E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হলেন বাকৃবির অধ্যাপক ড. শাহনাজ

২০১৬ মে ১৩ ১৬:১৫:০৯
ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হলেন বাকৃবির অধ্যাপক ড. শাহনাজ

বাকৃবি প্রতিনিধি : চলে গেলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অধ্যাপক ড.শাহনাজ পারভীন। বৃহস্পতিবার ১২মে বেলা ৩.২০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪৭ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ ঘটে তাঁর।

তিনি পহেলা জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার উত্তর বিলাশপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হোসাইন শিকদার, মাতার নাম হামিদা বেগম।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি বাকৃবি সম্প্রসারণ কেন্দ্রের (বাউএক) পরিচালক পদে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি সেন্টার ফর ফুড সিকিউরিটিতেও (আইসিএফ) অধ্যাপক হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবিবাহিত এই মহিয়সী নারী জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪সালে এসএসসি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে ১৯৯০ সালে স্নাতক ও পরে কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

তিনি ১৯৯৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০১০ সালে একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জার্মানীর গ্রীসেন্ট ইউনিভাসিটি থেকে জেন্ডার ইন এগ্রিকালচার বিষয়ে ২০০৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

শিক্ষা জীবনে তিনি অদম্য মেধার অধিকারী ছিলেন। মেয়েরাও পুরুষের সমান পারদর্শী এটা প্রমাণ করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন মৃত্যুর শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত। ছাত্র অবস্থায় পেয়েছেন বিভিন্ন বৃত্তি ও পুরস্কার। গান বাজনা ভালবাসতেন ও নিজেও গাইতেন। তার ভালোলাগার মধ্যে অন্যতম ছিল বই পড়া । ফুল খুব পছন্দ করতেন ।

শৈশব থেকেই তিনি নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী ছিলেন। সবর্দা তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের অগ্রগতির কথা ভাবতেন। এছাড়াও তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিশু স্বাস্থ্য, নারীবৈষম্য দূরীকরণসহ নারী অধিকারের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা ও কাজ করেছেন।

শাহনাজ ২০১৩ সালের জুন মাসে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ২০১৪সাল পর্যন্ত চিকিৎসা নেন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। দেশে ফিরে পূর্বের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান, সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ, সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণসহ সকল কাজেই তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কেউই হয়ত বিশ্বাসেই করতেন না তিনি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ফিরেছেন।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিনতি! ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বারের মত আবার তিনি জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন । ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরও তিনি একটিবারের মত ভেঙ্গে যান নি। চিকিৎসা নেন ইউনাইটেড হাসপাতালসহ দেশ-বিদেশের নামকরা হাসপাতালে।

শাহনাজ পারভিন সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে তার চিকিৎসার ছবি, কেমো নেওয়ার ছবিসহ বিভিন্ন খবর নিজেই জানাতেন সবাইকে। সবাই বিশ্বাস করতেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরবেন। খানিনকটা সুস্থ হয়ে সবার মাঝে এসেছিলেনও বটে।

বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে তার অনেক শুভাকাঙ্খী। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ফাতেমা হক শিক্ষা, গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিউটের সাবেক পরিচালক মাছুমা হাবীব, সুইডেন প্রবাসী স্বপন চ্যাটার্জী , কানাডা প্রবাসী সোয়েব অন্যতম। তারা বললেন তাদের এই বন্ধুর সাথে কাটানো স্মৃতি কোনদিন ভুলবার নয়।

তার বাসার গৃহ পরিচারিকা পারুল বেগম জানায়, বিভিন্ন সময় কাজে সময় ভুল করার পরও তাকে বকাঝকা করেননি। তার উচ্চ মন-মানসিকতারও প্রশংসা করেন তিনি। বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে প্রাপ্ত আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কথাও বলেন।

(এমএসএস/এএস/মে ১৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test