E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আঠারোতে সাহসী নির্ভীক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

২০২৩ অক্টোবর ১৮ ১৫:৫৮:২৪
আঠারোতে সাহসী নির্ভীক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি : পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বীকৃতি পায় দেশের অন্যতম প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠটি। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সাফল্যের ১৭ বছর পূর্ণ করে ১৮ বছরে পদার্পণ করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গৌরব ও সাফল্যের ১৭ বছরে ক্যাম্পাসের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে সাড়ে সাত একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও কেরানীগঞ্জ জেলখানার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ৭.৫ একর কেনা জমি রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য রয়েছে ২০০ একর জমি। যার ১৮৮.৬০ অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বাকি ১১.৪০ একর জমির অধিগ্রহণ চলমান রয়েছে। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি অনুষদে ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬৮০ জন শিক্ষক রয়েছে। যার মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন ১৫৬ জন। তন্মধ্যে গ্রেড ১ এর ৩৬ জন, গ্রেড ২ এর ৪৬ জন ও গ্রেড ৩ এ ৭৪ জন। এছাড়াও সহযোগী অধ্যাপক ১৭৭ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯০ জন ও প্রভাষক ৬৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৮ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়াও এম ফিল এ ২৬৫ জন ও পিএইচডি তে ১৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ যাবতকালে জবিতে ৪ জন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি বিভাগে প্রফেশনাল প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, আরও বেশ কয়েকটি বিভাগে চালুর প্রস্তুতি রয়েছে। এখানে ৭৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। যার মাধ্যমে কেরানীগঞ্জে প্রায় ২০০ একর জায়গার উপর নির্মিত হচ্ছে আধুনিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও ছাত্রীদের জন্য ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নামে ১৬ তলাবিশিষ্ট হলে ১২০০ ছাত্রীর আসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও গবেষণা কার্যক্রমে পারস্পরিক সহযোগিতা লাভের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও গবেষণা শিল্প পরিষদ, পরমাণু শক্তি কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূল্যায়নে দেশের ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাংকিং এ রসায়ন বিষয়ে গবেষণা সূচকে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ১ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষার্থীকে মেধা ও অবৈতনিক দুই ক্যাটাগরিতে ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকার বৃত্তি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে নতুন শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষ সংকট কাটানো ছাড়াও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি ল্যাব’ চালু, বিভিন্ন বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেমিস্টার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় বাড়ি পাঠানোর উদ্যোগ, পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার জন্য ডিনস এওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে কাউন্সিলিং সেন্টার চালু সহ বছরব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলা নববর্ষ ছাড়াও শরৎ উৎসব, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব সহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, নিয়মিত বিভিন্ন নাটক ও সিনেমোর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুপুরে ঢাকার ভেতর চক্রাকারে শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও করোনার টিকার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ইউনিট থেকে মোট ২৫০ জন শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও গবেষকদের সুবিধার্থে বছরে দুই বার এমফিল, পিএইচডি ভর্তি করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরির পরিকল্পনা চলছে। এছাড়াও ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’-এর নীতিমালা অনুমোদন ও বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ট্রান্সক্রিপট ও গ্রেড শিট ভেরিফিকেশনের উদ্যোগ, ই-নথি চালু, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সর্বশেষ ষোড়শ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১১ শিক্ষার্থী মনোনীত হয়েছেন। প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম আজাদ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থী। স্নাতকের সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ মনোনীত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় অনুষদের ছয় শিক্ষার্থী।

এটিএন বাংলা ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি কর্তৃক আয়োজিত ডিবেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ তৃতীয় আসরে দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইসাবা মাসনুন তাহিয়া। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘ফাস্টেস্ট টাইম টু সেটআপ অ্যান্ড টপেল ফাইভ ইরেজার’ টাইটেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঁচটি রাবার দাঁড় করিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অংকন। ইউটিউব থেকে শিখে একাই অ্যানিমেশন ছবি বানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিসান ইসলাম অনন্ত। এছাড়াও ২০১৯ এসএ গেমস এ বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদক জয়ী মারজান আকতার প্রিয়া এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থী।

কলেজ থেকে পাওয়া ২টি মাইক্রোবাস এবং ৪টি মিনিবাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ পুলের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ৫৬টি যানবাহন বিদ্যমান রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকতর পরিবহন সুবিধা দেয়ার জন্য বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা বাস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যান্টিনটি সংস্কার করে আধুনিক ক্যাফেটিরিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবা সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১০টি শাখার মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এটি এখন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক ডিজিটাল গ্রন্থাগার রূপে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। প্রায় ৬০টি ল্যাপটপের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ই-বুকস ও অনলাইন জার্নাল সেবা চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর ১১ জানুয়ারি ২০২০-এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে প্রায় ১৮ হাজার গ্র্যাজুয়েট ও অন্য ডিগ্রিধারী অংশ নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্বল্প পরিসরের হলেও নানান ঐতিহ্যের কারণে এর সুনাম বিশ্বব্যাপী। প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক এগিয়ে রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনেক এগিয়ে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, গবেষণার সুনাম ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে। বিশ্ববিদ্যালটিকে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে কাজ করছি। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষাণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত অনেক সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে দিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, সবাইকে নিজের বিবেকবোধ দিয়ে দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

(এস/এসপি/অক্টোবর ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test