একাত্তরের স্মৃতিকথা বললেন শামসুল
‘সেনাক্যাম্প থেকে ফিরে চারজন তরুণী আত্মহত্যা করে’
শ্রুতিলিখন : শঙ্করী দাস : শুরু থেকে স্বাধীনতার চেতনার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিল আমাদের গফরগাঁও। ফেব্রুয়ারি থেকে গফরগাঁও ছিল তুঙ্গে। আন্দোলনে গফরগাঁও দেশের অন্য এলাকা থেকে পিছিয়ে ছিল না। বরঞ্চ অনেক অঞ্চল থেকে ছিল এগিয়ে। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। কিন্তু স্বাধীনতার চেতনা তখনই আমার রক্তের সাথে মিশে গিয়েছিল। এতটাই উজ্জ্বীবিত ছিলাম যে, ৭ মার্চের ভাষণ শুনতে বড় ভাই, দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের ভাইদের সাথে উপস্থিত হয়েছিলাম রেসর্কোস ময়দানে। সেদিন রেসর্কোস ময়দানে দাঁড়িয়ে সেই ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম আমি।
২৫ মার্চ পরিবারের সাথে আমি আমার পৈতৃক নিবাসেই ছিলাম। পরদিন সবার সাথে বিবিসির খবর শুনে ও বড়দের আলোচনা থেকে বুঝতে পারি ঢাকায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তখন একমাত্র সঠিক খবরের মাধ্যম ছিল বিবিসি। সকালে বিবিসির খবরে সবাই কেমন মুষড়ে পড়ল। সবার মুখ হয়ে গেল থমথমে। সবাই কেমন ভীত বিহ্বল। ক্রমে লোকমুখে ঢাকার নির্মম হত্যাযজ্ঞের খবর আসতে লাগল। আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তারা কী করণীয় ভাবতে শুরু করলেন। সারাদেশের আতঙ্ক আর অস্থিরতার খবর আসতে লাগল। এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। ইতোমধ্যে দেশের পরিস্থিতি চলে গেল ভয়াবহ অবনতির দিকে। এপ্রিলে পাঞ্জাবীরা মশাখালি বাজার ও তা থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে মুখী বাজারে ক্যাম্প স্থাপন করল। এ অবস্থায় আশেপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামগুলোর ছাত্র ও যুব সমাজ সংগঠিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে একদিন রাতে সবাই একত্রিত হলো আমাদের বাড়িতে। মধ্যরাতে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই উঠে দাঁড়ায় শপথ নিতে। হাতে হাত রেখে সবাই শপথ গ্রহণ করে। শপথ ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত দেশকে মুক্ত না করতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার। প্রয়োজনে আজীবন লড়াই করবে এবং জীবন উৎসর্গ করবে। দেশকে শত্রু মুক্ত না করে ঘরে ফিরবে না। সেই শপথের ভাষা আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ চেহারা আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে।
ইতোমধ্যে মুসলিমলীগ পন্থানুসারীরা পাকিস্তান ভাঙ্গা যাবে না বলে শপথ নিয়েছিল এবং পাঞ্জাবীদের সাথে হাত মেলানোর চিন্তা করেছিল। সংগঠিত ছাত্র যুবকদের পরদিন ভারতের উদ্দেশে ট্রেনিং নিতে চলে যাওয়ার কথা ছিল সকাল দশটায়। তারা আমাদের বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এদের অবস্থান মুসলীমলীগের কেউ গোপনে জানিয়ে দেয় মশাখালি ক্যাম্পে। সকাল নয়টার দিকে পাঞ্জাবীরা আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। চারজন ধরা পড়ে যায়। বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ধৃত চারজনকে নিয়ে গেল মুখীবাজার ক্যাম্পে। আনুমানিক বেলা বারোটার দিকে মুখী ও মশাখালির মাঝখানে শিলা নদীর পাড়ে তাদের নিয়ে আসে। আমি তখন স্কুল থেকে চাচার সাথে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। চাচা ওই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। স্কুলে