাতে এতোটাই মজে যায় যে ধীরে ধীরে গণিতসমুদ্রে তলিয়ে যেতে থাকে।তাঁর রূপকথার চরিত্রেরা বদলে যায় আর তাঁদের স্থান দখল করে নেয় গণিত।

ফার্জানেগান বিদ্যালয় ও গণিত

মির্জাখানী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া যখন শেষ প্রায় তখন ইরাক-ইরান যুদ্ধেরও সমাধান হতে চলেছে। সেটাছিল ওই প্রজন্মের শিশু কিশোরের জন্য একটা স্বর্ণসময়। ইরানের জাতীয় উন্নয়ন সংস্থা দ্বারা পরিচালিত ব্যতিক্রমী মেধাবীদের জন্য ফার্জানেগান মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তীর সুযোগ পান মির্জাখানী। এবং স্কুলে ভর্তীর হওয়ার সাতদিনের মাথায় রয়া বেহেস্তীর সাথে আজীবনের বন্ধুত্ব হয়। সেসময়ে তাঁরা দু’জন বিদ্যালয়ের বাইরে তেহরানের ব্যস্ত বাণিজ্যিক রাস্তার ধারে গড়ে উঠা বইয়ের দোকান চষে বেড়াতেন। সময় কম থাকায় উল্টে-পাল্টে বই পছন্দ করার সুযোগ ছিলনা বলে তাঁরা খুব বেছে বেছে বই না কিনে হাতের কাছে যা পেত তাই কিনে নিয়ে আসতো। বইয়ের মুল্য খুব কম ছিল তখন।

মির্জাখানী গণিতে সেবছর খুব ভালো করতে পারেননি। এমনকি গণিত শিক্ষিকারও ধারণার বাইরে ছিল যে তিনি কতটা মেধাবী যা মির্জাখানীর আত্মবিশ্বাস অনেক কমিয়ে দিয়েছিল। আসলে সেই বয়সটাই এমন ছিল যে কারু প্রেরণা আমাদের অনেক দূরে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে একইভাবে কোন অবজ্ঞাও খুব প্রভাব ফেলে।
পরবর্তী বছরগুলোতে অবশ্য মির্জাখানী গণিতে সাঙ্ঘাতিক ভালো করে এবং স্কুলে মোটামুটি তারকা বনে যায়।
এরপর মির্জাখানী ফার্জানেগান উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে যান। যে জাতীয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়- মির্জাখানী ও বেহেস্তী সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চাইলো। মজার ব্যাপার হলো এই প্রতিযোগিতায় মাত্র তিন ঘণ্টায় বেশ কিছু গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হয়, অথচ সে সমস্যা সমাধানে মির্জাখানী ও বেহেস্তী প্রায় কয়েকদিনে ছ’টি সমস্যার মধ্যে তিনটির সমাধান করেন।
তাঁরা হতাশ না হয়ে বরং ছেলেদের স্কুলে ওঁরা যেভাবে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের বিশেষ ক্লাস করতো, নিজেদের স্কুলে সেইরকম ক্লাস আয়োজনের জন্য প্রিন্সিপ্যালের সাথে যোগাযোগ করেন। তাঁদের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন অসাধারণ দৃঢ় চরিত্রের এক মহিলা, তিনি বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথে নিলেন। এবং মেয়েদের মধ্যে থেকে যে এর আগে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করা হয়নি তা বুঝতে পেরে তাঁদের বিভিন্নভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। তিনি এব্যাপারে খুবই আশাবাদী ছিলেন যে মেয়েরা শুধু ভালোই করবে না বরং তাঁদের মধ্যে থেকে প্রথম হয়ে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। মির্জাখানীর পরবর্তী সফলতার ইতিহাসে তাঁর এই শিক্ষিকার আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গী খুব প্রভাব ফেলেছিল।
১৯৯৪ সালে ১৭ বছর বয়সে মির্জাখানী ও বেহেস্তী গণিত অলিম্পিয়াড টীম গঠন করে এবং মির্জাখানী সেবছর অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক লাভ করে। পরবর্তী বছরেও পারফেক্ট স্কোর করতে সক্ষম হয়।
এই প্রতিযোগিতায়অংশগ্রহণের মাধ্যমে মির্জাখানী নিজের সুপ্ত প্রতিভা সম্পর্কে অবগত হন এবং গণিতের প্রতি এক গভীর ভালোবাসায় নিমজ্জিত হন। তাঁর ভাষায়, “গণিতের একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে আর তা জানতে হলে তোমাকে কিছুটা শ্রম ও সময় ব্যয় করতে হবে”।
ফ্রান্সের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্তন জেরিখের তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “১৭ বছরের যে বালিকা গণিতের যে রহস্যে অভিভূত হয়েছিল আজ ৩৮ বছর বয়সেও তার চোখেমুখে সেই অভিব্যক্তিই খেলা করে”।

