E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ মুন্সীগঞ্জ মুক্ত দিবস

২০১৬ ডিসেম্বর ১১ ১১:১৫:১৮
আজ মুন্সীগঞ্জ মুক্ত দিবস

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : আজ মুন্সীগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনতার দুর্বার প্রতিরোধে মুন্সীগঞ্জের হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়। সূর্য সন্তানদের প্রতিরোধ আর প্রবল আক্রমণে পাক হায়েনারা রাতের আঁধারে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। শত্রুমুক্ত হয় মুন্সীগঞ্জের মাটি।

ভোর হতে হতেই হানাদারদের পরাজয়ের খবর এ এলাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির উল্লাসে আনন্দ ভরা কণ্ঠে জয়বাংলা ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে সবাই।

রক্তঝরা দিনগুলোতে দেশের অন্যান্য জেলার মতো মুন্সীগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের মানুষও গর্জে উঠেছিল দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। আর এ কারণে মুক্তি বাহিনীর মাটি হিসেবে পাক সেনাদের প্রখর দৃষ্টি ছিল এ জেলার উপর। এছাড়া আরো একটি বিশেষ কারণে পাক হানাদাররা মুন্সীগঞ্জের উপর বেশি ক্ষিপ্ত ছিল। পাক বাহিনীর কুখ্যাত দালাল পাকিস্তান নেজামে ইসলামের সহ-সভাপতি মৌলানা (মাওলানা) আল-মাদানীকে টংঙ্গিবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাপুর এলাকায় এক জনসভায় ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে মুক্তি পাগল মানুষ।

২৫ শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বর-পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় এ অঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে উঠে। এম কোরবান আলী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, আ. করিম বেপারী, অ্যাড. সামসুল হক, প্রফেসর মো. সামছুল হুদার নেতৃত্বে মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের সংগ্রামী জনতা অত্যন্ত সোচ্চার ছিল। সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার সংবাদ মুন্সীগঞ্জে পৌঁছলে শত শত মানুষ রাতভর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে।

২৬শে মার্চ সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মেসেজ মুন্সীগঞ্জ শহরের গোয়ালপাড়া এলাকায় অবস্থিত টেলিফোন এক্সেঞ্জে আসে। সেসময় মুন্সীগঞ্জ জেলার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. হোসেন বাবুল মেসেজটি গ্রহণ করে। এরপর এ মেসেজটি আ.ক.ম তারা মিয়াকে (কালা চাচা) দিয়ে সকাল ৯টায় শহরে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা প্রচার করা হয়।

সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্য মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাক বাহিনীদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকগুলো যুদ্ধ হয়। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য যুদ্ধ হয়েছিল গালিমপুর, কমলগঞ্জ, কামারখোলা, গোয়ালীমান্দ্রা, দক্ষিণ পাইকসার, সৈয়দপুরসহ টঙ্গিবাড়ী দখলের যুদ্ধ।

তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা গোয়ালী মান্দ্রা, বাড়ৈখালী, শেখেরনগর, শিবরামপুর, গজারিয়া ও পঞ্চসারে পাক হানাদার বাহিনীদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ করে।

এদিকে নভেম্বর মাসের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে মুন্সীগঞ্জের সকল থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। এবং বিভিন্ন থানার ট্রেজারি দখল করে রাইফেল, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন অস্ত্র লুট করে বিভিন্ন প্রবেশ মুখে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সশস্ত্র ছাত্র, যুবক ও জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

পাকবাহিনী মুন্সীগঞ্জ প্রবেশ করে শহরের হরগঙ্গা কলেজে প্রধান সেনাক্যাম্প স্থাপন করে। এর পাশেই মুন্সীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে তৈরি করা হয় বধ্যভূমি। হানাদাররা সেসময় বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে ক্যাম্পে রাখতো। এবং তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে তৈরি করা বধ্যভূমিতে ফেলে রাখতো।

১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের ব্যাপকতায় পাক সেনারা দিবাগত রাতে মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে ঢাকা পলায়ন করে। ১১ই ডিসেম্বর কাকডাকা ভোরে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেলের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে মুখরিত করে মুন্সিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিবাহিনী ও জনতার আনন্দ মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে মুন্সিগঞ্জ জেলা।

প্রতিবারের মতো মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা প্রশাসক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন নান কর্মসূচির আয়োজন করেছে। প্রথম প্রহরে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test