E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদকের অভয়ারণ্য শেকৃবি ক্যাম্পাস

২০১৭ আগস্ট ১৬ ১২:৫২:৩২
মাদকের অভয়ারণ্য শেকৃবি ক্যাম্পাস

শেকৃবি প্রতিনিধি : মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ক্যাম্পাস। গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ প্রায় সব ধরনের মাদকদ্রব্য মিলছে হাতের নাগালেই। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠেছে মাদকের বিস্তীর্ণ জাল। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বাধ্য হয়েই অনেকে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মূলত তখন থেকেই শুরু হয় ধূমপান। এ ছাড়া সঙ্গদোষে গাঁজা, ফেনসিডিল ও মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলোর ছাদে রাতে বসে মাদকের আসর। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে তা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা হলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলাসহ শেরেবাংলা হলের কয়েকটি রুমে নিয়মিত চলে মাদক সেবনের আসর। নজরুল ইসলাম ও নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, গাঁজা-ইয়াবার গন্ধে রুমে থাকাই কষ্টকর। তাদের হলের গণরুমে প্রায়ই গাঁজার আসর বসে।

জানা গেছে, শেকৃবির শেরেবাংলা হলে ইয়াবা সবচেয়ে বেশি চলে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা বিক্রি হয় এই হলে। অক্সফোর্ড মোড়, আমতলা, নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা হলের পিছনে মোবাইল ফোনের টাওয়ার ও খামার বিভাগ সংলগ্ন চাতালেও অবাধে চলে মাদক সেবন। এ ছাড়া রাতের বেলা ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে ভাসমান পতিতাদের যেন অভয়ারণ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, প্রায় তিনমাস আগে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে যৌনকর্মীদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশ আটক করে। পরে ছাত্রনেতারা তাদের ছাড়িয়ে আনেন। মাদকাসক্ত অনেক শিক্ষার্থী বাবা-মায়ের পাঠানো অর্থের সিংহভাগ ব্যয় করেন নেশায়। এ ছাড়া মাদকাসক্তদের আনাগোনায় হলগুলোতে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ছাত্রীদের একটি অংশও জড়িয়ে পড়েছেন এ নেশায়।

সূত্রে জানা গেছে, শেকৃবিতে বেশিরভাগ মাদক আসে পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, কল্যাণপুর, গাবতলী, তেজগাঁওয়ের রেললাইন সংলগ্ন বস্তি ও ক্যাম্পস সংলগ্ন বিএমপি বাজার থেকে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক মাদকসেবী জানান, ‘মুঠোফোনে আগেই বাবার (ইয়াবা) অর্ডার দিয়ে রাখি, তারপর সন্ধ্যায় গিয়ে নিয়ে আসি। আর পানি (মদ) আনি ফার্মগেটের রেড বাটন, ধানমন্ডির অ্যারাম থেকে (মদের বার)।’

একাধিক মাদকসেবী শিক্ষার্থী জানান, ‘ইয়াবা সহজলভ্য হওয়ায় আবাসিক হলগুলোতে এর চাহিদাও বেশি।’

এ ছাড়া শেকৃবির ভেতরে বটতলা সংলগ্ন বস্তিতে বসবাসকারীরাও মাদক সরবরাহের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। সন্ধ্যার পর সেখানে হাতবদল হয় দেশি-বিদেশি মদের বোতল। পাশাপশি বউ বাজারের একটি দোকানেও গোপনে চলে মাদক বেচাকেনা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসাইন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বটতলা সংলগ্ন বস্তিতে মাদক ব্যবসার তথ্য আমাদের কাছেও আছে। এর বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই অ্যাকশনে যাব।’

তিনি আরও বলেন, মাদকসেবী কোনো শিক্ষার্থীকে ধরতে পারলে পরিবারকে জানানো হবে, প্রয়োজনে পুলিশে দেয়া হবে। এ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test