শরীফ ইউনিভার্সিটি ও হাভার্ড ইউনিভার্সিটি

মির্জাখানীর ডক্টরাল সুপারভাইজার ম্যাকমুলান বলেন, “আসলে গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক পাওয়া আর গাণিতিক গবেষনায় সফলতা লাভ করা এক নয়। এ ধরণের প্রতিযোগিতায় একটা সমস্যার বুদ্ধিমত্তার সাথে বিশ্লেষণ করলেই হয়তো বাহবা পাওয়া যায় তবে দীর্ঘমেয়াদী গাণিতিক গবেষনায় কেউ হয়তো কোন সমস্যার সমাধানে পৌঁছাতে নাও পারে। মির্জাখানীর গাণিতিক দূরদৃষ্টিতা রয়েছে যা অনেক অলিম্পিয়াড স্কলারের মধ্যেই নেই”।

শরীফ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক করার পর তিনি ডক্টরেট করতে হাভার্ডে যান । সেখানে গিয়েই তিনি ম্যাওমুলানের সেমিনারগুলোতে যাওয়া শুরু করেন। প্রথম প্রথম তিনি ম্যাওমুলানের লেকচারের কিছুই বুঝতেন না। ধীরে ধীরে তিনি হাইপারবোলিক জিওমেট্রীর সৌন্দর্যে আটকা পড়েন। তিনি ম্যাকমুলানের অফিসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন, এবং ম্যাকমুলানকে বিভিন্ন প্রশ্নবাণে জর্জড়িত করতেন এবং ম্যাকমুলানের ব্যাখ্যাগুলো ফার্সিতে তাঁর নোটবইয়রে পাতায় লিখে রাখতেন।
১৯৯৮ সালের ফিল্ড মেডেলজয়ী ম্যাকমুলান স্মৃতি হাতড়ে বলেন, “মির্জাখানীর ছিল অসম্ভব কল্পনাশক্তি, যা ঘটতে যাচ্ছে সেটার একটি কাল্পনিক ছবি সে তাঁর মনে আঁকতে পারতো এবং আমার অফিসে এসে সে সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করতো- এটা কি ঠিক?”।

মির্জাখানীর গাণিতিক চরিত্রেরা

আমরা জানি, ত্রিভূজের তিনকোনের সমষ্টি দুই সমকোণ বা ১৮০ ডিগ্রী। কিন্তু না আমরা আংশিক সত্য জানি, কারণ সমতলে অঙ্কিত যেকোন ত্রিভূজের তিনকোনের সমষ্টি দুই সমকোন হলেও কোন বৃত্তাকার তলে তা আঁকলে ১৮০ ডিগ্রী হবেনা, ছোট ত্রিভূজের ক্ষেত্রে তা ১৮০ এর কম এবং বড় ত্রিভূজের ক্ষেত্রে তা বেশি হতে পারে। এনিয়ে অবশ্য অনেক মতপার্থক্য রয়েছে তবে যেখানেই মতবিভেদ সেখানেই বিজ্ঞানের কাজ করার সুযোগ বেশি।

যদিপৃথিবীপৃষ্ঠেরযেকোনবিভিন্নবিন্দুযোগকরাহয়প্রতিটাবিন্দুরসংযোগঘোড়ারজীনেরমতোতলউৎপন্নকরে।এইতলগুলোবলাহয়ডোনাট।হাইপারবোলিকডোনাটবাস্তবেতৈরিকরাসম্ভবনয়বরংতারাবিমূর্তঅবস্থানকরে, যেখানেপ্রতিটাদূরত্বওকোণবিশেষধরণেরসমীকরণদ্বারাপরিমাপকরাহয়।
পরবর্তীতেঅনেকডোনাটযেকোনবিন্যাসেএকত্রেঅসীমসংখ্যকভাবেএকটাহাইপারবোলিককাঠামোগঠনকরতেপারে।গতদেড়শতাব্দীধরেএরকমঅনেককাঠামোআবিষ্কৃতহয়েছে।
মির্জাখানীযখনস্নাতককরছেনতখনোকিছুএরকমতলেরসরলতরসমীকরণঅসংজ্ঞায়িতছিল।
কোনবক্রতলেদুটিবিন্দুরক্ষুদ্রতমদুরত্বসরলরৈখিকনয়।হাইপারবোলিকসার্ফেসেঅঙ্কিতসরলরেখাকে‘জিওডেসিক/ ভূমিতিকরেখা’ বলাহয়।

