E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাবনার বিপন্ন নদী ইছামতিকে বাঁচাতে হবে

২০২১ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৪:২৪:৫১
পাবনার বিপন্ন নদী ইছামতিকে বাঁচাতে হবে

রণেশ মৈত্র


পাবনার ইছামতি অঢেল সম্পদের, সীমাহীন ঐতিহ্যের এবং বিশাল গৌরবের ঐতিহ্য। নদীটির উৎপত্তির ইতিহাস সঠিকভাবে জানা গেলেও যতটুকু জানতে পেরেছিঃ

নদীটি প্রকৃতিগতভাবে উৎপন্ন হয় নি। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে বাংলার তৎকালীন রাজধানী জাহাঙ্গীর নগরের যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে বাংলার শাসনকর্তা ঈশা খাঁর নির্দেশে তদানঈন্তন প্রাদেশিক শাসন কর্মকর্তা ইছামতি নদীটি খনন করেন । তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থেই নদীটি খনন করেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থেই তাঁরই নামানুসারে এ নদীর নামকরণ করা হয় ইছামতি (সূত্র বিবৃতি, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯) সাংবাদিক আবদুল হামিদের নিবন্ধ) যদিও কোন ইতিহাস গ্রন্থে বা গুগল্স সার্চ করে তা প্রমাণ পেলাম না। তবে ইছামতি পদ্মার শাখা নদী এ নিয়ে বিতর্ক নেই।

বিগত শতাব্দীর প্রথম দিকে পাবনার শিতলাই জমিদারের লালরঙা বহু কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ী, যেটা শীতলাই জমিদারের বাড়ী বললে সবাই একডাকে চিনতো (বর্তমানে এডরুক লেবরেটরীর কারখানা ও প্রধান কার্যালয়), পদ্মার তীব্র ভাঙনে ঐ বিশাল ভবন (এবং কয়েক একর জমিতে নানাবিধ ফুল বাগান, বুদ্ধদেবের শ্বেত পাথরের বিশাল মূর্তি ও সৌন্দর্য্য বর্ধক বৃক্ষরাজি শোভিত বাগান) পদ্মার তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশংকার কথা তৎকালীন প্রকৌশলীগণ জানালে জমিদার পরিবার কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে শক্ত গাঁথুনি দিয়ে পদ্মার ইছামতীর সংযোগ স্থল বন্ধ করে দেন। তার পর দ্মা-ইছামতী তাদের সংযোগ আজ পর্য্যন্ত ফেরত পায় নি। ফলে বর্ষাকালেও যখন পদ্ম ফুলে ফেঁপে ওঠে, তখন ও আজকার ইছামতী পদ্মার এক চামচ জলও পায় না। এই সংযোগ মুখটি পাবনা পৌর এলাকারপূর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। তখন পদ্মার ভাঙ্গন এতই তীব্র হয়েছিল যে পাবনা শহরের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছিল। এতৎসত্বেও বহুদিন পর্য্যন্ত বর্ষাকালে প্রতিবছর পদ্মার ঘোলা জল ইছামতী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুড়াসাগরে মিলিত হতে পাবনার সরাসরি পশ্চিমে।

আবার যমুনার সংযোগকারী হুড়াসাগর দিয়ে বর্ষাকালে যমুনার কালো জল ইছামতী দিয়ে পদ্মায় গিয়ে মিলিত হতো। এভাবে বছরের মধ্যে প্রায় ছয় মাস ইছামতী বিশাল প্রশান্ত এক নদীতে পরিণত হতো। ছোট ছোট লঞ্চ, গহনার নৌকা, পণ্যবাহী নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা পাবনা-বেড়া নৌরুটে ঐ ছয় সাত মাস চলাচল করতো।

আমার গ্রামের বাড়ী পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। প্রায় ১৪ বছর বয়স পর্য্যন্ত ঐ গ্রামে বাস করেছি-রোজ বন্ধু বান্ধব মিলে বারমাস স্নান করেছি। আমাদের বাড়ীটি ছিল ইছামতীর তীরে। হাঁটাপথে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে। তাই ইছামতীর সাথে আমার প্রাণের সম্পর্ক। গহনা নৌকায় চড়ে বাল্যকালে কতদিন যে ঐ নদী দিয়ে বাবার সাথে পাবনা বেড়াতে এসেছি আবার পাবনা থেকে ফিরে বাড়ী গিয়েছি এখন আর তা মনে নেই। দিনে কমপক্ষে চারবার ইছামতীর সাথে সাক্ষাত হতো নিয়মিত। প্রথমত: স্নানের নময়; ত্বিতীয় এবং তৃতীয়ত আতাইকুলা হাই স্কুলে পড়তে যাওয়া ও আসার সময় এবং বিকেলে নদীর ধারে খেলাধুলার সময়।

