মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা বললেন হারেছা খাতুন
‘আমার মেয়ে দু’টোকে কিছুদিন ক্যাম্পে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করে এবং পরে মেরে ফেলে’
শ্রুতিলিখন : শঙ্করী দাস : কয়েকমাস ধরে শুনতে পাচ্ছিলাম দেশে গন্ডগোল চলছে। কিন্তু যুদ্ধ হবে কেউ বলেনি। কেউ ভাবেওনি যে দেশে যুদ্ধ হতে পারে। হঠাৎ যুদ্ধ শুরু হলে আমরা তাৎক্ষনিক মামা শ্বশুর বাড়ি সাইটালিয়া গ্রামে আশ্রয় নিই। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে ভিন্ন ভিন্ন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে যায়। সবার এক কথা গ্রামে একদিন পাঞ্জাবী ঢুকবে। আর পাঞ্জাবী ঢুকলে মেয়ে, বৌদের ধরে নিয়ে যাবে। বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে দেবে। যাকে পাবে তাকেই গুলি করে মেরে ফেলবে। এমতাবস্থায় আমরাও বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া মন স্থির করি। গ্রামে দু’চারজন যারা থেকে যায় তারাও খুব অস্থিরতার ভেতর দিন কাটাতে থাকে।
সাইটালিয়া গ্রাম ছিল ভিতরে। রাস্তাঘাট তখন ছিল খুব খারাপ। গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী থাকায় সে গ্রামকেই আমরা নিরাপদ মনে করি। এখানে আমরা পুরো তিনমাস কাটাই। তখনও সাত খামারে পাঞ্জাবী ঢোকেনি। হয়তো পাঞ্জাবী আর আসবে না ভেবে তিনমাস পর আমরা গ্রামে ফিরে আসি। বাড়ি ফেরামাত্র পাঞ্জাবী গ্রামে ঢোকে এবং বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। মুহুর্তে গ্রাম ছেড়ে চলে গেলাম আবার টেংরা গ্রামে। নিজের মামার বাড়ি। কাহাতক অন্যের বাড়ি। বাড়ি ফেরার ঠিক পরদিন রাতে পাঞ্জাবীরা আসে বাড়িতে। বাড়ি ঢুকে দরজা ধাক্কাতে থাকে। ভয়ে, আতঙ্কে তখন মনের কি অবস্থা হয়ে ছিল বলে বোঝাতে পারবনা। দরজা খুলে দেই। দরজা খোলার সঙ্গে আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগে ঘরের জিনিসপত্র লুটপাট শুরু করে। তারপর আমাদের বের করে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সবগুলো ঘরে। আগুনে আমার গরু, ছাগল, শস্য ও অন্যান্য জিনিস সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আশেপাশের আরো কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেয় একসাথে। আগুন দিয়ে বাড়ির মানুষগুলোকে এনে একত্রিত করে আমাদের সাথে। একত্রিত করে আমার বাড়ির কাছে লালবাগ নামে একটি জায়গায় বসিয়ে রাখে। আমার জ্যাঠা কলেমা পড়তে থাকে। পাঞ্জাবীরা আমার জ্যাঠাকে বন্দুকের নল দিয়ে জোরে আঘাত করতে থাকে। জ্যাঠা এক সময় উপুড় হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ধরা পড়া আতর আলি নামের ছেলেটি মায়ের কাছে পানি খেতে চায়। আতরের মা কেঁদে বলে, বাবারে পানি নাই। আতর আলির মার পরনের কাপড় ছিঁড়ে ওরা পুরুষদের চোখ বেঁধে ফেলে। কিছুক্ষণ পর মহিলাদের আলাদা করে এবং পুরুষদের বাঁধন খুলে লাইন করে দাঁড় করায়। তারপর ব্রাশফায়ার করে। আমার বোনের স্বামীও ছিল সেই লাইনে। আমার বোন চিৎকার করে ওঠে। রাজাকাররা বলে মরেনি। কাল আসবে।
সেদিন সাতজন জ্বলজ্যান্ত মানুষকে এক পলকে মেরে ফেলা হল আমার চোখের সামনে। এদের অনেকেই ছিল আমার আত্মীয়। আমার স্বামীকে তখন মেরে ফেলেনি। ধরে নিয়ে গেল। সাথে নিয়ে গেল আরও দুটি মেয়ে। একজন নতুন বিবাহিত। অন্যজন সাতমাসের অন্তঃসত্তা। আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে রেখেছিল লুট করা গরু শ্রীপুরে ওদের ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়ার জন্য। অন্তঃসত্তা মেয়েটিকে পাঞ্জাবীরা জাপটে ধরে রেখেছিল। যখন ওরা চলে যায় মেয়েটির গায়ে শাড়ি ছিল না। পাঞ্জাবীদের বাহুর মধ্য থেকে আর্তনাদ করে অনুনয় করেছিল । বড় বীভৎস সে দৃশ্য। চোখে না দেখলে কোনক্রমে বোঝানো সম্ভব নয়। মেয়ে দু’টোকে কিছুদিন ক্যাম্পে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করে এবং পরে মেরে ফেলে। চল্লিশ বছর পরও সে সব স্মৃতি আমারেএকটুও ম্লান হয়নি। যুদ্ধদিনের স্মৃতি এখনও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। একদিন ভাত রান্না শেষ করেছি। এই মুহুর্তে খবর আসে পাঞ্জাবী আসছে। শুধু ভাতের হাঁড়ি নিয়ে দৌড়তে থাকি। বাকি সব কিছু ফেলে। পেছনে ছোট ছোট বাচ্চারা। প্রায় এক মাইল পর্যন্ত দৌড়ে পেছনে ফিরে তাকাই। এ জায়গাটা ছিল একদম জঙ্গলের ভেতরে। জায়গাটার নাম ডালেশ্বর।
স্বামীকে ধরে নিয়ে গেল আর ফিরে এলো না। পরে জানতে পারি শ্রীপুরের পাশে লোহাগাছা গ্রামে রেললাইনের পাশে গুলি করে ফেলে রেখেছিল। স্বামীর লাশটিও দেখতে পেলাম না। এদিকে পোড়া বাড়িতে থাকার অবস্থা রইল না। গ্রামের অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেই। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাই। আমার ছোটছেলের বয়স তখন তিন বছর। বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া ও চোখের সামনে পরিচিত মানুষের হত্যাকাণ্ড দেখে আতঙ্কে পরদিন তার খালুর সঙ্গে চলে গেল। সেই যে গেল, আর আমার কাছে ফিরে এল না। স্বামীকে হারালাম, ছেলের সঙ্গেও সৃষ্টি হলো আমার দুরত্ব। আজ পর্যন্ত সে আমার কাছে এসে থাকে না। মাঝেমধ্যে এসে দেখে যায় এতটুকুই। পাঞ্জাবীরা আমার সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে। স্বামীর স্মৃতি মনে হলে বিয়াল্লিশ বছর পরেও ধৈর্যধারণ করতে পারিনা। বাঁধ ভাঙ্গা চোখের জলে বুক ভাসাই দিনের পর দিন রাতের পর রাত।
