E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা জয়তু শেখ হাসিনা

২০২১ সেপ্টেম্বর ২৭ ১৬:২৩:১১
শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা জয়তু শেখ হাসিনা

এম. আব্দুল হাকিম আহমেদ


মহাকালের মহানায়ক রাজনীতির মহাকবি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। শৈশব- কৈশোর থেকেই তিনি দেখেছেন পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রাম মুখর জীবন। তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি পরিবার থেকে বাবার হাত ধরে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সংগ্রাম মূখর বরেণ্য দিনগুলিতে ছাত্রলীগের কর্মী ও নেতা হিসেবে। ১৯৪৭ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর সবুজ শ্যামল গাছপালা, পাখি ডাকা, নদী-নালা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কোল আলো করে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ২৮ শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিনে শুভ কামনা রইল, তিনি যেন শতায়ূ লাভ করেন। বাংলাদেশ যেন দীর্ঘদিন তার সেবা পায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে স্বপরিবারে পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়োগান্তক অন্তর্ধানের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী, আশ্রয়-প্রশয় দাতা, নেপত্যের প্রধান নায়ক, প্রধান বেনিফিশিয়ারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সব হারানো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে এক বৃষ্টিস্নাত বিকেলে ফিরে আসেন দেশের মাটিতে। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের ৩ মাস পূর্বেই দিল্লিতে অবস্থান কালে ১৯৮১ সালে ১৩-১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সর্ব্বসম্মত ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পৃষ্ট ক্ষত-বিক্ষত বহুধাবিভক্ত নেতৃত্বহীন আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শক্ত ভাবে। সেই থেকে শেখ হাসিনা দলের ভেতরে ও বাইরের বিশাল ও প্রচন্ড বৈরি পরিবেশ, জাতি ও দেশ বিরোধী ক্ষমতাসীন দেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের বিদেশী এজেন্টদের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র মোবাবেলা করে ধ্বংসপ্রায় আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজিয়ে দলটিকে আবার দেশের সবচেয়ে শক্তিধর রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

পুরো আশির দশক জুড়ে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সব রকম আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা হিসেবে আবির্ভূত হন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। এ যেন সেই বঙ্গবন্ধুর আয়ুব-ইয়াহিয়া পাকিস্তানী জান্তা বিরোধী আওয়ামী লীগ। নব্বইয়ের গণঅভ্যুথানটি ছিল সম্পূর্ণ ভাবেই আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক প্রচন্ড আন্দোলনের ফসল। সেখানে রক্ত ঝরেছে দলের হাজার হাজার কর্মীর। শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদে, ১৯৯১ সালের ৫ম সংসদে ও ২০০১ সালের ৮ম সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে সংসদের ভিতরে ও বাইরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংসদীয় রাজনীতি ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালী জাতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফিরে পায় একাত্তরে ছিনিয়ে আনা বিজয়ের স্বাদ।

১৯৯৬-২০০১ প্রথম বার তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে খুব সফল ভাবে দেশ পরিচালনা করেন। যথেষ্ঠ দায়িত্বশীল, দূরদর্শিতাপূর্ণ নেতৃত্ব এবং জনদরদী নেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে এক সম্ভবনাময় দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করে তোলেন। ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা সামরিক বে-সামরিক স্বৈরাচার প্রসবিত একুশ বছরের ক্লেদ, গ্লানি ও জঞ্জাল সরিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনার কাজে হাত দেন। ভারতের সাথে ঐতিহাসিক পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তিসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক কর্মকান্ড সম্পাদন করেন। কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া। দেশকে ক্ষুধামুক্ত করে উদ্ধৃত্ত খাদ্য শস্যের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অনেক দুর এগিয়ে যান। বিদ্যুৎ, গ্যাস, শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে দেখান সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কিন্তু ২০০১ সালের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন-লতিফ-সায়েদ গং পরিচালিত সাধারণ নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হয় একাত্তরের পরাজিত শক্তির এদেশিয় এজেন্ট বিএনপি-জামাত চার দলীয় ঐক্য জোটকে।

শেখ হাসিনার অর্জিত সাফল্য গুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। দেশকে জঙ্গীবাদের অভয় অরন্যে পরিনত করে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালিত করে। শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার জন্য ঘটানো হয় ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট নারকীয় হত্যাকান্ড; খুন করা হয় আইভি রহমান সহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পরম করুনাময়ের অশেষ দয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। সেই সঙ্গে বেঁচে থাকে দেশের কোটি মানুষের আশা আকাঙ্খা।