১৯৪৭ এ ১৪ বছর বয়সে চলে এলাম পাবনা শহরে স্থায়ীভাবে। বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছিল রাধানগরে। সেখান থেকে গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে পড়তে যাওয়া আসার সময় বাজার করতে যাওয়ার সময় ও সাক্ষাত হতো ইছামতীর সাথে। অত:পর ঐ বাসা ছেড়ে অপর পাড়ে অন্য বাসায় এলাম। ভর্তি হলাম পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। তখনও যাতায়াতের সময় নতুন ব্রীজ দিয়ে ইছামতি দর্শন হতো রোজ দুবার। তাই শৈশব থেকে যৌবন পর্য্যন্ত ইছামতরি সাথে আত্মীয়তা-শুধু আমার নয়-পাবনা জেলাবাসী বেশীর ভাগ লোকেরই। নারী পুরুষ নির্বিশেষে।

কোথায় গেল সেই ইছামতী?

আমাদের নিত্যদিনের সাথী সেই ইছামতী আজ অদৃশ্য। স্থান পেয়েছে স্মৃতির পাতায়। অভ্যাস বশত: ইছামতেিক দেখতে যাই-হতাশা হই-বেদনার্ত হই কারণ সেই প্রিয় ইছামতী আজ আর নেই। তাকে গলা টিপে হত্রা করা হয়েছে।
মনে পড়ে, আজ থেকে ৫০ বছর আগেও এ নদীতে পণ্যবাহী যাপত্রীবাহী নৌকা চলাচল করেছে। নানা সাজে সাজিয়ে অসংখ্য লম্বা কিন্তু সরু সরু বাইচের নৌকায় নেচে নেচে গান গেয়ে গ্রামের তরুণেরা নৌকা বাইচ খেলেছে। বছর বছর মহা সমারোহে নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতাও হয়েছে হয়েছে কোন বিশিষ্ট জনদের দিয়ে নৌকা বাইচের প্রতিযোগিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

দেখেছি আশ্বিন মাসে (অক্টোবর) দুর্গা পূ জা উপলক্ষ্যে যখন হিন্দুরা প্রতি বাড়ীতে কমপক্ষে ১০/১৫ টি করে নারকেল কিনে নাড়– বড়ি বানাতেন প্রতিটি পূজা ম-পে পাঁচদিনব্যাপী দুর্গাপূজার ঘটে বা নৈবেদ্যের জন্য ২৫/৩০ টি করে নারকেল কিনতেন-কিনতেন ১০/১৫ টা করে নারকেল দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পরে দিনকয়েকের মধ্যে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষ্যে-তা তাঁরা কিনতেন নতুন ব্রীজের উত্তর পাশে ইছামতী দিয়ে নৌকায় আনা স্তুপীকৃত নারকেল ডিপো থেকে পাইকারী দামে। আজ সে সবই অতীতের বিস্মৃত বিষয় মাত্র।

ইছামতী হত্যাকারী কারা?

ইছামতী কি আপন মনেই শীর্ণকায় হয়ে পড়েছে? নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হয়তো তাই ভাবেন। এই ভাবনা সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। বস্তুত: যখন শীতলাই জমিদার বাড়ী এবং পাবনা শহর নদী গড়ে বিলীন হওয়ার উপক্রম থেকে বাঁচাতে মজবুত বাঁধ দেওয়া হলো তখন থেকেই পদ্মার শাখানদী ইছামতীতে পদ্মার জল আসা বন্ধু হয়ে গেল। অপরপক্ষে পলি পড়ে বা বাঁধ দিয়েই হোক, যমুনার জল বর্ষাকালেও ইছামতীতে আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে শ্রোতস্বিনী ইছামতী শ্রোতহীন এক বন্ধ জলাশয়ে পরিণত হলো। সুযোগ গ্রহণ করতে থাকলো ভূমিদস্যুরা। ধীরে ধীরে সইয়ে সইয়ে সুকৌশলে তারা প্রথমে নদী তীরে মাটি ফেলে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরতে থাকলো ইছামতীর উভয় পাড়ে। নদীর প্রস্থ কমে আসতে লাগলো। এইবার ঐ খুনীরা বিশাল বিশাল অট্টালিকা গড়ে তুললো নদীর উভয় তীরে যেন সেখানে ইছামতীর অস্তিত্ব কোন দিন ছিল না।

