E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমীপে [পর্ব : চার]

২০১৬ মে ৩১ ২১:০৭:১৪
আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমীপে [পর্ব : চার]

পরম শ্রদ্ধাভাজন আপা,
গত তিন দিনের চিঠিতে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামীলীগের প্রকৃত অনুসারী নেতাদের বঞ্চনার কথা লিখেছি , লিখেছি দল থেকে তাঁদের বিতাড়িত হওয়ার কথাও। আজ চিঠির চতুর্থ পর্বে থাকছে, বর্তমানে ফরিদপুর আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণ যে সব হাইব্রিড নেতাদের হাতে, তাদের সম্পর্কে।

ফরিদপুর আওয়ামীলীগের হাইব্রিড নেতাদের নাম বললেই যে নামটি সবার আগে চলে আসবে তিনি হলেন সাজ্জাদ হোসেন বরকত ওরফে চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম। ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক দুর্ধর্ষ যুদ্ধাপরাধী জাহিদ হোসেন খোকনের ভাগ্নে ও এক সময়ের বিএনপি ক্যাডার বরকত এখন ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, একই সঙ্গে শহর যুবলীগেরও সাধারণ সম্পাদক। ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমতির সভাপতির চেয়ারটিও তার দখলে। ফরিদপুরে তিনি টেণ্ডার বাণিজ্যেরও নিয়ন্ত্রক। অনেকেই তাকে রসিকতা করে মিঃ সিক্সটিন পারসেন্ট বা মিঃ টুয়েন্টি টু পারসেন্ট বলেই সম্বোধন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এক প্রভাবশালীকে দাওয়াত করে এক বিশাল ভূরিভোজের আয়োজন করে নিজের 'মণ্ডল' পদবী ফেলে 'চৌধুরী' পদবী ধারণ করে হয়ে যান 'চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম'।

ইমতিয়াজ হোসেন রুবেল হলেন সাজ্জাদ হোসেন বরকত ওরফে চৌধুরী বরকত ইবনে সালামের আপন ভাই। তিনি এখনো আওয়ামীলীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের কোনো পদ নেননি। তবে আওয়ামীলীগের ক্ষমতা বা প্রভাববলয় ব্যবহার করে ফরিদপুরের টেণ্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে রুবেল তার ভাই বরকতকে পুরোমাত্রায় সহযোগিতা করেন। অবশ্য রুবেল দলের কোনো পদে না থাকলেও তিনি দারুণ দাপটের সাথে আওয়ামীলীগের প্রভাব ব্যবহার করে দখলে নিয়েছেন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক পদ দুটি।

দাপটের বিএনপি নেতা কাইয়ুম মিয়া আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদটি নিজের কব্জায় রেখেছেন। বাড়তি হিসেবে পেয়েছেন ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের সহসভাপতির পদটি।

বিএনপি ঘরানার প্রভাবশালী ঠিকাদার খোন্দকার শাহীন আহমেদ ওরফে পান শাহীন ছিলেন বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের খুবই ঘনিষ্ঠজন। তখন পান শাহীনকে ফরিদপুর বিএনপির নিয়ন্ত্রক বলা হতো। সেই খোন্দকার শাহীন আহমেদ ওরফে পান শাহীন এখন আরেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন ; ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুরে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সভাপতির সম্মানে একটি তোরণ নির্মাণ করেছিলেন দলীয় কর্মীরা। সেইতোরণ ভেঙেছিলেন স্থানীয় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজাদ। সেই গোলাম এখন ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের দাপুটে সদস্য।

ফরিদপুর শহরের এক আওয়ামীলীগ নেতার হত্যা প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বিএনপি ক্যাডার এসএম ইকবাল হোসেন ওরফে নিকো ইকবালের বিরুদ্ধে। সেই নিকো ইকবাল এখন ফরিদপুর শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক।

ফরিদপুর শহরের শোভারামপুরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী চক্র মাসুদ বাহিনী বিএনপির ক্যাডার বাহিনী হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সেই সন্ত্রাসী চক্রের প্রধান মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ। গত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শোভারামপুরের সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে লাঠি-বাঁশি অভিযান চালিয়ে এলাকা ছাড়া করেছিলেন ওই সন্ত্রাসী মাসুদকে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক প্রচারণা সভায় যোগদিতে গিয়েছিলেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী। ওই সময় তিনি মাসুদের বাবার হাতে হাত রেখে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছিলেন। এই দৃশ্য দেখে নির্বাচনী সভায় উপস্থিত লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং ওই সভাস্থল ত্যাগ করেন। পরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাতজোড় করে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং নির্বাচনী বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান। সেই মাসুদ এখন ফরিদপুর শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির তাঁতি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন আজমল হোসেন খান ওরফে ছোট আজম। সেই ছোট আজম এখন ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি।

ফরিদপুর শহর বিএনপির সদস্য ছিলেন আকবর হোসেন। সেই আকবর এখন প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ পেয়ে ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক।

ফ্রিডম পার্টি, জাপা ও বিএনপির রাজনীতিতে খুবই সক্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ হালিম ওরফে বিসমিল্লাহ হালিম। সেই বিসমিল্লাহ হালিম এখন ফরিদপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড তাঁতি লীগের সভাপতি।

ফরিদপুর শহরের ১ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ছিলেন ফরিদুর রহমান টিটু। সময় পাল্টে যাওয়ায় আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করতে তিনি বদল করেছেন ফ্লোর। সেই টিটু এখন ফরিদপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক।

একসময় ফরিদপুর শহর যুবদলের সদস্য ছিলেন বিপ্লব মিয়া ওরফে বিপ্লা। সেই বিপ্লা মিয়া এখন ফরিদপুর শহর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক।

প্রিয় আপা, আপনি শুনে বিস্মিত হবেন, ফরিদপুরে বিএনপি ঘরানার যেসব নেতা আপনার দল তথা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগ বা তার সহযোগী সংগঠনে যোগ দিয়েছেন, তারা কেউই তাদের পূর্বের দল থেকে পদত্যাগ করেননি বা সম্পর্কচ্ছেদ করেননি। এ ব্যাপারে আমি কথা বলেছিলাম ফরিদপুর জেলা বিএনপির এক নেতার সঙ্গে। তিনি বেশ রসিয়েই বললেন, ওদের জন্য আমরা দরজা বন্ধ করছি না; ঘরের ছেলে তো একদিন ঘরে ফিরবেই !

আপনি ভালো থাকবেন আপা। আপনি ভালো থাকলেই তো আমি আওয়ামীলীগ বা সরকারের নানা অসঙ্গতি সাহসের সাথে তুলে ধরতে পারবো। আজ এই পর্যন্তই চিঠি শেষ করছি। কাল চিঠিটি পুরোপুরি শেষ করবার চেষ্টা করবো।

ইতি
আপনার স্নেহধন্য
প্রবীর
৩১ মে, ২০১৬

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test