হাইপারবোলিকসার্ফেসেকোনকোনভূমিতিকরেখাঅসীমদূরত্ববিশিষ্ট,কিন্তুলূপতৈরিরমাধ্যমেদুটিকাছাকাছিহয়।সহজেইকাছাকাছিহওয়ারপূর্বেদ’টিরূপকখনোইএকেঅপরকেছেদকরেনা।সরলজিওডেসিকগুলোকাঠামোটিকেউদ্ঘাটিতকরারজন্যমুখ্যভূমিকাপালনকরে।
তখনপর্যন্তগাণিতিকেরাএটাআবিষ্কারকরতেপারেননিযে,একটিহাইপারবোলিকতলেঠিককতটিসরলজিওডেসিকথাকতেপারে।অনেকগুলোজিওডেসিকেরমাঝেসরলএকটাখুঁজেপাওয়াঅলৌকিকঘটনা।যেকারণেএটাকেসঠিকভাবেখুঁজেবেরকরাঅবিশ্বাস্যরকমেরকঠিন।যদিকেউসামান্যওভুলকরতবেসেব্যর্থহবে।

মির্জাখানী২০০৪সালেসম্পাদিততাঁরডক্টরালথিসিসেসূত্রউদ্ভাবনেরমাধ্যমেএসবপ্রশ্নেরউত্তরদিয়েছেনযেএকটাজিওডেসিকেরদৈর্ঘ্যবৃদ্ধিরসাথেকিভাবেসরলজিওডেসিকেরসংখ্যাবৃদ্ধিপাবে।তিনিএরপাশাপাশিএকটাতলেকতগুলোসম্ভবহাইপারবোলিককাঠামোগঠনকরাযাবেএবংতাদেরআয়তননির্ণিতহবেএবিষয়ে ‘মডুলিস্পেস’এরধারণাওদেন।
তিনিঅনেকটুকরোকাগজমেঝেরউপরবিছিয়েবারবারএকইছবিএঁকেএঁকেঘণ্টারপরঘণ্টাপারকরেদিতেন।
মির্জাখানীরএইনির্বন্ধগণিতেরতিনটিপ্রথমসারিরজার্নাল- ‘অ্যানালসঅবম্যাথমেটিক্স’, ‘জার্নালঅবদিআমেরিকানম্যাথমেটিক্যালসোসাইটি’ এবং ‘ইনবেনশনম্যাথমেটিকা’য়প্রকাশিতহয়।
একটিবিশালকর্মযজ্ঞঃ

মির্জাখানীবলেনযেতিনিখুবইধীরগতিসম্পন্নএকটামানুষ।অন্যগণিতবিদেরাযেখানেবিদ্যুৎগতিতেকোনসমস্যারসমাধানেপৌছেযেতেপারেনসেখানেতিনিবছরেরপরবছরএকটিসমস্যানিয়েকাটিয়েদিতেপছন্দকরেন।তিনিবলেন, এমনওহয়েছেযেগতএকদশকযাবতআমিকোনসমস্যানিয়েভাবছিকিন্তুআজপর্যন্তউল্লেখযোগ্যঅগ্রগতিহয়নি।যখনঅন্যান্যগণিতবিদেরাএকটারপরএকটাসমস্যারসমাধানেহালছেড়েদেনসেখানেতিনিখুবসহজেবিচলিতহননা।এসবক্ষেত্রেতিনিবেশআত্মপ্রত্যয়ি।
মির্জাখানীর স্বামী,

বর্তমানেসানজোসেরআলমাডারিসার্চসেন্টারেরকম্পিউটারসায়েন্সেরবিজ্ঞানীজ্যাভন্ডার্কতাঁরসম্পর্কেবলেন, “এইধীরএবংদৃঢ়বৈশিষ্টমির্জাখানির জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে”। তিনি যখন হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থি তখন তাঁর ভবিষ্যত স্বামী ভন্ডার্ক ছিলেন ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির স্নাতক করছেন। তাঁরা একেকদিন দৌড়াতে যেতেন। দেখা যেত মির্জাখানি ধীরে ধীরে দৌড়াতে শুরু করতেন আর ভন্ডার্ক খুব দ্রুতগতিতে দৌড়িয়ে তাঁকে ফেলে অনেক সামনে এগিয়ে যেতেন। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তাঁর শক্তি শেষ করে থেমে যেতেন। অথচ হাল্কা-পাতলা মির্জাখানী আধাঘণ্টাপরেও একই গতিতে দৌড়াতেন। এ যেন সেই খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের মতো!

