E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মফস্বলে অপসাংবাদিকতার দৌড় ঝাপে উৎকন্ঠায় সচেতন মহল, জিম্মি সাধারণ মানুষ

২০২৪ জানুয়ারি ২১ ১৬:০০:০০
মফস্বলে অপসাংবাদিকতার দৌড় ঝাপে উৎকন্ঠায় সচেতন মহল, জিম্মি সাধারণ মানুষ

মোঃ শাজনুস শরীফ, বরগুনা : নামের আগে বা পিছনে লাইভ নিউজ ২৪ অথবা খবর ২৪ লিখে খোলা হচ্ছে একটির পর একটি ফেসবুক পেজ‌। আপলোড দেওয়া হচ্ছে একের পর এক ভিডিও, একটু ঘেটে দেখলে দেখা যাবে যার মূল বিষয় হচ্ছে পরকিয়া, মামার বাড়ি মামি, ধান খেতে কাক, স্যারের বাসায় বউ। মূল লক্ষ্য ভাইরাল হতে হবে। পেইজের এডমিন নিজেকে পরিচয় দিচ্ছে সাংবাদিক। বলছেন ওটা ওটা নিউজ তার। দেখান সাধারণ মানুষদের বিভিন্ন ভয়ভীতি। একটু পান থেকে চুন খসলেই হাজির এসব সাংবাদিকরা। করেন ভিডিও বা দিচ্ছেন লাইভ।‌পরবর্তীতে এসব ভিডিও দেখিয়ে করছেন জন সাধারণকে জিম্মি, হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। রেহাই পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তি বর্গরা।

মফস্বলে এরা যেন হার মানাচ্ছে সিনেমার গল্পকেও। চায়ের দোকান দার থেকে শুরু করে পত্রিকার হকার রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন পোর্টাল বা ফেসবুক, ইউটিউব চ্যানেলের মালিক কিংবা জেলা, উপজেলা আর বিশেষ প্রতিনিধি। এরকম বিভিন্ন নামে বেনামে এবং বিভিন্ন মনগড়া পোর্টালের পরিচয় দিয়ে নিজেকে সাংবাদিক দাবি করছে এমন সংখ্যায় হিসেব করলে সারা কয়েক লক্ষাধিক। আরেকটু ঘেঁটে দেখলে দেখা যায় এদের অনেকেই পেরয়নি উচ্চ মাধ্যমিক বা মাধ্যমিকের গণ্ডিটুকুও। তবে এরা সবাই নিজেকে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম কর্মী ।

এদের নিয়ে সাধারণ মানুষ বলেছেন, সবার হাতেই তো দেখি মাইক্রোফোন কে আসল কে নকল বোঝা মুশকিল। এরা দেখি কোন ঘটনা ঘটলে সবার আগে উপস্থিত। পারিবারিক কোন ঘটনা ঘটেলেও পরিবারের সকল সদস্যরা জানার আগে কিছু সংখ্যক ব্যাক্তি হাজির হয় সাংবাদিক পরিচয়ে। এরা কিভাবে বা কাদের মধ্যমে খবর পায় বুঝতে পারি না। তারা এসে তাদের ফোনে বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক কথা ভিডিও ধারন করেন। পরবর্তীতে এইসব ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে তারা টাকা দাবি করে। বলে টাকা না দিলে এই ভিডিও ছেড়ে দিবে, করবে নিউজ। মানসম্মানের ভয় তো সকলেরই আছে তাই তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গুনতে হয় তাঁদের নির্ধারিত অর্থ। এই অপসাংবাদিকতার ফলে তেমন জিম্মি হচ্ছে সাধারণ মানুষ তেমনি উৎকণ্ঠায় সচেতন মহল আর মফস্বলে যারা করছেন মূলধারায় সাংবাদিকতা।

মফস্বল সাংবাদিকরা এইসব অপসাংবাদিকদের নিয়ে বলছেন, সত্যিই আমরা যারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় কাজ করছি তারা আজকে একপ্রকারে কোনঠাসা হয়ে আছি তাদের কারনে। সাধারণ ঘটনাকে গড়ে তুলছে তিল থেকে তাল। বিভিন্ন ধরনের অনিবন্ধিত পোর্টাল ও ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলের মালিক বা তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কোন ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই না করেই তাদের মতো করে করছে ভাইরাল। আবার শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নিজের মধ্যেই সাজাচ্ছে নাটক কেউ আবার এই নাটকে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পান থেকে চুন খসলেই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ধারা সাধারন মানুষদের জিম্মি করে বিভিন্ন ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। একটু যদি লক্ষ করি তবে দেখবেন তাদের এইসব ভিডিওর মধ্যে বেশির ভাগই নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা, কার বাড়িতে কোন মেয়ে আসছে এইসব আবার এসব ঘটনার মূল তথ্য থেকে নিজেদের মতো করেও করছে ভাইরাল। আবার মাঝে মধ্যে আমাদের ভিতরের অনেকের মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে ও অর্থ গ্রহন করে‌। তাদের থেকে ক্ষেতে কাজ করা কৃষক থেকে শুরু করে সরকারি বা ধনাট্য ব্যাক্তি বর্গরাও রেহাই পাচ্ছে না। আরেকটি বিষয় সারা বছর আবার এইসব কিছু সাংবাদিকদের দেখা না মিললেও নির্বাচন কালীন সময়ে তারা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বর্তমানে মফস্বলে এদের দমন না করতে পারলে সাংবাদিকতা করা মুস্কিল হয়ে যাচ্ছে।

সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা বলছেন, যারা সাংবাদিকতাকে বিভিন্ন ভাবে কলঙ্কিত করছে তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই যদি রুখে দাঁড়াতে হবে। একজন সাংবাদিকের কাজ হলো সাধারণ মানুষের কথা দেশ ও জাতির কাছে তুলে ধরা। তবে যারা এটা না করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন তাদের রুখতে হবে। দেশ ও জাতির স্বার্থে। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(এসএস/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test