এর আগে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে নদী তীরবর্তী ঐ জমি নি নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়ে মালিক বনে গেলেন। অথচ নদী বিল প্রভৃতি জলাশয়ের মালিক আইনত: সরকার-কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়। এই প্রক্রিয়া বছর বছর বিনাবাধায় চলতে চলতে খুন হয়ে গেল-অপমৃত্যু ঘটে গেল ইছামতীর। আজ ইছামতীর দিকে তাকালে একটি নোংরা পাগাড়ে, দুর্গন্ধময় নর্দমা বলে মনে হয়। দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনও ইছামতীতে অতীতে ছিল বাৎসরিক অনুষ্ঠান-আজ আর তা নেই্

যাঁরা খতিয়ান করে মালিক হয়ে গেলেন তাঁরা ছাড়াও অপর অনেকে ভূয়া আমলানামা তৈরী করে আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে স্বত্ব প্রতিষ্ঠার দাবীতে মামলা দায়ের করে সরকারি উকিলের বা কখনও কখনও অসৎ বিচারককে হাত করে ভূয়া ডিগ্রী অর্জন করে মালিক বলে যান। অতি ধূর্ত কেউ কেউ আবার এই দুইভাবে অর্জিত মালিকানার স্থায়ীত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে তা হয় নিজের আত্মীয় স্বজন বা ভিন্ন লোকদের কাছে বিক্রী করে দেন। ক্রেতারা দলিলমূলে নাম খারজ করে প্রশ্নাতীতভাবে ঐ জমির ‘বৈধ’ মালিক বনে যান। এমন ঘটনা জেলা ও উপজেলা শহরগুলিতে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ঘটেছে। যেমন পাবনা, বেড়া ও সাঁথিয়া।

ঐ মালিকেরা সর্বদা সরকারি দলের নেতা-কর্মী বনে যান। সরকারি কর্মকর্তারাও তাঁদের সাথে সম্মানজক আচরণ করেন। ফলে সমাজে এই ভূমিদস্যুদের প্রভাব ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে থাকে। এর পর তারেদ আর পায় কে? পাবনার ইছামতী এই ভুমি খোকোদের অসহায় শিকার।

কিন্তু ডি.এস. খতিয়ান

এই খতিয়ানকে নির্ভূল বলে উচ্চতম আদালতও স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাই ঐ খতিয়ানে উল্লেখিত এলাকার মূল মালিক কে তা স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে। এই খতিয়ানকে পরিবর্তন করার অধিকারও কারও নেই। মালিকের বৈধ ওয়ারিশরা মালিকের মৃত্যুর। পাবেন এস আেিনর বিভাদ।

তাই ডি.এস. খতিয়ানে বর্ণিত এলকাই হচ্ছে ইছামতীর দৈর্ঘ ও প্রস্থসংক্রান্ত চড়ান্ত এলাকা। সকলকেই এই এলাকাঅভ্রান্ত বলে মানতে হবে।

ড.এস. খতিয়ানভূক্ত সম্পূর্ণ এলাকা যতদিন ইছামতী নদীর এলাকা ছিল ততদিন ইছামতী দৈর্ঘ প্রস্থে এবং গভীরতায় ছিল বিশাল। কিন্তু ঐ খতিয়ানকে আড়াল করে যারা পরবর্তীতে ষাটের দশকের জরিপকালে জরীপ কর্ককর্তাদের অনেককে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে নিজ নিজ নামে এস.এ রেকর্ড (ষাডের দশকে) এবং পরবর্তীতে আর.এস. খতিয়ান নিজেদের নামে অবৈধভাবে লিপিব্ধ করিয়ে ভোগ দখল করছেন তাঁরা যেই হোন কেন-তাঁরা সবাই আইনত: অবৈধ দখলদার। অপরাধী শাস্তিযোগ্য অপরাধে।