তাঁর ঘর এবং অফিস টুকরো কাগজে ছয়লাব হয়ে থাকে। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা হয়তো কোন সমস্যা নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকেন, বা একই ছবি বার বার আঁকতে থাকেন। ভন্ডার্ক প্রথমে ভেবে পেতেন না কি করে সে এসবের মধ্যে থেকে কোন সমাধান আসে! তবে পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, এসব আসলে একটা করে যুক্তির ধাপ যা পেরিয়ে আচমকা কোন বড় সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।

খাতার মধ্যে হিজিবিজি আঁকা কোন সমস্যা সমাধানে কার্যকর হতে পারে। চিন্তা করার সময় হয়তো সবকিছু বিস্তারিত লেখা সম্ভব হয়না তবে এঁকে এঁকে কোন কিছু ভাবতে গেলে সমস্যার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সহজ হয়। মির্জাখানীর তিন বছরের কন্যা আহিতা হয়তো বলেই ফেলে, “মা, তুমি কি আবার আঁকছ?”।আসলেই সে হয়তো তাঁর মা’কে আঁকিয়েই ভাবে।

মির্জাখানীর গবেষণা গণিতের অনেক ক্ষেত্রে যেমনঃdifferential geometry, complex analysis and dynamical systems এর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে।

মির্জাখানীর অন্যতম প্রিয় সহযোগী গবেষক এস্কিনের ভাষ্যে, “মির্জাখানীর সাথে কাজ করাটা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা, তিনি একজন খুবই আশাবাদী নারী যা কাজের ক্ষেত্রে তাঁর সহযোগীর মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। যে কাজে আপনি আশাহত হয়েছেন সেই কাজই তাঁর সাথে করতে গেলে নতুন সম্ভবনায় প্রকাশিত হবে”।

অনেকগুলো কাজ একসাথে করার পর মির্জাখানী ও এস্কিন একটা বহু পুরনো সমস্যা সমাধানের কাজে হাত দেন, আর তা হলো বিলিয়ার্ড টেবিলে বল যখন বাউন্স করে তা কিছু নির্দিষ্ট বহুভূজ উৎপন্ন করে। বিলিয়ার্ড টেবিলের পাশে যদি কোন আয়না স্থাপন করা হয় তবে আয়নার দুনিয়াতেও সরলরেখায় বাউন্স করবে। এরকম কিছুক্ষণ পর যদি বিলিয়ার্ড টেবিলে তাকানো হয় তখন দেখা যাবে আসল টেবিলেও একই ওরিয়েন্টেশন হয়েছে। সম্ভাব্য সকল বিলিয়ার্ড টেবিলে সকল ট্রান্সলেশন সার্ফেস কে মডুলাই স্পেস বলা হয়।এর উপর ভিত্তি করে মির্জাখানী, এস্কিন মিলে বিলিয়ার্ড বল ট্রেজেক্টরির সমীকরণ বের করেছেন তা গণিতের ক্ষেত্রে একটি বিশাল কাজ।

আর এই কাজ অর্থাৎ সেমেট্রি অব কার্ভড সার্ফেস বা বক্রতলের প্রতিসাম্য ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এই ভূমিকার কারণেই মির্জাখানীকে ফিল্ড মেডেলে ভূষিত করা হয়। গণিত ছাড়াও পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় এই গবেষণা বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

পুরস্কার পাওয়ার পর মির্জাখানী বলেন, “এই পুরস্কার আমার জন্য অনেক সম্মানের, আমি আরো খুশি হব যদি আমার পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে তরুণ নারী বিজ্ঞানী ও গাণিতিকেরা উৎসাহিত হয়।”
বিজ্ঞানের কিছু কিছু শাখায় নারীদের অবস্থান অনেকসময় এটা বাধ্য করে যে ওটা তাঁদের জন্য নয় বা তাঁরা এর যোগ্য নন। মেধা নিয়েও প্রশ্নবোধক ঝুলে যায় কখনো কখনো।

এব্যাপারে মির্জাখানী আরও বলেন, নিজে একজন নারী হিসেবে নিঃসন্দেহে এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। নারীরা গণিতে আজ পর্যন্ত এ সম্মান পায়নি বলে যারা সমালোচনা করতেন মির্জাখানীর এ প্রাপ্তি তাঁদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে।


(একে/এসসি/নবেম্বর১৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test