E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্যক্তি মোদি নয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী  

২০২১ মার্চ ২১ ১৩:২৯:৪১
ব্যক্তি মোদি নয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী  

আবীর আহাদ


ব্যক্তি মোদি নয় । বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী । এই সেই ভারতমাতা, যে-দেশটি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহাদুর্দিনে মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো । বাংলাদেশের সোয়াকোটি বিপন্ন মানুষের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতাদান করেছিলো । ভারতের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকারের অবস্থানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ও সমরাস্ত্র সরবরাহ দিয়েই সে ক্ষান্ত হয়নি----তার সামরিক বাহিনী মিত্রবাহিনীরূপে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন ভারতের প্রায় সতেরো হাজার সৈন্য । পাশাপাশি পাকিস্তানের হাতে বন্দী মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনরক্ষা ও সসম্মানে তাঁকে মুক্ত-স্বাধীন দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে চালিয়েছিলো আন্তর্জাতিক সফল কূটনৈতিক লড়াই ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু সেই ভারতমাতার প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের দেশে আগমণ করছেন, এটা আমাদের জন্যে অবশ্যই বড়ো গর্ব ও সম্মানের বিষয় । ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বরণ করে আমরাও ভারতমাতাকে সম্মানিত করতে যাচ্ছি । বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়াবলির সাথে সুবর্ণজয়ন্তীর কোনোই সম্পর্ক নেই । সেসব অমীমাংসিত বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির জন্যে রয়েছে উভয় ভাতৃপ্রতিম দেশদ্বয়ের কূটনীতিক অঙ্গন ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন প্রতিহত করার নামে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিবাদী হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ কতিপয় তথাকথিত ইসলামী দল যে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করছে----তা শুধুই সাম্প্রদায়িক ঘৃণা নয়, মূলত: মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতায় যে তাদের আদর্শিক দেশ পাকিস্তানের ন্যক্কারজনক পরাজয় সংঘটিত হয়েছিলো, পরাজয়ের সেই প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা তাদের মনের ঝাল মেটাতে চায় । এর মধ্য দিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকেও বানচাল করার চক্রান্ত করছে ।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল ও মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে প্রতিহত করার যে অবমাননাকর অপতৎপরতা ঐসব ইসলামী দলগুলো করছে, তা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহিতা । অপরদিকে বন্ধুপ্রতিম দু'টি দেশের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে উপমহাদেশের বুকে অশান্তির আগুন জ্বালানোর যে অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে সেটাও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ । আর রাষ্ট্রদ্রোহিতা অপরাধের পরিণতি কী তা সচেতন সবাই অবগত আছেন ।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর নয়াসংস্করণ জঙ্গিবাদী হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য যেসব তথাকথিত ইসলামী দল ও সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল ও মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শিষ্টাচারবহির্ভূত যেসব রাষ্ট্রদ্রোহ আচরণ করছে---- সে প্রেক্ষিতে প্রয়োজনে একযোগে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত পবিত্র মাটি থেকে ঐসব স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিবাদী মোল্লা নামধারী দেশদ্রোহী দুর্বৃত্তদের চিরতরে উৎখাতের ব্যবস্থা করুন । বাংলাদেশ রাজাকার আলবদর আর তাদের ধর্মান্ধ জঙ্গি উত্তরসূরিদের দেশ নয়----এটা মুক্তিযুদ্ধের দেশ । বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বে অর্জিত দেশ । এদেশকে নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ধারাবাহিক রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী উন্মাদনা ও অরাজকতা আর প্রশ্রয় দেয়া যায় না । তাদের চিরতরে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র কী এবং রাষ্ট্র কতোটা পরাক্রমশীল ।

পরিশেষে বাংলাদেশের সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আমি আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাচ্ছি ।

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হোক ।
জয়বাংলা ! জয়হিন্দ !

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test