অনুমিত ভাবেই ধারাবাহিক তৃতীয় বারের মত এবং দেশের ইতিহাসে চতুর্থ বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে দেশ সেবার সুযোগ পেয়ে ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেবা দিয়ে জাতির মননে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নের বীজ বপন করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার যেমন বঙ্গবন্ধু তেমন উন্নত বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার পর্যায়ক্রমে রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ‘ব’ দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়াও বিশ্বমহামারী কোভিড-১৯ এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে সৃষ্ট ভারসাম্যহীনতা থেকে উত্তরণের জন্য শেখ হাসিনার সরকার ঘোষণা করেছে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ। জনগণ এখন বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকা পাচ্ছে। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও বিকাশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার মিছিলে এগিয়ে চলেছে অদম্য গতিতে। এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনা একবিন্দুতে মিলিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা মানেই স্বপ্ন, শেখ হাসিনা মানেই এগিয়ে যাওয়া। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা নিজের বিচক্ষণতা আর দূরদর্শিতা দিয়ে নিজেকে শুধু দক্ষিণ এশিয়ারই নয় বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর ও জনপ্রিয় নেত্রী এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

মহামারি করোনা যখন সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৬ তম সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে এবার নিয়ে ১৭ বার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জাতিসংঘ পাকিস্তানী গণহত্যাকে ‘মানব ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়’ আখ্যা দিয়ে ৭ কোটি বাঙালীর পাশে দাড়িয়েছিলেন। পাশে ছিলেন প্রাণ ভয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ শরনার্থীকে সাহায্য করেও। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরের বছরই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির তৎপরতা শুরু করলে তাতে বাধ সাধে পাকিস্তান। জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্ররোচনায় চীন ভেটো দিলে সদস্য পদ লাভে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৭৩ সালেও।

পরে অবশ্য অসাধারণ দক্ষতায় এ সমস্যা মোকাবিলা করেন বঙ্গবন্ধু। ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৭৪, বাংলাদেশ সময় ভোর ৪ টায় বাংলাদেশকে ১৩৬ তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। এর ঠিক এক সপ্তাহ পরে আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আমাদের মহাননেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের ২৯ তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বাংলা ভাষা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালী ও বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ মর্যাদায় আসিন করেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থায় বাংলায় উচ্চারিত এ ভাষণটি আজও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। জাতিসংঘ কর্তৃক শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন মর্যাদাপূর্ণ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক।

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আজ থেকে ২৬ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ২৪ শে অক্টোবর জাতিসংঘের ৫১ তম অধিবেশন থেকে আজ অবধি ২০২১ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর ৭৬ তম অধিবেশনে মোট ১৭ বার বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাড়ানোর পথ দেখিয়েছেন। গত ২৪ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ শুক্রবার দিবাগত রাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬ তম অধিবেশনে শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বলেছেন, “যতদিন বেঁচে থাকবো, মানুষের কল্যাণের জন্য নিজের জীবনকে আমি উৎসর্গ করেছি, মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে।” বিশ্ব নেতাদের বিবেচনার জন্য তিনি তার ভাষণে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এগুলো হচ্ছে : এক. কোভিডমুক্ত বিশ্ব গড়তে সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা; দুই. ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, ক্ষতিপূরণ এবং টেকসই অভিযোজনে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর, তিন. করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তায় জন্য ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেট ও শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করা; চার. উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য আরো প্রণোদনাভিত্তিক কাঠামো সৃষ্টি; পাঁচ. কোভিডে ক্ষতিগ্রস্থ অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা; এবং ছয়. রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো জোরালো ভূমিকা রাখা ও সহযোগিতা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির অন্যতম। জিডিপিতে বিশ্বে ৪১ তম। গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ থেকে ২০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতের বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশসহ আরো কিছু দেশে উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে তা ধরে রাখতে হলে এবং পেছনে পড়ে থাকা দেশগুলোকে এগিয়ে আনতে হলে অনেক বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে বৈশ্বিক উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে।

