E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যুদ্ধ করে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় 

২০২১ মে ১৮ ১২:২৫:৪৪
যুদ্ধ করে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় 

শিতাংশু গুহ


যুদ্ধ করে কি ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান সম্ভব? না, এটি অসম যুদ্ধ। তাহলে সমাধান কি? আলোচনা, দেবে আর নেবে, এছাড়া উপায় নেই। যুদ্ধে ইসরাইলকে হারানো সম্ভব নয়, এ বাস্তবতা ফিলিস্তিনীরা কবে উপলব্দি করবে? ইসরাইলের একসময়কার শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী মিসেস গোল্ডামায়ার একদা বলেছিলেন, ‘আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের একটি গোপন মন্ত্র আছে, আমরা জানি, আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই, তাই যুদ্ধ করেই আমাদের বাঁচতে হবে’।

জাতিসংঘের যে প্রস্তাবে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হয়, একই প্রস্তাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্টার কথা ছিলো। মোড়ল মুসলিম দেশগুলো তখন এ প্রস্তাব মেনে নেয়নি, বরং তাঁরা সদ্য গঠিত ইসরাইল রাষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পরে। সেটি ১৯৪৮ সাল। মিশর, সিরিয়া, জর্ডান ও ইরাক একত্রে সদ্য ভুমিষ্ট ইসরাইল আক্রমন করে। জন্মের পরই এই শিশু রাষ্ট্রের মৃত্যু হতে পারতো, হয়নি। হিটলার ৬০লক্ষ ইহুদী হত্যা করে এ জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। হয়তো এঁরা ঈশ্বরের ‘বরপুত্র’।

১৯৬৭-তে আবার যুদ্ধ। মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের আবার দেশগুলো নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে। ৬দিনের এ যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়, ফিলিস্তিনিরা ভুখন্ড হারায়। ১৯৭৩-এ ইহুদীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘ইয়াম কাপুর’-র দিন ১২টি আরব দেশ পুনরায় ইসরাইলে আক্রমন চালায়। ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ১১জন ইসরাইলী প্লেয়ার হত্যা করে পিএলও। ইসরাইল অবশ্য খুঁজে খুঁজে প্রতিটি সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। এনিয়ে একটি ম্যুভি আছে, দেখেছি, কিন্তু নামটি মনে নেই।

ফিলিস্তিনীদের ভুখন্ড শুধু যে ইসরাইল দখল করে আছে তা নয়, মিশর ও জর্ডান অনেকটা ভুখন্ড দখল করে আছে। বর্তমানে ফিলিস্তিনের যেটুকু ভুখন্ড আছে, তা হামাস ও ফাত্তাহ গ্রূপের দখলে। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে পশ্চিমতীর ও গাজায় নামকাওয়াস্তে স্বায়ত্বশাসন কায়েম হয়। এখন গাঁজা হামাসের দখলে। পশ্চিমতীর ফাত্তাহ’র দখলে। হয়তো এজন্যে ইসরাইল এবার তিনটি রাষ্ট্রের প্রস্তাব করেছে, পশ্চিমতীর, গাজা ও ইসরাইল। হামাস তা মানেনি।

১৯৬৯ সালে আরব দেশগুলো ৩টি ‘নো’ প্রস্তাব পাশ করে, এগুলো হচ্ছে, নো পিস্ (শান্তি), নো (রিকগনিশন) স্বীকৃতি, নো (নিগোসিয়েশন) আলোচনা। এদের একটাই লক্ষ্য ইসরাইলের ধ্বংস। ইতিমধ্যে ৭৩ বছর পার হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময় পরেও কি মনে হয় যুদ্ধই একমাত্র সমাধান, নাকি সমস্যা আরো বাড়বে? বাংলায় একটি কথা আছে, ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’। মোড়লদের কথায় ফিলিস্তিনিরা আজ ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’, অথচ রক্তগঙ্গা বয়েই চলেছে, রক্তের এ হোলিখেলা বন্ধ হউক।

ক্যাম্প-ডেভিডসহ অন্তত: তিনবার ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। পিএলও রাজি হয়নি। এবারকার ফাইট মূলত: হামাস ভার্সেস ইসরাইল। হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। হামাস স্বাধীনতা চায়না, ইসরাইলের ধ্বংস চায়, যা অসম্ভব? ফিলিস্তিনীদের বোঝা উচিত, আবাবিল পাখিরা আরব্য উপন্যাসে মানায়, বাস্তবে নয়! মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’। যুক্তরাষ্ট্র জরুরি ভিত্তিতে ইসরাইলকে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে।

আমার প্রায় ৪০+ কর্ম-জীবনে, বিশ্বের দু’টি সমস্যা বারবার এসেছে। একটি ফিলিস্তিন সমস্যা। অন্যটি কাশ্মীর সমস্যা। দু’টি সমস্যার বয়স ৭০+। কাশ্মীরে যখন নরেন্দ্র মোদী ৩৭০ ধারা বাতিল করেছেন, তথ্যের ভিত্তিতে আমি সেটি সমর্থন করেছি। আমার যুক্তি ছিলো ৭০+ বছর ধরে একটি ব্যবস্থা অকার্যকর, সেটি বদলানো দরকার। কাশ্মীরে সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যায়নি, কিন্তু কমেছে তা স্বীকার্য। হয়তো কাশ্মীরে শান্তি উঁকিঝুঁকি মারছে। ফিলিস্তিনের জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য, ৭৩ বছর যুদ্ধ করে যখন শুধুই লোকসান, তখন ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’ হোক শ্লোগান।

যে ভুখন্ড নিয়ে দীর্ঘদিন এ সংঘাত চলছে, তাতে উভয় পক্ষের হয়তো জোরালো যুক্তি আছে। আমাদের দেশে জমিতে যিনি দখলে থাকনে তাঁর স্বত্ব অগ্রাধিকার পায়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ সম্পত্তিই তো হিন্দুদের ছিলো, তা চাইলেই কি তাঁরা ফেরত পাবেন? একসময় ভারত আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত ছিলো, ভারত চাইলেই কি তা ফেরত পাবে? ফিলিস্তিনী আরবদের হয়তো বোঝার সময় এসেছে, রাজনীতিতে ‘গিভ এন্ড টেক’ এবং ‘শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান’ অপরিহার্য। নইলে হয়তো ‘আম ও ছালা’ দু’টোই যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test