সময়মত জনতা এর বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে না পারলেও ধীরে ধীরে এই অবৈধ দখল দারদেরকে উচ্ছেদ, অবৈধ স্থাপনাগুলি ভাঙ্গা, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ইছামতির আগের এলাকা পূরোপূরি পুনরুদ্ধার, নদী খনন এবং ইছামতীর সাবেক রূপ ফিরিয়ে আনতে গণ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বছর কয়েক আগে হাইকোর্টে মামলা করলে হাইকোর্ট তার প্রদত্ত রায়ে স্পষ্টত: উল্লেখ করেন ডি.এস. খতিয়ান অপরিবর্তন যোগ্য সুতরাং ঐ খতিয়ানে বর্ণিত এলাকার কোন অংশ কেউ দখল বা সেখানে কোন স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে তা সম্পূর্ণত: অবৈধ। সুতরাং ঐ অবৈধ দখল থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকা উদ্ধার করতে সকলবে-আইনী দখলদারকে উচ্ছেদ বৈধ এবং তা করার নির্দেশও আদালত দিলেন । আদালতের বিবেচনায়নদীরও প্রাণ আছে। সুতরাং প্রাণহানিও সম্পূর্ণ অবৈধ ও মাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তাই উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবৈধ সকল নদীর অবৈধ দখলদার ও অবৈধ স্থাপনা থেকে উদ্ধার করে ডি.এস. খতিয়ান অনুযায়ী নদী সমূহের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা উদ্ধার করা হোক।

পাবনাতে ইছামতী উদ্ধার আন্দোলন

মুক্তিযুদ্দের পরবর্তীকালে ইছামতী নদী পুনরুদ্ধার ও কননের দাবীতে সৃষ্ট আন্দোরন ও লেখালেখির ফলে কাজ শুরু হয় একটি অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গা ও সামান্র খনন শুরুর মধ্য দিয়ে। এ ব্যাপারে তদানীন্তন সরকার কিছু অর্থও বরাদ্দ করেছিলেন। কিন্তু দু’একদিন কাজ করার পরেই অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়-প্রশ্ন ওঠে তৎকালীন একজন নেতার এ ব্যাপারে সততা নিয়ে।

কাজ থামার সাথে সাথে আন্দোলনও থেকে যায় মূলত: হতাশা ও প্রভাবশালী নেতাটির ভয়ে। এরপর চলতে থাকে বহু বছর ধরে সকল জাতীয় পত্রিকায় ইছামতি নিয়ে লেখালেখি। দীর্ঘকাল ধরে এই প্রক্রিয়া চলার পরে স্বাভাবিক কারণেই তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছর হলো নতুন কর্মীরা, পরিবেশ আন্দোলন ও কোন কোন এন.জিও এ আন্দোলন শুরু করেন। স্থানীয় একজন পত্রিকা সম্পাদকের নেতৃত্বে “ইছামতি উদ্ধার কমিটি” বা এই জাতীয় নামে গঠিত একটি সংগঠনের নেতৃত্বে। এই শুভ প্রচেষ্টায় সরকি হন অনেক সাধারণ মানুষ। প্রধানত: পাবনা শহরের। অনেক সভা-সেমিনার-আলাপ-আলোচনা-কর্তৃপক্ষের সাথে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে আলোচনা ও স্মারক লিপি প্রদান প্রভৃতি করার পরেও যখন কাজ তেমন একটা হলো না তখন সকলে বাধ্য হলেন আন্দোলনের পথ ধরতে। করোনার জন্য তাতেও অসুবিধা-কিন্তু তাতেও থেমে থাকছে না রাজপথের সমাবেশ ও মানববন্ধন।

সরকারি কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল জানা যায়, ২০০৩ সালে, আজ থেকে ১৮ বছর আগে তৎকালীন জেলা প্রমাসক একটি ইচামতী নদী জরীপ কমিটি গঠন করেন যার সদস্য করা হয়েছিল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব (আহ্বায়ক) পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করেন। জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সড়ক ও জনপথ, এলকিইডি ও সদর ভূমি াফিসের প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

