E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংকার : স্বাধীনচেতা হলে জেলে যেতে হয় 

২০২১ মার্চ ১০ ১৩:৩৫:১৪
ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংকার : স্বাধীনচেতা হলে জেলে যেতে হয় 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


একজন প্রথিতযশা, স্বাধীনচেতা ব্যাংকারের ভালো কাজের অবাক-প্রতিদান প্রাপ্তির কথা বলি।মো.লুৎফর রহমান সরকার ১৯৮৩-৮৫ মেয়াদে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্হাপনা পরিচালক ছিলেন, একজন মন্ত্রীর নির্দেশে কাজ না করায় এক পর্যায়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, জেলে যেতে হয়েছিল।হুসেন মোহাম্মদ এরশাদের সামরিক আদালতে বিচার করে এল আর সরকারকে জেলে পাঠিয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা ছাত্রদের সাময়িক কর্ম সংস্হানের জন্য স্বল্প সুদে একটি ঋণ-প্রকল্প চালু করেন তিনি—বিশ্ববিদ্যালয় কর্ম সংস্হান প্রকল্প (বিকল্প) নামে। এরশাদের শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশকৃত ছাত্রদের কেবল এ ঋণ মন্জুর করতে হবে—এমন নির্দেশনা তিনি মেনে নিতে পারেননি।তারপর যা হবার তাই হয়েছিল।

রাজার কথাই যেখানে আইন, সেখানে একজন নাগরিককে শাস্তি দেয়া কোনো সমস্যা হয় না।আর আনীত অভিযোগ যখন প্রমান করার মতো সামান্যতম সুযোগও থাকে না,তখন পানি ঘোলা করার অপরাধ তো থাকেই।

সামরিক আদালত কর্তৃক সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্হাপনা পরিচালক এল আর সরকারকে ও তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী জেনারেল ম্যানেজার এ কিউ সিদ্দিকীকে চাকুরিচ্যুত ও কারাদন্ড দেয়া হয়।দেশবাসী আর একবার প্রত্যক্ষ করলো—হরিণ শাবকের পানি ঘোলা করার পুরানো কাহিনী।

অবশ্য অল্প দিনের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের মুখে তাঁরা কারামুক্ত হন।
এল আর সরকার দেশের সর্ব বৃহৎ সরকারি ব্যাংকে যোগ দিয়ে বলেছিলেন—সোনালী ব্যাংক একটি ঘুমন্ত দৈত্য,একে জাগিয়ে তুলতে হবে।দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকা কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।

ছাত্রদের জন্য ঋণ,বই ক্রয়ের ঋণ,লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করার ঋণসহ নানাবিধ শিক্ষা-বান্ধব প্রকল্প,পরিবেশ বান্ধব অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।প্রতিটি ব্যাংকের বার্ষিক মুনাফার একটি অংশ দারিদ্র বিমোচনে ব্যয় করার জন্য প্রথম প্রস্তাব তুলেছিলেন তিনি।

মেধাবীদের তিনি ব্যাংকিং পেশায় আকৃষ্ট করেছিলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রথম স্হান,দ্বিতীয় স্হান অধীকারীদের বিনা নিয়োগ পরীক্ষায় সরাসরি প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

কয়েকটি ব্যাচ কেবল মহিলাদের নিয়োগ দেয় হয়।এ সবই তাঁর দূরদর্শিতার স্বাক্ষর বহন করে। ক্যাশ বিভাগকে “ ব্লোক ক্যাডার “ বলা হতো, কেউ ক্যাশে যোগ দিলে হেডক্যাশিয়ারের উপর যাওয়ার সুযোগ ছিল না কিন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে যে কোনো পদের জন্য তাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তিনি।

সোনালী ব্যাংকের সকল স্হাপনা, জনবল, দেশব্যবপি নেটওয়ার্ক সঠিকভাবে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে দ্রুত গতিতে সফলতার দিকে এগিয়ে গেছেন। আবর্জনাপূর্ণ স্রোতহীন একটি বদ্ধ নদীকে সংস্কারের মাধ্যমে যেভাবে সতত বহমান নদীতে রূপান্তর করা যায়, সেভাবে ব্যাংকটিকে দাড় করাতে চেয়েছিলেন তিনি ।

কিন্ত ওই যে, কথা আছে ! যারা ভালো কাজ করে, বেশি বেশি কাজ করে, তারাই বিপদে পড়ে বেশি ! তিনি কেবল একজন ব্যাংকারই ছিলেন না, তিনি রম্য-সাহিত্য চর্চা করতেন। লক্ষণীয় যে, ব্যাংকিংয়ের মতো একটি নীরস বিষয় নিয়ে যার প্রধান কাজ,তিনিই রম্য-সাহিত্য রচনা করেন।

এ সকল কারণেই তিনি সর্ব মহলে বেতিক্রমধর্মী ব্যাংকার নামে পরিচিতি পেয়েছেন। ‘৯৬ এর হাসিনা সরকার তাঁদের সন্মান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এল আর সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে এবং এ কিউ সিদ্দিকীকে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্হাপনা পরিচালক পদে নিয়েগ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। ভালো মানুষেরা, মহৎ মানুষেরা কিছু হারালে তা আবার ফিরে পান।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test