E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশপের গল্প

২০১৪ জুলাই ৩১ ১১:৩৮:৪৯
ঈশপের গল্প

কাকের গর্ব

এক কাক যার স্বাস্থ্যবান হওয়ায় নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব করত। সে নিজেকে তার প্রজাতির অন্য সবার থেকে শ্রেষ্ঠ ভাবা শুরু করল। সে সব থেকে শক্তিশালী। অহংকারে অন্ধ হয়ে সে ভাবলো সে এদের সাথে কেন থাকবে। সে তাই তার স্বপ্রজাতি ত্যাগ করে চলে গেল দাড়কাকদের কাছে। সেখানে গিয়ে সে অহংকার করে বলল আমি তোমাদের মত তাই তোমাদের সাথে থাকব। দাড়কাকরা নিজেদের মধ্য হাসাহাসি করে ঐ কাকটাকে তাড়িয়ে দিল। তখন বেচারা ফিরে এলো স্বপ্রজাতির কাছে কিন্তু তারাও তখন তাকে আর গ্রহন করল না।

উপদেশ: নিজের স্বকীয়তা ছেরে অন্য কোথাও গেলে একুল ওকুল সব হারাতে হয়।।

ব্যাঙদের রাজা

এক পুকুরে এক দল ব্যাঙ বাস করত, ব্যাঙদের কোন রাজা নেই বলে তাদের মনে বড় দু:খ । তাই তারা একদিন দলবদ্ধ হয়ে দেবতা জিউসের কাছে গিয়ে হাত জোড় করে বল্লো, প্রভু, আমাদের শাসন করার কেউ নেই, আমাদেরকে দয়া করে এক জন রাজা দিন । ব্যাঙরা বড় নিরীহ জীব দেখে জিউস বড় এক খানা কাঠ পুকুরে ফেলে দিয়ে বল্লো, "এই নাও তোমাদের রাজা" । কাঠখানা ছপাৎ করে জলে পড়ার শব্দে শুনে ব্যাঙেরা ভয়পেয়ে একেবারে জলের তলায় ডুব দিয়ে থাকলো ।

কিছুক্ষন পরে একজন পানির উপরে মাথা তুললো দেখলো কাঠটা কিছুই করছে না। দেখে তাদের ভয় কেটে গল, এরপর তারা আস্তে আস্তে কাঠের কাছে গেল । তবুও কাঠটা কিছুই করছে না, তাই দেখে ব্যঙরা তখন কাঠের উপর উঠে নাচানাচি শুরু করে দিল । কাঠ তবুও নিরব, নিশ্চল ।

ধ্যাত্তেরি - এটা আবার কি রাজা, চলো জাই জিউসের কাছে ।

এবার জিউস ব্যাঙদের আপত্তি শুনে রেগে গিয়ে, ব্যাঙদের শাসন করতে পাঠালে এক জলঢোড়া সাপকে । সাপটা প্রতি দিনই একটা করে ব্যাঙ ধরে খেতে লাগলো । আর ব্যাঙরা আফসোস করে বলতে লাগলো আমাদের নিজেদের দোষে আজ আমাদের এই অবস্থা ।

উপদেশ : অত্যাচারীর চাইতে অলস, নিরীহ অনেক ভাল ।

আহাম্মকির ফল

এক কাক এসে বসল গাছের ডালে, মুখে তার একটুকরো মাংস। এক শিয়াল নীচে থেকে তাই দেখে ভাবতে লাগল, কি করে ঐ মাংসটুকু সে নিজে খেতে পায়। অনেক ভেবেচিন্তে সে শেষে ঐ কাকের দিকে চেয়ে বলতে লাগল, ভাই, সত্যি কি সুন্দর পাখি তুমি, কি সুন্দর তোমার অঙ্গের গঠন, তোমার পাখিদের রাজা হবার কথা, তোমার অবশ্য কণ্ঠস্বরও যদি তোমার চেহারার মতো সুন্দর হতো, মধুর হতো। কিন্তু হায়! তুমি তো অন্য পাখিদের মতো গান গাইতে পার না!
শেয়ালের এই কথা শুনে কাক আর চুপ থাকতে পারল না, সে তখনই মহোল্লাসে কা-কা রবে ডাকতে শুরু করল, আর অমনি মাংসের টুকরো তার মুখ থেকে গেল পরে, আর শেয়াল অমনি তা মুখে করে নিয়ে দিল ছুট।

উপদেশঃ অনেক মূর্খই অপরের স্তোতবাক্যে ভুলে নিজের সম্পদ হারায়।

দুঃসময়ের বন্ধু

একদিন দুই বন্ধু বেরোলো বেড়াতে। যেতে যেতে পথে হঠাৎ ভয়ংকর এক ভালুকের সামনে পড়ল দুজন। দুই বন্ধুর মধ্যে একজন গাছে চড়তে জানত। বিপদ বুঝে তখনই পাশের একটা বড় গাছে চড়ে বসল সে। অন্য বন্ধুটি গাছে চড়তে জানত না, এটা জেনেও বন্ধুর কথা না ভেবে তাকে বিপদের মুখে ফেলে সে নিশ্চিন্তে আত্নরক্ষার ব্যবস্থা করল। অন্য বন্ধুটি বিপদ বুঝে গাছের তলায় মরার মতো পড়ে রইল। কারণ সে জানত ভালুক কখনো মরা মানুষকে আক্রমণ করে না।
ভালুকটি তার কাছে আসতেই সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলল। ভালুক তার নাখ-মুখ পরীক্ষা করে যখন বুঝল লোকটি মৃত, চলে গেল।
ভালুক চলে যেতেই অন্য বন্ধুটি গাছ থেকে নেমে এসে বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করল, 'বন্ধু, ভালুক তোমার কানে কানে কী বলে গেল?'
বন্ধুর কথা শুনে সে হেসে উত্তর দিল, 'ভালুক আমার কানে কানে এই উপদেশ দিল, যে বন্ধু বন্ধুর বিপদে তার পাশে থাকে না, ভবিষ্যতে যেন এমন বন্ধুর সঙ্গে আর পথ না চলি।'

উপদেশঃ বিপদেই সত্যিকার বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায়।

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test