E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বুদ্ধিজীবী না বুদ্ধিGB ?

২০২১ জুন ০৮ ১১:৪০:৫৫
বুদ্ধিজীবী না বুদ্ধিGB ?

শিতাংশু গুহ


কম্পুটারের কল্যাণে ‘জিবি বা জীবী’ কথাটা এখন সু-পরিচিত। ‘জিবি বা জীবী’ মানে গিগাবাইট। ইংরেজিতে GB। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী বা বুদ্ধিGB-রা আসলে কত জিবি/GB’-র? সিলেটে নাকি কেউ চৌধুরী হলে লোকে ঠাট্টা করে জিজ্ঞেস করতো, কত সুপারি গাছ-ওয়ালা চৌধুরী? অর্থাৎ বাড়িতে কতগুলো সুপারি গাছ আছে? যার যত বেশি সুপারি গাছ, তিনি তত বড় চৌধুরী? আমাদের বুদ্ধিজীবীদের যা অবস্থা, তাতে হয়তো তাঁদের এখন প্রশ্ন করার সময় এসেছে, তাঁরা কত ‘জিবি’র বুদ্ধিজীবী?

বুদ্ধিজীবীদের বহু প্রকারভেদ আছে, থাকা স্বাভাবিক। এটি নির্ভর করে তিনি কত ‘জিবি’-র বুদ্ধিজীবী। অর্থাৎ তাঁর ব্রেইনে কত ‘গিগাবাইট’ বুদ্ধি আছে! বিষয়টি অনেকটা সেলফোন বা কম্পিউটারের মত, অর্থাৎ, ধারণ ক্ষমতা কত? সেলফোনে আপনি পয়সা খরচ করে ‘স্টোরেজ’ বাড়াতে পারেন, কম জিবি’র বুদ্ধিজীবীরা তেমনি অন্যের থেকে ধার বা চুরি করে তাঁদের বুদ্ধি বাড়ান। যেমন, রাষ্ট্রপতি এরশাদ একদিন সকালে হটাৎ করে কবি হয়ে যান! কিভাবে? কারণ তিনি সৈয়দ আলী আহসান থেকে কয়েক গিগাবাইট বুদ্ধি ধার করেছিলেন!

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান কত জিবি’র বুদ্ধিজীবী? প্রশ্নটি এজন্যে যে, সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘ইংরেজী শিক্ষকদের চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকরা মেধাবী বেশি’। তাঁর এ মন্তব্য দেখে একজন বলেছেন, ‘সলিমুল্লাহ খান বড় হয়ে ফরহাদ মাজহার হবেন’। সলিমুল্লাহ খান অন্যত্র বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার যথেচ্ছা ব্যবহার করেছেন এবং ড: আনিসুজ্জামান বাংলা ভাষার কিছুই জানেননা! আসলে সলিমুল্লাহ খান যথেষ্ট মেধাবী, তাই তাঁর উচিত ভার্সিটি ছেড়ে মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করা?

ডাঃ জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরী বুদ্ধিজীবী না রাজনৈতিক, না ব্যবসায়ী সেটি বোঝার মত উন্নত GB-র বুদ্ধি সাধারণ মানুষের নেই, হয়তো তিনি ‘একের ভেতরে তিন’? বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা হয়তো যিনি বুদ্ধি বিক্রী করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন আর তা নেই, সশিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা এখন নিজে যা বুঝেন না, তা নিয়েও ফ্রীতে অন্যদের উপদেশ দেন্, বা সকল সাবজেক্টে তাঁরা পারদর্শী। ‘নাই দেশে ভেরেন্ডা বৃক্ষ’- আমাদের দেশে তাই বুদ্ধিজীবীর অভাব নাই? নিউইয়র্কে তো কয়েক মেগাবাইট বুদ্ধি নিয়ে ফ্রী সাপ্তাহিক পত্রিকায় দু’চার লাইন লিখে এখন বুদ্ধিজীবীতে গিজগিজ করছে।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা প্রায় সবাই এখন দেউলিয়া, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরিত্র মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হলেও কমবেশি উপরোক্ত দুই প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীর মত? ব্যতিক্রম আছে, সেটি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে হয়! এদের ‘মানবিকতা’ বা ‘আন্দোলন-আস্ফালন, বিবৃতি’ সবই সিলেকটিভ, সমাজে তাই এদের কদর কমতে কমতে ‘তলানীতে’ গিয়ে ঠেকেছে। একটি দেশের বুদ্ধিজীবীদের কাজ হলো, সরকার বা সমাজকে সঠিক পথ দেখানো, আমাদের দেশে সেটি হয়নি, প্রায় সবাই ‘দলদাস’ হয়ে সরকার বা সমাজের জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test