E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বিশ্ব পাঠশালার এক সাহসী যোদ্ধা ছিলেন কবি নজরুল’

২০১৭ এপ্রিল ১৯ ২০:২৯:০৫
‘বিশ্ব পাঠশালার এক সাহসী যোদ্ধা ছিলেন কবি নজরুল’

মোস্তাফিজ নোমান, ত্রিশাল : নজরুল আমাদের জাতীয় কবি, গানের কবি, বিদ্রোহী কবি। তাঁর নামাকাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয় কবির বিস্ময়কর সৃষ্টিশীল কর্ম যেমন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেবে, তেমনি তাঁর প্রতি আমরা সত্যিকারার্থে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবো। বুধবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমার্বতনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ এসব কথা বলেন ।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব পাঠশালার এক ধীমান সাহসী যোদ্ধা নজরুল। জীবন সত্য অন্বেষণে কবি ছুটেছেন নিরন্তর। নজরুলের সাথে ত্রিশালের ছিল গভীর সম্পর্ক। কবি ত্রিশালকে দেখেছেনত তীর্থস্থান হিসেবে। সাম্রাজ্য্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সামন্তবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন নজরুল। হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলের চেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী কোন কবির আবির্ভাব ঘটেনি। জাতি, ধর্ম, গোত্র, শ্রেণী, সম্প্রদায়ের নামে যে বিচ্ছিন্নতা ও পারস্পরিক র্ঘণার সৃষ্টি করা হচ্ছে তা থেকে মুক্তির উপায় নজরুলের কবিতা ও সাহিত্য। কবির সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল মানবসৃষ্ট এই কৃত্রিম দেয়ালগুলো ভেঙ্গে ফেলা। তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। জাগরণের কবি, অসম্প্রদায়িক চেতনার কবি নজরুল ক্ষুরধার লেখনীর স্ফূলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়েছে তেমনি তাঁর বাণী ও সূরের অমীয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়। পরাধীন ব্রিটিশ আমলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কবি বাংলা ও বাঙালীর জয়গান গেয়েছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কবির গান ও কবিতা অনিঃশেষে প্রেরণা জুগিয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নতুন প্রজন্ম নজরুল চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম, সততা নিষ্ঠা দিয়ে সুখী সমৃদ্ধি সোনার বাংলা গড়তে অর্থবহ অবদান রাখবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক চেষ্টা ও আগ্রহে ১৯৭২ সালে ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে কবি ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়ে দেন। নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি আরো বলেন বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্ধা সেতু আজ কল্পনা নয়। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জঙ্গিবাদ দমন, ক্ষুধা দারিদ্র দুরীকরণসহ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের পরিবেশনায় নৃত্যসহ সূচনা সঙ্গীতের পরে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। তারপরই রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর কর্তৃক ডিগ্রি ও স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে।

গ্র্যজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমীক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সমাবর্তন যেমন শিক্ষার্থীদের সাফল্য অর্জকে স্বীকৃতি দিয়েছে তেমনি তাদের উপর পরিবার,দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যজুয়েশনগণ তাদের মেধা,দেশ প্রেম ও মানবিক মুল্যবোধ দিয়ে ভবিষ্যত দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে সচেষ্ঠ থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে ১৩শত ৯৯জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহন করবেন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ২৯ জন শিক্ষার্থীকে ৩২ টি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৯মে’, দুখু মিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহ শহরের অদূরে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ শিক্ষালয়টি দেখতে দেখতে ১১ বছরে পা রাখলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭ সনেই প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলো।

(এমএন/এএস/এপ্রিল ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test