E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগাছা-পরগাছা-অন্তঃকৃমি এবং আওয়ামী লীগ

২০২১ সেপ্টেম্বর ২২ ২২:৫৯:৪৩
আগাছা-পরগাছা-অন্তঃকৃমি এবং আওয়ামী লীগ

রহিম আব্দুর রহিম


চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর সকল প্রাণির মাঝে দুই ধরনের শোষক থাকে। এদের একটি প্রাণির বহিরাংশে, অন্যটিতে ভেতরাংশে। যা অন্তঃ এবং বহিঃকৃমি নামে পরিচিত। এই পরজীবি প্রাণিকোষরা মূল প্রাণির রক্ত শোষন করে বেঁচে থাকে। তবে আসল প্রাণটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। একইভাবে উদ্ভিদ জগতে যা পরগাছা হিসাবে পরিচিত।এই পরাগাছা মূল গাছটিকে আশ্রয় করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। এক্ষেত্রে মূল গাছটি আশ্রিত গাছের ডালপালায় ঢাকা পরে যায়। কৃষিবীদদের মতে ফসলের মাঠ যদি আগাছায় ভরে যায় তবে কৃষকের গোলা হয় ফসল শূণ্য। যে কারণে ফসল মাঠের আগাছা, মূল বৃক্ষের পরগাছা এবং প্রাণি রক্ষায় কৃমিনাশক ব্যবহার অনিবার্য। পৃথিবীর মানব সভ্যতায় যত কল্যাণকর কাজ হয়েছে, তার সিংহভাগই  রাজনৈতিকভাবে। আর্দশ সকল রাজনৈতিক দল ও দলের নেতারা যে কারনে কেউ ইতিহাসের নায়ক, কেউ আবার খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক একমাত্র পৃষ্ঠপোষক যেমন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, তেমনি এই দেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু একটি সূতোর অবিচ্ছেদ দুটি প্রান্ত। এই আওয়ামী লীগের আদর্শিক পতাকা তলে যুগে যুগে মহান ব্যক্তিদের আগমন যেমন ঘটেছে।তেমনি কুলাঙ্গারদের ভীড় সমানন্তরাল ভাবে হয়েছে।স্বার্থবাদী, সুবিধাভোগী, সুযোগসন্ধানী, টাউট-বাটপার কিংবা ধান্ধাবাজরা সুযোগ বুঝে অবাধে প্রবেশ করেছে আওয়ামী লীগের মত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে। ২০০৯ সালের পর এই প্রতিষ্ঠান ও বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠেছে প্রায় তিন শতাধিক ভূঁইফোড় সংগঠন। যেগুলোর নামের আগে এবং পরে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শেখ রাসেল, শেখ কামাল, শেখ জামাল, লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাকার শব্দ যুক্ত রয়েছে। এই সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সহযোগী, অঙ্গ বা মূল দলের উপজেলা, জেলা কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপদেষ্টা, পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে সংগঠনের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মিটিং, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, নেতাদের জন্ম, মৃত্যু দিবস পালনেও তাদের সিদ্ধহস্ত। অতিথি হিসাবে থাকছেন মূল দলেরই নেতা-কর্মীরাই। প্রচার পাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও তথা কথিত কিছু মিড়িয়ায়। যাকে রাজনীতি পসরা বললে ভুল হবে না। ভূঁইফোড় সংগঠনগুলো এখন আওয়ামী লীগের পরগাছায় পরিনত হয়েছে। যা এক সময় আওয়ামী লীগের মত প্রতিষ্ঠানকে ঢেকে ফেলবে,সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের জানা মতে আওয়ামী লীগের মত প্রাচীন এবং আদর্শিক প্রতিষ্ঠানটির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন রয়েছে দুইটি। তার একটি জাতীয় শ্রমিক, লীগ,অন্যটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সহযোগী সংগঠন আটটি। এর মধ্যে, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎসজীবি লীগ, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ,বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগ ও বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবকলীগ।এর বাইরে দুটি ক্রিয়েটিভ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর একটি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, অন্যটি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ। বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের বাইরে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে ওঠা সকল সংগঠনই অবৈধ।

উল্লেখ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে কোন সংগঠন করতে হলে, "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট" এর অনুমোদন সাপেক্ষে সংগঠন করা যাবে।অপর দিকে মহান মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কোন সংগঠন করতে হলে, "জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এর অনুমোদন থাকতে হবে।, অথচ দেশের বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে একটি সার্কাস দল এবং দেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একেবারে সস্তা রাজনৈতিক অঙ্গনে ঠেলে দেওয়ার অপপ্রয়াস চলছে। যার লেগাম টানার সময় হয়েছে বলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক,সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের সম্প্রতি একটি ভূঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "আপনারা কেউ লীগ নামসর্বস্ব ভূঁইফোড় সংগঠনে অতিথি হয়ে যাবেন না।"

এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছেন।কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নির্লজ্জ বেহায়াপনা চলছেই,কে কার কথা শোনে! এর আগেও ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহল ভূঁইফোড় সংগঠনের তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কাজ হয় নি।তবে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওলামা লীগ নিষিদ্ধ করায় ঘোষণাটি কাজে লেগেছে। এখন আর ওলামা লীগের অস্তিত্ব নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি ভূঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে হার্ড লাইনে থাকার পরও দেশের আনাচে কানাচে গজিয়ে ওঠছে ভূঁইফোড় সংগঠন।চলছে তাদের কর্মকান্ড। প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রচার-প্রচারণা। আওয়ামী লীগ তো বিশৃঙ্খল কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, তবে কেনো এমনটা হচ্ছে?

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সংগঠক।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test