বর্তমান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। বাংলাদেশে হাজারো বাংলা ভাষাভাষী পন্ডিত এসেছেন। বিশ্ব জয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ-অমর্ত্য সেনদের মতো বাঙালিও। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আগে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না, যিনি বাংলা ভাষাকে বিশ্বপরিসরে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে প্রথম বাংলা ভাষা পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাঙ্গনের কোথাও তিনি বাংলায় বক্তব্য দেননি। ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। নোবেল পুরস্কার পাওয়া দ্বিতীয় বাঙালি তিনি। তিনিও তাঁর বক্তব্যটি দিয়েছিলেন ইংরেজিতে। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। বাঙালি ড. মুহম্মদ ইউনূস তার নোবেল বিজয়ীর বক্তব্যেও বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেননি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুই প্রথম ব্যক্তি যিনি গোটা বিশ্বের সামনে প্রথমবারের মতো বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। যার ধারাবাহিকতা এখন কন্যা শেখ হাসিনা বজায় রেখেছেন। জাতিসংঘের ৭৬ তম অধিবেশন সেপ্টেম্বর-২০২১ এ যোগদান করে দেশের উনয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য ভূয়সী প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি ‘ক্রাউন জুয়েল’ বা ‘মুকুট মণি’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিয়ে নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে তাঁকে এ উপাধিতে ভূষিত করে আর্থ ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্ক। শুধু মুকুট মণি উপাধিই নয়, বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়নে ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে ওই অনুষ্ঠানে।

ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্স অধিবেশনে উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রীর অবদান উল্লেখ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আমরা আপনার কথা শুনতে চাই, বিশেষ করে এজন্য যে আমরা যখন পৃথিবীর দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অগ্রগতি বিশ্লেষণ করি যা প্রতি বছর জাতিসংঘের টেকসই উনয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক করে থাকে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অগ্রগতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে। তাই আমরা সে অর্জনের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই।
জাতিসংঘে এভাবেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছেন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি জাতিসংঘ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ,’ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইটিইউ' অ্যাওয়ার্ড’সহ সংস্থাটি থেকে বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বঙ্গবন্ধুকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ উপাধি দিয়েছেন উপস্থিত বিশ্বনেতারা।

ইতিহাসের স্বরূপ অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন; আর তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা জাতিসংঘ থেকে অতীতে বাংলাদেশ যা পেয়েছে, বর্তমানে যা পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা পাবে সবকিছুতেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অবদান থাকবে। শেখ হাসিনা ১৯ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে ২৪ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সদর দফতরে নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান ফুক, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র, সরকার প্রধানগণের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরের সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য প্রদান করেন। তারা শেখ হাসিনার যুগোপযোগী নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নর্থ লনের ইউএন গার্ডেনে একটি চারাগাছ রোপণ করেন। জাতিসংঘ বাগানে বিশ্বের কোনো নেতা স্মরণে এই প্রথম একটি বৃক্ষ রোপণ করা হলো। বৃক্ষের পাশেই একটি বেঞ্চ রাখা হয়েছে, সেই গাছের ছায়ায় পরিশ্রান্তরা একটু বিশ্রাম গ্রহণের অভিপ্রায়ে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়ার্কে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে লটে নিউইয়র্ক প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগে দ্বি-পক্ষীয় আলোচনার সময় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের উচ্ছাসিত প্রশংসা করে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো জাতিসংঘেরও অগ্রাধিকার।”

২০৩০ সাল নাগাদ বর্তমান অর্থনীতির ধারা অব্যহত থাকলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৬ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশ এখন বিরাট সম্ভাবনাময় উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফলভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গণ্য। এমডিজিতে উন্নয়নের সাফল্যের পর এসডিজি বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা নিয়েই অদম্য অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের মানুষ জয় করেছে ক্ষুধা ও দারিদ্রকে। শেখ হাসিনা এ দেশকে, এ জাতিকে নিয়ে যাচ্ছেন সকল প্রকার উন্নতির চরম শিখরের দিকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা হবো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ও সমৃদ্ধশালী জাতির অংশ। ‘শুভ জন্মদিন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জয়তু শেখ হাসিনা’ ৭৫ তম জন্ম দিনে আপনার প্রতি রইল আমাদের অবিরাম শ্রদ্ধা, নিরন্তর শুভকামনা ও নির্মল ভালোবাসা।

লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test