E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমীপে [শেষ পর্ব]

২০১৬ জুন ০১ ২২:৫৯:৪২
আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমীপে [শেষ পর্ব]

পরম শ্রদ্ধাভাজন আপা,
চিঠির চারটি পর্ব শেষে ফরিদপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যে প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি তাতে আরও দশ পর্ব চিঠি লিখলেও সবটা শেষ করা যাবে না। আমি আজ সিদ্ধান্ত নিয়েই লিখতে বসেছি, ফরিদপুর আওয়ামীলীগের হালচাল নিয়ে লেখা আজকের পর্বটিই হবে আপনার কাছে আমার লেখা চিঠির শেষ পর্ব। আমি গভীরভাবেই বিশ্বাস করি, আজকের এই লেখার পর আমার আপার এক পলক দৃষ্টিতেই ফরিদপুর আওয়ামীলীগ ফিরে যাবে, যাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারায়।

আপা, আপনি আমার চেয়ে বহুগুণে বেশী জানেন, অন্যায়-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করা যতোটা না যন্ত্রণার, তার চেয়ে বহুগুণ যন্ত্রণার হলো অন্যায়-জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে না পারার যন্ত্রণা। ফরিদপুরের আওয়ামী ঘরানার মানুষ তথা ফরিদপুরের মানুষ এখন ওই দুর্বিষহ যন্ত্রণা পর্ব পার করছেন। কার এতো বুকের পাটা যে, ন্যায্য প্রতিবাদ করে চাপাতির কোপে হাসপাতালে যাবেন! কিংবা ৫৭ ধারায় পুলিশী নির্যাতন ও কারা নির্যাতন সইবেন!

আওয়ামীলীগের মার্কা এঁটে কি হচ্ছে না ফরিদপুরে! দৃষ্টিনন্দন সরকারি পুকুর ভরাট করে পকেট ভারী করতে বিশাল মার্কেট নির্মাণ, সামাজিকভাবে ব্যবহারের পুকুর ভরাট করে জমি লুট, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গরীব কৃষকের জমি কব্জা করা, টোটাল নির্মাণ কাজের শতকরা ১৬ থেকে ২২ ভাগ টাকা অগ্রীম নিয়ে সরকারি টেণ্ডার কাজ কাউকে পাইয়ে দেওয়া, মাসিক ভিত্তিতে মোটা টাকা নিয়ে ব্যাটারি চালিত অটো চলতে দেওয়া, ফরিদপুর শহরের তিতুমির মার্কেটে নতুন ভবন নির্মাণের নামে সাধারণ দোকানিদের গলা কেটে রমরমা বানিজ্য, ভালো স্কুলে ভর্তির নামে টাকা কামানো ...... আরো কতো কী! পরিবহন থেকে অন্যায় চাঁদাবাজি, পুলিশ-নেতা ঐক্যে আটক আর মুক্তি বাণিজ্য... এই সব তো মামুলি ব্যাপার!

প্রকৃত ত্যাগী আওয়ামীলীগারদের সরিয়ে হাইব্রিড নেতাদের দলে ঢোকানোর পরই নানা হাইব্রিড উৎপাতে লা জবাব ফরিদপুর। আর কার প্রশ্রয়ে এই হাইব্রিড উৎপাত, যা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামীলীগকে কালিমা লিপ্ত করছে, সেটা আপনারও জানা,আমাদেরও জানা। আপনি জানেন বলেই তো চার কোটি টাকার ব্যানার-ফেস্টুন প্রচারণার পরও ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ইচ্ছেমত কাউকে আপনি দেননি; ওই পদটি দিয়েছেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে পোড় খাওয়া ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেনকে। ওই সিদ্ধান্তের কারণে ফরিদপুরের আওয়ামী পরিবার আপনার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমাকে ক্ষমা করবেন আপা, আমি চিঠিতে ফরিদপুর নিয়ন্ত্রকের নামটি লিখতে চাইছি না।