১৯২২ সালে প্রকাশিত ডিএস মৌজা ম্যাপ অনুযায়ী জরীপ করা হয়-চিহ্নিত করা হয় নদীর মূল প্রশস্ততা ও নদীর পরিসর। জরিপকালে বেরিয়ে আসে অনেক অবৈধ দখলদার বিভিন্ন অসৎ উপায় অবলম্বন করে ১৯৬২ সালের এস এ রেকর্ড ও সর্বশেষ আর এস রেকর্ডে তাদের নামে জাল কাগজপত্র তৈরী করে ঐ খতিয়ানগুলিতে নিজেদের নামতুলে নিয়ে ‘বৈধ’ মালিক সেজে বসে আছে। সে সময় জরীপ দল ২৮৫ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা, মৌজার ট্রেসিং ম্যাপ তৈরী ও স্পষ্টভাবে অবৈধ দখলদারদের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৯ ডিসেম্বর, ২০০৩ সালে জে.প্র;/পাব/রাজস্ব/জরীপ/২০০৩/১০(৮) নং স্মারকপত্র তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করেন। ইছামতীকে নিয়ে তখন একটি মাষ্টার প্ল্যানও তৈরী হয়েছিল। ঐ প্ল্যানের মধ্যে ছিল অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, নদী খনন, গাইড ওয়াল নির্মাণ নদী প্রশস্ত করণের পর তার দুই ধারে ওয়াকওযে নির্মাণ করে শহরবাসরি বৈকালিকও সকালের ভ্রমণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উদ্ধার, উভয় পাশে বৃক্ষরোপণ ও মানুষের ঐ সৌন্দর্য্য উপবোগ বা বিশ্রামের জন্যে বহু সংখ্যক ইট সিমেন্টের বড় বেঞ্চ নির্মাণ। কিন্তু ঐ পর্য্যন্তই। ইতোমধ্যে ইছামতী নামক খালটিতে মরা গরু, বাছুর, কুকুর, বেড়াল, গোটা পৌর এলাকার বর্জ্য ফেলতে ফেলতে নদীর চিহ্নটুকুও হারিয়ে যেতে বসেছে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, মানুষ রোগক্রান্ত হচ্ছে।

জপ্রতিনিধিদের ভূমিকা

তাঁরা, হামেশাই বলে থাকেন বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। তাই এ আন্দোলন বা দাবী হয়তো তাঁদের কাছে অপ্রযোজনীয়। মাঝে বিগত ৩০ মার্চ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান প্রথম শুরু হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মাত্র তিন দিন যেতে না যেতেই ১ এপ্রিল তা স্থগিত করে দেওয়া হয় অবৈধ দখলদার ও জনপ্রিতিনিধিদের চাপে। এক মাসের জন্য।

সেই যে বন্ধ হলো, তার আর যেন শেষ নেই। প্রত্যাশিত ছিল জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগী হয়ে কাজ শুরুর তাগিদ দেবেন, কাজ ঠিকমত হচ্ছে কি না তার নিয়মিত তদারকি করছেন কিন্তু তা হচ্ছে না। প্রশাসনিক তৎপরতাও দৃশ্যমান নয়।

কিন্তু জনগণ থেকে কে থাকবেন না

এত কিছু প্রতিকূলতা সত্বেও মানুষ কিন্তু থেমে নেই-থেমে থাকবেনও না। তাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন-আন্দোলনকে দিনে দিনে তীব্রতদর করে তুলবেন। এ আন্দোলন সরকার-বিরোধী নয়। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতায় থেকে নামানোরও নয়। আন্দোলনটি একান্তই দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের। কারণ ভূক্তভোগী তাঁরাই ঐ বিশিষ্ট জনেরা বা অর্থপৃধুরা বা অবৈধ দখলদারেরা নন। তবুও আন্দোলনটির সাফল্য যেমন সাধারণ মানুষের তেমনই আবার ঐ বিশিষ্টজন ও তাদের এ বংশধরদের উপকারে আসবেন। মনে রাখুন ডি.এস খতিয়ান অনুযায়ী দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ, গভীরতা সব ঠিক হতে হবে। আজ হোক এ আন্দোলনের সাফল্য অনিবার্য্য পরিপূর্ণ সংহতি জানালাম ইছামতীকে পুনরায় রক্ষা করে তোলা আন্দোলন, তার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার, রবীন্দ্রনাথের ইছামতীকে পুনিজ্জীবনের গণ আন্দোলনের প্রতি কবির উন্নন, নৌ চলাচল, মৎস স্বল্প ব্যায়ে নদীপথে চলাচল এবং পরিবেশ উন্নয়নের স্বার্থে হাইকোর্টের রায়ের সমর্থনে।

লেখক : সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test