E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশের ই-মার্কেটকে ধ্বংস করেছে ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ 

২০২১ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৮:৩৮:২৯
বাংলাদেশের ই-মার্কেটকে ধ্বংস করেছে ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ 

মিজানুর রহমান রানা


বাংলাদেশের অনলাইন মার্কেট তথা ই-কমার্স ধীরে ধীরে নদীর পললের মতো গড়ে উঠার প্রক্রিয়ায় ছিলো। ই-মার্কেট সারাবিশে একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স মাধ্যম। ভোক্তারা দেখে-শুনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রাইস বা মূল্য সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে অবগত হয়ে হাতের কাছে তার চাহিদাকৃত পণ্যটি অনায়াসে পেতে ই-কমার্স মার্কেটে অর্ডার দিয়ে থাকে। ক্রেতা মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট না করে ই-কমার্সের মাধ্যমে অর্ডার দিয়ে পণ্য পেতে চায়।

এটি একটি বিশাল মার্কেটে ধীরে ধীরে রূপদান করার প্রক্রিয়ায় ছিলো। কিন্তু কিছু দুস্কৃতিকারী ও অর্থলোভী পিশাচের অন্যায্য কার্যক্রমে বাংলাদেশের ই-কমার্স ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। ধাক্কা খেলো শুরুতেই। যা কোনোভাবেই দেশের স্বার্থে মেনে নেওয়ার বিষয় নয়।

এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ-সহ কতিপয় অর্থগ্রাসকারী দুষ্ট ভুয়া প্রতিষ্ঠান। যারা মানুষের সাথে বিশাল প্রতারণা করে ই-মার্কেট সম্পর্কে বিশ^াসটাই নষ্ট করে দিয়েছে। এখন মানুষ অনলাইনে পণ্য অর্ডার করতে ভয় পায় এ সমস্ত স্বার্থলোভী কু-চিন্তার মানুষদের জন্য।

অথচ শুরুতে এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি করা গেলে হাজার হাজার মানুষ কোটি কোটি টাকার প্রতারণা থেকে বেঁচে যেত। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার খপ্পরে পড়ে মানুষ হারিয়েছে যেমন অর্থ, তেমনি হারিয়েছে বিশ^াস। ফলে ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী অন্য অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের এদের কারণে আজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ই-ভ্যালির পরিকল্পনা : ই-ভ্যালি শুরুতেই নানা অফার দেয় গ্রাহকদের। এর মধ্যে হচ্ছে ইভ্যালির ক্যাশব্যাক অফার। যেমন যদি আপনি ১০০ টাকার পণ্য কেনেন, তাহলে আপনাকে সমপরিমাণ টাকা অথবা তার চেয়ে বেশি টাকা ক্যাশ দেওয়া হয়। ক্রেতা ক্যাশব্যাকের ওই টাকার ৬০ শতাংশ ব্যালেন্স থেকে খরচ করতে পারে। বাকি ৪০ শতাংশ নিজ থেকে খরচ করার শর্ত রয়েছে। প্রতিযোগিতা কমিশন বলছে, এ ধরনের শর্তযুক্ত অফার প্রতিযোগিতা আইনের বিরোধী।

তবে সাধারণ গ্রাহকরা ইভ্যালির এসমস্ত প্রতারণাযুক্ত অফার বুঝতে পারে না। সরল মনে তারা এদের ফাঁদে পড়ে যায়। আর অগ্রিম বাবদ হাজার হাজার টাকা ইভ্যালিকে দিয়ে দেয়। কিন্তু ইভ্যালি ও ই অরেঞ্জ গ্রাহকদেরকে কালক্ষেপণ করাতে করাতে অতিষ্ঠ করে ফলে।

গ্রাহকদের কাছে ইভ্যালির দেনার পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাসেল এমন তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহকদের কাছে দেনার পরিমাণ ছিল ৪০৩ কোটি টাকা। গ্রাহকের এই টাকা কীভাবে ফেরত দেওয়া হবে, র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে ইভ্যালিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনাও ছিল রাসেলের।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, একটা ব্র্যান্ড তৈরি করে গুডউইল নিয়ে এক সময় ইভ্যালিকে দেশি-বিদেশী বড় কোম্পানির নিকট ইভ্যালি বিক্রয় করার পরিকল্পনা ছিলো রাসেলের। তা যদি করতে না পারতো তাহলে এক সময় দেউলিয়া ঘোষণা করে সাধারণ মানুষকে পথে বসাতো সে। এরকম প্রতারণা দায় অন্য ভালো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিতে হতো। মানুষের সাথে ইভ্যালির প্রতারণা স্বরূপ ই-কমার্স মার্কেটটি সমূলে নষ্ট হয়ে যেতো।

ইঅরেঞ্জের প্রতারণা : অনলাইন মার্কেটে সাধারণ মানুষের সাথে ই-অরেঞ্জ এক হাজার একশ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে মামলায় ই-অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান, মালিক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদসহ প্রতিষ্ঠানটির সব মালিককে আসামি করা হয়েছে।

গত ২৮ এপ্রিল থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকার পণ্য কেনার জন্য টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করার কথা থাকবলেও ই-অরেঞ্জ এক লাখ ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে। ভুক্তভোগীরা ই-অরেঞ্জের অফিসে গিয়ে পণ্য সরবরাহ চাইলে তারা কালক্ষেপণ করতে থাকে। কিন্তু গ্রাহকদেরকে কোনোপ্রকার পণ্য সরবরাহ করা হয়নি।

এ প্রতারণার দায় কে নেবে? যারা সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করে দেশে ই-কমার্স শিল্পকে শুরুতে ধ্বংস করে দিলো। হাজার হাজার বেকারের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিলো।

তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আর এর আগে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানসহ তিনজনকে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এখন দেখার পালা শেষ পর্যন্ত কোথাকার পানি কোন দিকে গড়ায়।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, বেষ্ট ই-কমার্স ও সম্পাদক ও প্রকাশক প্রিয় সময় ও চাঁদপুর রিপোর্ট।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test