ছাত্র হাজির থাকতো না বললেই চলে। কিন্তু ক্লাস হোক বা না হোক নির্দেশ ছিল স্কুল খোলা রাখার। আমরা নদীর কাছাকাছি এসে দেখতে পেলাম সেই চারজনকে পেছনে হাত বেঁধে নদীর পাড়ে নিয়ে এসেছে। তাদের নদীতে নামতে বলছে। বাঁচার শেষ চেষ্টায় তারা নদীর কিনার ঘেঁষে ঝোঁপে ঝাড়ে আশ্রয় নেয়। পাঞ্জাবীরা ঝোঁপে গুলি চালায়। বাধ্য হয়ে তারা বেরিয়ে আসে। তখন ওদের রাইফেলগুলো গগন বিদারী আওয়াজ তুলে গর্জে ওঠে। চারজনই একসাথে নিহত হয়। রক্তে নদীর জল লাল হয়ে যায়। শিলানদীর উপর কাঠের ব্রীজে দাঁড়িয়ে আমি আর সহপাঠী এক চাচাত ভাই সে দৃশ্য প্রত্যক্ষ করি। একজন শিক্ষকও ছিলেন আমাদের সাথে।
যারা পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন সবাই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে দু’জন যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছেন। চার পাঁচজন পঙ্গুত্ব বরণ করে আজও জীবিত আছেন। যারা ধরা পড়ে গিয়েছিলেন তাদের ভেতর একজন ছিলেন দলের নেতা। তার কাছে যুদ্ধে অংশ নিতে সংগঠিত শপথ গ্রহণকারীদের নামের তালিকা ছিল। সেই তালিকা অনুসারে প্রত্যেকের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
গ্রামের বয়স্ক পুরুষ, মহিলারা শুধু বাড়িতে থাকত। নজর রাখত পথের দিকে। পাঞ্জাবীরা গ্রামে ঢোকার টের পেলে পালিয়ে যেত। আমাদের পরিবারের মত আরো অনেক পরিবারের মেয়েদের পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যেখানে গাড়ী যাওয়ার রাস্তা ছিল না। গ্রামের কেউ কেউ আবার বাঙ্কারও তৈরি করেছিল। দিনের বেলায় গোলাগুলির সময় আমরা চলে যেতাম বাঙ্কারে। দিনে রাজাকার বাড়িতে এসে মুরগী, ছাগল, ফলমূল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেত। রাতে গ্রামবাসী সাহায্য করত মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রস্তুত রাখত খাবার। মাছ, মুরগী, ডাল, ভর্তা এক একদিন এক এক রকম খাবারের আয়োজন রাখা হত। যাতে যোদ্ধারা অভুক্ত না থাকে।
যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মশাখালি গ্রামে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। গ্রামে ঢুকে হঠাৎ একটি বাড়ি থেকে চারজন তরুণীকে তুলে নিয়ে যায় পাঞ্জাবীরা। এই তরুণীদের নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল মাত্র কয়েকদিন আগে। সম্ভবত: গোপন খবর পাঠিয়েছিল শত্রুদের কেউ। তরুণীদের চারজনই ছিল খুব সুন্দরী। এরা তিনজন ছিল চাচাত বোন। এদের বয়স ছিল পনের থেকে বিশের মধ্যে। এদের মশাখালি ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখে। পনের দিন পর ছেড়ে দেয়। সেনা ক্যাম্প থেকে বাড়ি ফিরে কয়েকদিনের ভেতরে তারা আত্মহত্যা করে। পরিবার তাদের ভালভাবে মেনে নেয়। কিন্তু তাদের এক কথা এ জীবন রেখে লাভ কি? এ মৃত্যু এলাকাবাসীকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে।
এই সব অনাচার, অত্যাচার, আতঙ্ক, কষ্টের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর আসে। ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জন্ম লাভ করে বাংলাদেশ। আমার বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। আমার পরিবার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছে।
লেখক : শিক্ষক
পাঠকের মতামত:
- নড়াইলে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার
- নিজেকে নিরপেক্ষ রাখার ঘোষণা দিলেন নূর মোহাম্মদ এমপি
- নিজেদের প্রার্থীর বাইরে ভোট দিলে প্রতিহত করবেন সাবেক এমপি!