আতর আলির কথা আগেই বলেছি। সেই আতর আলির বাস্তভিটাতেই সাতখামাইর একাত্তরের গণকবর। পাঞ্জাবীরা আতর আলিসহ সাতজনের লাশ এক সঙ্গে করে এখানেই কবর দিয়েছিল। এ কবরে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মবলি দিয়ে আমার স্বজনেরা চিরনিদ্রিত হয়ে আছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেছেন : গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর গ্রামের গৃহবধূ হারেছা খাতুন
পাঠকের মতামত:
- টঙ্গীবাড়ীতে অজ্ঞাতনামা যুবকের জবাই করা লাশ উদ্ধার
- সদ্য ইস্তফা দেওয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এডিপি ও পিআইসি’র টাকা লুটপাটের অভিযোগ
- সাতক্ষীরায় আম নিরাপদ প্রক্রিয়ায় বাজারজাতকরণের সময়সূচি নির্ধারণ
- নির্বাচনী প্রচার মাইকের শব্দদূষণ রোধে সিইসির কাছে চিঠি
- সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুড়ে ছাই ১০ একর এলাকার ছোট গাছ লতাগুল্ম
- চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্সী নজরুল ইসলামের নির্বাচনী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
- ৫ মে দিনটিকে কেন ভুলে যেতে চায় হেফাজত
- তিন মাসে দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশি গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছে ৭ গুণ
- আগের দিন রাস্তা সংস্কারের দাবি, পরের দিন বাস্তবায়ন
- মহম্মদপুরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আটক ১
- নীলফামারী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই সম্পন্ন
- ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে মতবিনিময় সভা
- ঋণ খেলাপির দায়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহাগের মনোনয়ন বাতিল
- বোয়ালমারীতে স্বর্ণের কারিগরকে কোপাল বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা
- টাঙ্গাইলে দাবদাহে দীপ্তি ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালু ফুল
- সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট
- ঈশ্বরগঞ্জে পানি সাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি প্রদর্শনী ট্রায়ালের মাঠ দিবস
- ‘বাংলাদেশের ঋণ খেলাপি না হওয়ার অহংকারে চিড় ধরেছে’
- প্রাকৃতিক গ্যাস আসার খবরে খুশি গোপালগঞ্জবাসী
- রাজৈরে আগুনে পুড়লো ৬টি দোকান
- দুই ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক আটক
- ‘সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আছে’
- ফরিদপুর সদরে তুমুল আলোচনায় ফকির বেলায়েত হোসেনের মোটরসাইকেল
- কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে ‘মানবতার দেয়াল’
- তুরস্কের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে চলছে স্টার্টআপ ও কমিশনিং কার্যক্রম
- কাপাসিয়ায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতা কর্মসূচি
- ‘প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে’
- ঈশ্বরদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় গ্রেফতার ১২
- যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির মুক্তির দাবিতে ফরিদপুর যুবদলের বিক্ষোভ
- জামালপুরে ১৬ দাবি বাস্তবায়নে পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি
- মধুখালিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ১
- সৌদি ফেরত স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর থানায় স্বামীর আত্মসমর্পণ
- বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন
- ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
- রহমাতুননেছা শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
- দিনাজপুরে এক পশলা বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি
- ‘সত্য বলায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লাগলে কিছু করার নেই’
- তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের মেয়র হলেন সাদিক খান
- সুন্দরবনে আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ৫ বাহিনী, জোয়ারের অপেক্ষা
- আজ বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
- উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে জবাই করে হত্যা
- এবার রেকর্ড সংখ্যক হাজির সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি
- দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ
- খাগড়াছড়িতে বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ নিহত ৩
- নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হাজার হাজার ইসরায়েলির বিক্ষোভ
- ঢাকায় ১৮ মে থেকে শুরু হচ্ছে জাপানিজ ক্যালিগ্রাফি
- এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
- ননিয়া নামক স্থানে পাক সেনাদের পৈশাচিক নির্যাতনে ২৬ জন মানুষ নিহত হয়
- গরমে আইস ফেসিয়ালে যে উপকার পাবেন
- মে দিবসের কবিতা
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !