E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশপের চারটি গল্প

২০১৫ জানুয়ারি ২৩ ১৮:০৪:১৫
ঈশপের চারটি গল্প

নেকড়ে আর ভেড়ার গল্প
এক নেকড়ের একদিন খুব শরীর খারাপ করেছে, নড়তে-চড়তে পারছে না। বসে থাকতে থাকতে একসময় দেখে এক ভেড়া যাচ্ছে সেখান দিয়ে। নেকড়েটা তাকে ডেকে কাছের ঝর্ণা থেকে জল এনে দেওয়ার অনুরোধ জানালো। জল এনে দিলেই হবে, ভেড়াটাকে বলল সে, মাংসের যোগাড়টা আমি নিজেই করে নিতে পারব। হ্যাঁ, তার আর সন্দেহ কি, ভেড়া শুনে বলে, আমি তোমায় এক আঁজলা জল এনে দিলেই হবে। তার পরে এই আমাকে দিয়েই মাংস জোগাড় করার কাজটাও তোমার এমনিই হয়ে যাবে।


প্রাচীন বচন : ধোঁকাবাজী কথা সহজেই ধরা পড়ে যায়।

এক মোরগ আর একটা খুব দামী মণি
এক মোরগ খাবার খুঁজছিল। নিজে খেতে হবে, বাচ্চাদেরও খাওয়াতে হবে। এখানে ওখানে খোঁজাখুঁজি করতে করতে হঠাৎ তার নজরে আসে বাহারী এক মণি - অত্যন্ত দামী। মণিটা দেখে মোরগ বলল, মণি রে, আমার বদলে তোর মালিক যদি তোকে এখন পেত, আদর করে তুলে নিত তোকে, সাজিয়ে রাখত তোকে কত মর্যাদা দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে তোর কোন দাম-ই নেই। দুনিয়ার সমস্ত মণি এনে দিলেও আমি বরঞ্চ চাইব একটা শস্যের দানা।


প্রাচীন বচন : একটা অতি দামী জিনিষ ও তার কাছে অর্থহীন যে লোক সেটাকে কোন কাজে লাগাচ্ছে না।

দুই কলসীর গল্প
নদীতে ভাসতে ভাসতে চলেছে দুই কলসী। এক কলসী মাটির, এক কলসী পিতলের। স্রোতের টানে ভেসে যেতে যেতে মাটির কলসী পিতলের কলসীকে বলে, প্রার্থনা করি রে ভাই, দূরে দূরে থাক, আমার দিকে আসিস না তুই। আলতো করেও যদি একবার ছুঁয়ে ফেলিস আমায়, টুকরো টুকরো হয়ে যাব আমি; আর আমার কথা যদি বলিস, তোর ধারে কাছে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই আমার।


প্রাচীন বচন : ঠিক ঠিক বন্ধুত্ব হয় শুধু সমানে সমানে।


এক ডাঁশ আর এক সিংহ
এক ডাঁশ এক সিংহের কাছে এসে খুব কষে তড়পালো শোন রে সিংহ, আমি তোকে একটুও ভয় পাই না, আর তুই আমার থেকে কিছুই শক্তিশালী নোস। তোর জোরটাই বা কিসে? আঁচড়াতে পারিস নোখ দিয়ে, কামড়াতে পারিস দাঁত দিয়ে - কি এল গেল তাতে? আবার ও বলছি, শুনে রাখ, সব দিক ভেবে দেখলে আমার জোর তোর থেকে অনেক বেশী। কোন সন্দেহ থাকলে, আয়, লড়ে যা, দেখি কে জেতে। এই বলে, সেই ডাঁশ ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করে, ঝাঁপিয়ে পড়ল সিংহের উপরে আর একেবারে তার নাকের ডগায় দিল হুল ফুটিয়ে। সিংহ ডাঁশটাকে থাবার থাবায় মেরে ফেলতে গিয়ে নিজের-ই নখ-এ নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করে ভীষণ রকম কাহিল হয়ে পড়ল। ডাঁশ এইভাবে সিংহের সাথে যুদ্ধ জিতে ফেলে গোঁ গোঁ করে বিজয়-সঙ্গীত গাইতে গাইতে উড়ে চলে গেল। কিন্তু বেশিদূর যাওয়া হল না তার, সোজা গিয়ে জড়িয়ে গেল কাছাকাছি এক মাকড়সার জালে। খানিকক্ষণের পরে, চলে গেল মাকড়সার পেটে। মরার সময় ডাঁশটা খুব করে নিজের ভাগ্যকে শাপশাপান্ত করে বলে গেল, কি দুঃখের কথা, আমি, সিংহের মত একটা মহা শক্তিশালী জন্তুকে যে অনায়াসে হারিয়ে দিয়ে এল, একটা তুচ্ছ মাকড়সাটার কাছে শেষ হয়ে গেলাম।


প্রাচীন বচন : সবচেয়ে কম যাকে ভয় করা যায়, সেই দেখা যায় সবার চেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠল।

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test