- সালথায় সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু
- ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ এ লন্ডন মাতাতে যাচ্ছেন জেমস
- ‘বিএনপি অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় আসতে চায়’
- রোহিঙ্গা মামলা চালাতে আর্থিক সহায়তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান
- গাছকাটা ও লাগানোর বিষয়ে বিধিমালা করতে রুল
- ‘সম্পদ অর্জনে এমপিদের পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যানরা’
- মিল্টনের আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব নিচ্ছে শামসুল হক ফাউন্ডেশন
- আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ মেনত্তি আর নেই
- মাইকিং করে চিপসের প্যাকেট ও ডাবের খোসা কিনলেন মেয়র
- চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদককে শোকজ
- সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাজীবকে শুভেচ্ছা
- গোপালগঞ্জে ২৮ হাজার টাকার জাল নোটসহ ব্যবসায়ী গ্রেফতার
- গোপালগঞ্জে ৫ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা ছাত্র গ্রেফতার
- বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেন বিএনপি নেতা আমান
- ‘আওয়ামী লীগ ভাঙা কলসি, বাজছে বেশি’
- বৃহস্পতিবার ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
- সুবর্ণচরে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবাব চৌধুরীর উঠান বৈঠক
- ‘হামাসের দাবি মানবে না ইসরায়েল’
- অবৈধ টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু
- সারাদেশে বজ্রসহ শিলা বৃষ্টির পূর্বাভাস
- ইসরায়েলের গোলাবারুদের একটি চালান থামাল যুক্তরাষ্ট্র
- ইন্দোনেশিয়ায় ৬.২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত
- হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
- ঘাতকরা কুষ্টিয়ায় নেপালী শ্রমিকসহ স্থানীয়দের পাইকারীভাবে হত্যা করে
- টঙ্গীবাড়ীতে অজ্ঞাতনামা যুবকের জবাই করা লাশ উদ্ধার
- সদ্য ইস্তফা দেওয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এডিপি ও পিআইসি’র টাকা লুটপাটের অভিযোগ
- সাতক্ষীরায় আম নিরাপদ প্রক্রিয়ায় বাজারজাতকরণের সময়সূচি নির্ধারণ
- নির্বাচনী প্রচার মাইকের শব্দদূষণ রোধে সিইসির কাছে চিঠি
- সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুড়ে ছাই ১০ একর এলাকার ছোট গাছ লতাগুল্ম
- চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্সী নজরুল ইসলামের নির্বাচনী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
- ৫ মে দিনটিকে কেন ভুলে যেতে চায় হেফাজত
- তিন মাসে দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশি গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছে ৭ গুণ
- আগের দিন রাস্তা সংস্কারের দাবি, পরের দিন বাস্তবায়ন
- মহম্মদপুরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আটক ১
- নীলফামারী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই সম্পন্ন
- ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে মতবিনিময় সভা
- ঋণ খেলাপির দায়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহাগের মনোনয়ন বাতিল
- বোয়ালমারীতে স্বর্ণের কারিগরকে কোপাল বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা
- টাঙ্গাইলে দাবদাহে দীপ্তি ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালু ফুল
- সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট
- ঈশ্বরগঞ্জে পানি সাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি প্রদর্শনী ট্রায়ালের মাঠ দিবস
- ‘বাংলাদেশের ঋণ খেলাপি না হওয়ার অহংকারে চিড় ধরেছে’
- প্রাকৃতিক গ্যাস আসার খবরে খুশি গোপালগঞ্জবাসী
- রাজৈরে আগুনে পুড়লো ৬টি দোকান
- দুই ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক আটক
- ‘সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আছে’
- ফরিদপুর সদরে তুমুল আলোচনায় ফকির বেলায়েত হোসেনের মোটরসাইকেল
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !