E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা

২০২৪ জুন ০৪ ১৮:০৬:০১
উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : আপগ্রেডেশন ও এ-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের দাবিতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন। আজ মঙ্গলবার উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা বন্ধ রয়েছে। দুপুর সোয়া ১২ থেকে ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম যথারীতি চালু ছিল।

এর আগে গত রবিবার শিক্ষক সমিতি সদস্যরা উপাচার্য, সহ-উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ অবস্থা নিরসনে ৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাদের নিয়ে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চলমান সমস্যা নিয়ে কাজ করবে বলে আশ্বাস দেয় বলে জানান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় ৭-৮ জন শিক্ষক দাঁড়িয়ে আছেন। উপাচার্যের এ কিউ এম মাহবুবের দপ্তরের দরজায় তালা ঝুলছে। সহ-উপাচার্য সৈয়দ সামসুল আলমের কক্ষেও তালা।

কিছু সময় পর বেলা পৌনে ১ টায় শিক্ষক সমিতির ৭/৮ জন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের (নিবন্ধক) কার্যালয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন। ১৫ মিনিট পর ওই কক্ষ থেকে বের হয়।

এসময় কথা হয় শিক্ষক সমিতির সদস্যদের সাথে তারা বলেন, গতকাল দীর্ঘ সময় উপাচার্যের সাথে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলো আজ ১১ টার মধ্যে আমাদের বিষয় নিয়ে কাজ করবেন। তাই সাকল ৯ টায় আমরা আন্দোলনে বসিনি এখন রেজিস্ট্রারের সাথে কথা হলো এখনো বললো তারা কাজ করবেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত অগ্রগতি না দেখলে আগমীকাল বুধবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামীকাল পর্যন্ত তালা বন্ধ থাকবে।

এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতির সদস্যরা আমার কার্যালয়ে আসছিলো কথা হয়েছে। আমরা তাদের বিষয়ে নিয়ে কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, চলমান যে সমস্যা নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যে দাবি করছেন সে বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ড হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। আপগ্রেডেশনের জন্য যারা আবেদন করেছে আমাদের কাজ হচ্ছে রেজুলেশন করে রিজেন্ট বোর্ড সদস্যদের কাছে আবদেন গুলো পাঠানো।
শিক্ষক সমিতির সদস্য ওই অগ্রগতি টুকু জানতে চেয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে রেজুলেশনে অর্ন্তভুক্তি করেছি। উপাচার্য স্যার ঢাকা থেকে ফিরলে এগুলো পাঠানো হবে।

ডিউডেট সম্পর্কে তিনি বলেন, ডিউডেটের বিধান বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আছেন।করোনা কালীন সময়ে দুই বছর গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়মিত উপাচার্য ছিলো না। তখন চলতি দায়ীত্ব পালন করেছিলেন। চলতি দায়িত্বে থেকে কোন উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত কোন সভা আহবান করতে পারেনি। ওই সময়ে যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদন্নোতি পাওয়া কথা ছিলো তারা পায়নি, এ কারণে ডিউডেটের দাবি করছেন।

অন্যদিকে করোনা কালীন সময়ে যারা পদন্নোতি বা আপগ্রেডেশন প্রাপ্ত হয়েছেন করোনাকালীন সময়ের ওই দুই বছর রিজেন্ট বোর্ড গণনা করবেনা। এদিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই দুই বছর সময় গনণা করে তাদের আপগ্রেডেশন চাচ্ছে। এখানে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন একজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পেতে হলে তাকে সহকারী অধ্যাপক পদে একাধরে চার বছের চাকরি করতে হবে কারোনাকালীন সময় বাদ দিয়ে।

যারা আপগ্রেডেশন বা ডিউডেটের জন্য আবেদন করেছন তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই, পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ৩৯ তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় পাঁচ সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ড.সৈয়দ সামসুল আলম ও বিজ্ঞান অনুসদের ডীন ড. মো. শাহাজান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ইউজিসি প্রফেসর ড. শরীফ এনামুল কবির, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার ও মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস।

কমিটির সদস্যরা যাচাই-বাছাই করে রিজেন্ট বোর্ড রিপোর্ট প্রদান করলে পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত নিবেন রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরা।

বিকাল ৪ টায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেলা ৪টা পর্যন্ত আমাদের অগ্রগতি জানায়নি। আমাদের সিদ্ধান্ত সকাল ৯ টা থেকে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। আর রাতে আমাদের দাবির বিষয়ে কেন অগ্রগতি জানায় তাহলে অবস্থান কর্মসূচিতে বসবো না

প্রসঙ্গত, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) বেশ কিছু শিক্ষক (একজন অধ্যাপক, ৭০ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং দুই শতাধিক সহকারী অধ্যাপক) আপগ্রেডেশন পেয়েছেন। আপগ্রেডেশন পর তাঁরা যে পদ পাবেন, বর্তমানে সে পদের বিপরীতে অন্য শিক্ষক আছেন। অর্থাৎ পদটি আপাতত শূন্য নয়। এ অবস্থায় নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বা নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে একই আপগ্রেডেশন পুনরায় করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ কারণে বর্তমানে প্রায় ৩০ জন শিক্ষকের আপগ্রেডেশন বন্ধ রয়েছে। শূন্য পদের জটিলতা, ডিউডেট ও আপগ্রেডেশন করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের একাংশ।

(টিবি/এসপি/জুন ০৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test