প্রিয় আপা, ফরিদপুর আওয়ামীলীগের স্বঘোষিত যিনি নিয়ন্ত্রক, তাকে তো ফরিপুরের আওয়ামী পরিবার আপনার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সানন্দেই বরণ করে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ধীরে ধীরে ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন হাসিবুল হাসান লাবলু ও বিপুল ঘোষ। দীর্ঘদিন এই দুই নেতাকে ঘিরেই ফরিদপুরে আওয়ামী রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। এই দুই নেতার নেতৃত্বেই আওয়ামী পরিবার আজকের নিয়ন্ত্রককে তৃনমূলে পরিচয় করিয়েছেন। আমার চিঠিতে আমি যাদের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতা হিসেবে চিত্রিত করেছি তারা সবাই ওই নিয়ন্ত্রককে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে দিনের পর দিন পরিশ্রম করেছেন। শুধু কি এই নেতারাই! দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, এফবিবিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুরের কৃতি সন্তান একে আজাদ তার ব্যবসা বাণিজ্য ফেলে এসে তাকে ফরিদপুরের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে দিনের পর দিন অক্লান্ত শ্রম-মেধা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলবার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রী পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ প্রথমে মন্ত্রীদের যে খসড়া তালিকা করেছিল, তাতে আজকের ফরিদপুর নিয়ন্ত্রকের নাম ছিল না। এই তথ্যটি ওই নিয়ন্ত্রকই একে আজাদ ও আমাকে জানিয়েছিলেন ফোনে। সেই সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন মন্ত্রী না হতে পারার কষ্টের কথাও। আমি তখন একে আজাদের মালিকানাধীন দৈনিক সমকালে কাজ করি। আমি তার কষ্টের বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম একে আজাদের সাথে। তিনি আমাকে কিছু নির্দেশনা দিলেন। তারপর ফরিদপুরের সমকাল প্রতিনিধির সাথে কথা বলে তৈরি করলাম একটি রিপোর্ট। পরদিন দৈনিক সমকালে ওই রিপোর্টটি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পেলো। ওই রিপোর্টে ছিল ফরিদপুরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আকুতি, তারা তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবেই দেখতে চায়। খুব মজার বিষয় হলো, ওই দিন সন্ধায় মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের যে নাম প্রকাশ করেছিল আওয়ামীলীগ, তাতে ফরিদপুরের ওই জনপ্রতিনিধির নাম ছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের সকলের, আওয়ামী পরিবারের এতো বিশিষ্ট জন আজকের নিয়ন্ত্রককে জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রী বানাতে আন্তরিক শ্রম দিলেন, তারা সবাই কিনা এতোটাই ক্ষতিকর হয়ে গেলেন যে, তাদের ছায়া মাড়াতেও ইচ্ছে হয় না এখন ! তাদের ঝেটিয়ে বিদায় করে এখন দল ভারী করতে মুজিব আদর্শ বিরোধীদের দলে টানতে হয়, দলে টানতে হয় ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক রাজাকারের আত্মীয়-স্বজনদের! ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের গত সম্মেলনে ঢাকা থেকে যেসকল কেন্দ্রীয় নেতা এসেছিলেন, তারা খুব ভালো করেই হালহকিকত প্রত্যক্ষ করে গেছেন।

আপা, অথচ এমনটি তো হতেই পারতো, আজকের ওই নিয়ন্ত্রক যদি সরল উদারতায় বলতে পারতেন, আমি কেন আওয়ামীলীগে গ্রুপিং করতে যাবে! তোমরা সবাই এক কাতারে না এলে আমি ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করবোই না। তাহলে ফরিদপুরের আওয়ামীলীগ নেতাদের সেই সাহসই হতো না তাকে বাদ দিয়ে ফরিদপুরের আওয়ামীলীগকে সাজানোর। তখন সবাই বাধ্য হতেন সানন্দে তার নেতৃত্বকে মেনে নিতে। উনি হতে পারতেন ফরিদপুর আওয়ামীলীগের ঐক্যের প্রতীক। কারণ আপনার সম্মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা কখনোই কুণ্ঠিত হন না। এই সহজ সুযোগটিকে উনি কাজে না লাগিয়ে একের পর এক জল ঘোলা করেছেন, করছেন; আর বিতর্কিত করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী ধারার রাজনীতি। আর এই পরিস্থিতি যেহেতু তিনিই সৃষ্টি করেছেন, তাকেই এই পরিস্থিতি উত্তরণে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি ভুল স্বীকারের মাধ্যমে হাইব্রিড উৎপাত সরিয়ে ফরিদপুরের আওয়ামী পরিবারের সবাইকে আবার আপন করে নিতে পারেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাহচর্য যিনি পেয়েছেন তাকে সব কষ্ট ভুলে আপন করে নেওয়ার উদার মন ফরিদপুরের আওয়ামী পরিবারের সকল সদস্যের রয়েছে। উনি যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করতে পারেন, তাহলে এই সরল সমীকরণ মেলানো পানির মতো সহজ। অবশ্য রক্তে আওয়ামীলীগ না থাকলে আওয়ামীলীগার হওয়া বড় কঠিন!

প্রিয় আপা, ফরিদপুর আওয়ামীলীগের হাইব্রিড উৎপাতের পুরোটা এই পাঁচ পর্বের চিঠিতে তুলে ধরা সম্ভব নয়। আমি গভীরভাবেই বিশ্বাস করি, আপনি শুধু আমার নয়, সারাদেশের মানুষের ভরসাকেন্দ্র। ফরিদপুর আওয়ামীলীগের হালচাল পুরোটাই আপনার নখদর্পণে। আপনি একটু তাকালেই ফরিদপুরের মানুষ দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে ; সেখানকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা আপনার নেতৃত্বে একাত্তরের ঐক্যের ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরো গভীরভাবে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন।

আজ আর নয়। চিঠি শেষ করছি। ভালো থাকবেন আপা ; বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার জন্য আপনাকে যে ভালো থাকতেই হবে।

ইতি
আপনার স্নেহধন্য
প্রবীর
০১ জুন,২০১৬

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test