E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লুঙ্গি পরে অনলাইনে পরীক্ষা, হাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার! 

২০২১ সেপ্টেম্বর ৩০ ১৭:১৫:১৩
লুঙ্গি পরে অনলাইনে পরীক্ষা, হাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার! 

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : লুঙ্গি পরে অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কারণে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ফুড প্রসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে বহিষ্কারের এই ঘটনা ঘটে। অবশ্য অনুষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,লুঙ্গি পরার জন্য নয়, পরীক্ষার হলে (ভার্চুয়াল) ‘নিয়ম অনুসরণ না করা’ এবং অসদুপায় অবলম্বন করা’র কারণেই শিক্ষার্থীরা বহিষ্কার হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জেনারেল ক্যামিস্ট্রি কোর্সের পরীক্ষা ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া ওই অনলাইন পরীক্ষার কয়েক মিনিটের মধ্যে ইম্প্রুভ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থীকে প্রথম বহিষ্কার করা হয়।

শিক্ষার্থী জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাকে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ঠিক করতে বলা হয়। তখন ক্যামেরা উপর-নিচ করার সময় আমার লুঙ্গি স্যারের দৃষ্টিগোচর হয়। তখন স্যার লুঙ্গি নিয়ে কথা তোলেন। এ ছাড়াও আমাকে স্যার কয়েকবার ডাকলে আমি না শোনায় স্যার আমাকে পরীক্ষার হল (জুম মিটিং) থেকে রিমুভ করে দেন এবং বহিষ্কার করেন।তার মিনিট দশেক পর বহিষ্কার করা হয় ২০ তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী কে ।

তিনি জানান, ‘আমি যেখানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম তার পেছনে জানালা থাকায় প্রচুর আলো আসছিল। ক্যামেরায় আমার ফেস ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিলো না। তখন স্যার আমাকে জানালায় পর্দা টেনে দিতে বললে আমি উঠে যাই। জানালা বন্ধ করার সময় স্যার আমার লুঙ্গি দেখতে পান। তারপর ড্রেসকোডের কথা তুলে স্যার আমাকে জুম থেকে বের করে দেন। আমি পরে স্যারকে কল দিলে স্যার জানান, আমি বহিষ্কার।'

লুঙ্গি পরার দায়ে বহিষ্কৃত আরেক শিক্ষার্থী ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা চলাকালে ক্যামেরার বাইরে তাকিয়েছিলেন। যে কারণে তাকে তার রুমের চারপাশ দেখাতে বলা হয়। চারপাশ দেখানোর সময় তার পরনের লুঙ্গিও দৃষ্টিগোচর হয় এবং তাকেও জুম মিটিং থেকে বের করে দেওয়া হয়।

পরে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন সরকার স্যারকে কল করলে তিনি বলেন- আমাকে কেন কল করেছো? এই বিষয়টার সম্পূর্ণ দেখভাল করার দ্বায়িত্ব পরীক্ষার সুপারভাইজারের। পরে সুপারভাইজারকে কল করলে তিনি রিসিভ করেন।

এই তিন শিক্ষার্থীর এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় তাদের আরও কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে। তারাও বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।

পরীক্ষার সুপারভাইজার ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শিহাবুল আউয়াল বলেন, 'তারা আমাদের সহযোগিতা করছিল না এবং আমরা যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছিলাম তারা সেটা সেভাবে অনুসরণ করেনি। বরং আমাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল। এরপরও আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা অনুসরণ না করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছি।’

‘লুঙ্গি পরার জন্য তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা’- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লুঙ্গি পরার জন্য বহিষ্কার করা হলেতো আরও অনেককেই বহিষ্কার করতে পারতাম। লুঙ্গি পরার জন্য তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে- এটা ঠিক নয়। তবে আমরা পরীক্ষা শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের শালীন এবং মার্জিত পোশাক পরতে বলি। লুঙ্গির পরিবর্তে আমরা প্যান্ট অথবা ট্রাউজার পরার অনুরোধ করি শিক্ষার্থীদের। তবে লুঙ্গি পরার জন্য ওই তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে- এটা সঠিক নয়'। তবে যেসব শিক্ষার্থীকে এক বিষয়ে বহিষ্কার হয়েছেন, তারা পরীক্ষা দিতে চাইলে ডিন বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করতে পারেন বলেও জানান অধ্যাপক মো. শিহাবুল আউয়াল।

প্রসঙ্গতঃ করোনা মহামারির ফলে সৃষ্ট সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে চলতি বছরের ৪ আগস্ট থেকে অনলাইন পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করে হাবিপ্রবি।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test