E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝুমন দাস আপনকে মুক্তি দিয়ে দুখিনী মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হোক

২০২১ জুন ০৫ ১৩:৩০:১৪
ঝুমন দাস আপনকে মুক্তি দিয়ে দুখিনী মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হোক

শিতাংশু গুহ


শাল্লার ঝুমন দাস আপন প্রশাসনের আপনজন না হলেও এই দুঃখি যুবকের আপনজন মা আছেন, আছেন প্রিয়তমা স্ত্রী ও শিশুসন্তান। ঝুমন দাস আপন বিনা অপরাধে জেলে। শাল্লায় শ’খানেক হিন্দু বাড়ীঘর ধ্বংসের হেফাজতী তান্ডবে যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁরা জামিন পেয়ে বাইরে। ঝুমন দাস যাঁর বিরুদ্ধে ফেইসবুক পোস্টিং দিয়ে জেলে সেই হেফাজতী নেতা মামুনুল হক বিবিধ অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বন্দি আছেন। ঝুমন দাস জেলে কেন এর কোন সদুত্তর নেই! 

শুক্রবার ২৮শে মে এক সংবাদ সম্মেলনে ঝুমন দাস আপন-র মা নিভা রানী দাস বলেছেন, ছেলে জেলে, আমার ঘুম আসেনা, খেতে মন চায়না, বুক ফেটে যায়, কি অপরাধ আমার ছেলের? অপরাধীরা জামিনে মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু আমার ছেলে কারাগারে, আমি মা হয়ে তা সইতে পারছিনা, আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই। ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস বলেছেন, আমার স্বামী নিরপরাধ, তবু তিনি কারাগারে। আমার নয় মাসের একটি শিশুসন্তান কোলে, সে তাঁর বাবাকে খুঁজছে, বাবার সোহাগ না পেয়ে কেঁদে কেঁদে দিন কাটাচ্ছে। এম দেড় দিকে তাঁকিয়ে আদালত আমার স্বামীকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে পারেন, কারণ তিনি কোন অপরাধ করেননি।

ঝুমন দাস আপন গ্রেফতার হন ১৬ই মার্চ ২০২১ ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টে। এরআগে ১৫ই মার্চ তিনি ফেইসবুকে পোস্টিং দেন হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। ১৭ই মার্চ কয়েক হাজার তৌহিদী জনতা শাল্লার হিন্দুর পল্লীতে আক্রমন চালায়। এতে ৮৯টি হিন্দু সম্পত্তি, ৯টি মন্দির ধ্বংস হয়, মহিলা ও শিশু নির্যাতিত হন, পুরুষের ওপর চলে অত্যাচার। ঘটনাকালে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, পরে মামলা হয়, গ্রেফতার হয়, তবে বিচার আশা করে লাভ নেই, এ ধরনের ঘটনার বিচার সচরাচর হয়না। ঝুমন দাশ আপন আসলে কি বলেছিলেন? সেটি পুলিশের জবানবন্দিতে দেখা যাক। সুনামগঞ্জ শাল্লার থানার এসআই মো: আব্দুল করিম ১৭ই মার্চ ২০২১ স্থানীয় আদালতে একটি এজাহার দাখিল করেন, এতে ঝুমন দাস আপনের তিনটি ফেইসবুক পোস্টিং অভিযোগ আকারে পেশ করে বলা হয়, ঝুমন দাসের বক্তব্যে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে হিন্দু পল্লীতে আক্রমন চালায়। আসলে কি তাই?

দেখা যাক, এজাহারে আনীত পুলিশের তিনটি অভিযোগ কি? ঝুমন দাস আপন লিখেছেন: (১) ‘পশ্চিমবঙ্গের সিনেমার পরিচালক রাজ্ চক্রবর্তীর পোষ্টে মমতা ব্যানার্জিকে গালি দেয়ায় ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ আমার আইডি ৩দিনের জন্যে ব্লক করে দিয়েছিলো। তাই সমসাময়িক অনেককিছুই লিখিতে পারি নাই। ‘--ভারতবর্ষের সর্বকালের সেরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসছেন ২৬মার্চ, আর তাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেবেনা বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মূর্খ মামুনুল নামের এক মূর্খ উগ্রবাদী মোল্লা। ----জাতির পিতার উপহার দেয়া একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে শেখের বেটি ক্ষমতায় থাকার পরও কিভাবে তাঁরা উগ্রবাদী আচরণ করার সুযোগ পায়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, হে জননী মরতে তো একদিন হবেই, বিশ্বে নিজ মাতৃভূমির সন্মান রক্ষার্থে এইসব জানোয়ারদের শেষ করে মরে যেতে চাই। এদের মত মূর্খ কুলাঙ্গারদের দমন করার জন্যে শুধু আপনার অনুমতি প্রয়োজন’।

(২) আল্লামা মামুনুল হকের বোনকে বিয়ে করার পর আইডি ফিরে পেলাম। আবার হবে লেখালেখি, জয় শ্রীরাম।

(৩) এই মামুনুল হকের মূল উদ্দেশ্য দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। কিছুদিন আগেও ভাস্কর্য এবং মূর্তি নিয়ে সে বিভিন্ন রকমের উস্কানিমূলক কথা বলে হিন্দুদের বিভ্রান্ত করেছে। বাংলাদেশে মোদীজির আগমনে সে আবারো হস্তক্ষেপ করেছে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, এই মামুনুল হক পাকিস্তান প্রেমী, খবর নিয়ে দেখুন, হয়তো এদের পূর্বপুরুষ পাকিস্তানী ছিলো। নয়তো ভারত-বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, এই দুই দেশের মধ্যে কোনদিন বিবাদ সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু এই মামুনুল হকেরা মোদীজির আগমনে এত হস্তক্ষেপ করার কারণ কি? --মূল কথা হলো এঁরা উগ্রবাদী, পাকিস্তান-প্রেমী, আর এরাই ওয়াজের নাম করে সাধারন মুসলমানদের উগ্রবাদিতে পরিণত করে। পাকিস্তান থেকে কোন উগ্রবাদী জঙ্গী আসতে চাইলে এরাই সর্বপ্রথমে অভিনন্দন জানাবে।

দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে, চাপা ক্ষোভ বিরাজমান। ঝুমন দাস আপনের মামলা প্রমান করে এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। তাই স্বচ্ছতার খাতিরে ঝুমন দাস আপন-কে মুক্তি দিয়ে দু:খিনি মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হোক।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test