E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাবে সাউ পেরিলা

২০২২ জুন ১৪ ১৪:৫৭:১৪
ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাবে সাউ পেরিলা

শেকৃবি প্রতিনিধি : সয়াবিনসহ অন্য ভোজ্যতেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে সাউ পেরিলা। বর্ষা মৌসুমে (খরিপ-২) বাংলাদেশে চাষযোগ্য একমাত্র অভিযোজিত তৈলজাতীয় ফসল এটি। তাই এর বাণিজ্যিক উৎপাদনের ফলে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব বলে আশা করছেন গবেষকরা।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেনের তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সাল থেকে এর ধারাবাহিক গবেষণা শুরু হয়। দেশে এর চাষাবাদের উপযোগিতা নিরূপণের পর ২০২০ সালে ‘সাউ পেরিলা-১’ নামে জাতটি নিবন্ধিত হয়। এটি গোল্ডেন পেরিলা বা গোল্ডেন পূর্ণা নামেও পরিচিত।

ড. তারিক হোসেন জানান, পেরিলায় রয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এখানে প্রাপ্ত চর্বির ৯১ শতাংশ অসম্পৃক্ত যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মস্তিষ্ক ও ত্বকের জন্যও উপকারী।

গবেষকরা জানান, সয়াবিন, সূর্যমুখী এবং ভুট্টার তেলে প্রাপ্ত মানবদেহে মেদ বাড়াতে সহায়ক ওমেগা-৬ এর পরিমাণ পেরিলা তেলের চেয়ে অনেক বেশি। ওমেগা-৬ এর পরিমাণ সয়াবিনে ৪৬ শতাংশ, সূর্যমুখীতে ৫৫ শতাংশ এবং ভুট্টার তেলে ৪৯ শতাংশ। কিন্তু পেরিলার তেলে ওমেগা-৬ মাত্র ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে সরিষার তেলে এই ওমেগা-৬ এর পরিমাণ কম থাকলেও এতে রয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ ইরিউসিক অ্যাসিড। এই ইরিউসিক অ্যাসিডের মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণে মানবদেহের নানাবিধ ক্ষতি হয়।

চাষাবাদ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. তারিক বলেন, পেরিলা চাষ জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের শেষ নাগাদ হয়ে থাকে। বীজতলায় প্রায় একমাস ও মূল মাঠে ৬০ থেকে ৬৫ দিন অবস্থানের পর ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব। ফলে পরবর্তী আবাদি মৌসুমে (রবি) ফসল চাষ করতে কোনো সমস্যা হয় না। পানি জমে না এমন যে কোনো জায়গায় এ ফসল চাষ করা যায়।

তিনি বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৫ টন পেরিলা উৎপাদিত হয়। পেরিলার মোট বীজ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ তেল উৎপাদন সম্ভব এবং সরিষা তেলের মতোই দেশীয় পদ্ধতিতে ঘানিতে বা কারখানার মেশিনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। এই তেল সংগ্রহের পর যে খৈল পাওয়া যায় তা যথেষ্ট প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও উপাদেয়।

পেরিলা তেল গ্রহণে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে অন্যদিকে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এর চাষ বাড়ানো গেলে তেল উৎপাদন বাড়িয়ে সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক তারিক।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা পেরিলা তেল দেশে লিটারপ্রতি দুই হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে বসবাসরত বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের মাঝে এ তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বিদেশে এটির পাতাও সবজি হিসেবে বহুল পরিচিত।

পেরিলার বাণিজ্যিক উৎপাদন করা গেলে যেমন দেশে বাজার সম্প্রসারণ করা যাবে তেমনি বিদেশেও এই তেলবীজ রপ্তানির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া কৃষক বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতের আইলে, বাড়ির আঙিনায় কিংবা যে কোনো উঁচু জায়গায় এটি চাষ করে তার পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় তেল সহজেই সংগ্রহ করতে পারেন। সেইসঙ্গে বাজারেও বিক্রি করতে পারেন।

তবে মধ্যবিত্তের নাগালে আনতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে জানান ড. তারিক। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই স্বাস্থ্যনিরাপদ তেল বাণিজ্যিক উৎপাদন করে দেশে সরবরাহ ও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে পারে বলে অভিমত দেন তিনি।

জানা গেছে, তেল উৎপাদন ছাড়াও সবজি হিসেবে গোল্ডেন পেরিলার ব্যবহার রয়েছে। বাইরের অনেক দেশে সবজি হিসেবে রয়েছে পেরিলা পাতার আলাদা চাহিদা। তাছাড়া সুগন্ধিযুক্ত হওয়ায় রান্নায় আলাদা স্বাদ আনতেও এটি ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন ফাস্ট ফুডেও রয়েছে এর ব্যবহার।

(ওএস/এসপি/জুন ১৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test