E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দাঁড়কাকের গায়ে ময়ূরপুচ্ছ!

২০২২ এপ্রিল ২৭ ১৮:০৬:৫৯
দাঁড়কাকের গায়ে ময়ূরপুচ্ছ!

চৌধুরী আবদুল হান্নান


দাঁড়কাকটি উড়ে যাওয়ার সময় পেখম তুলে একদল ময়ূরের নাচ দেখে বড়ই মুগ্ধ হলো । সেও ময়ূরের দলেযোগ দিতে চাইল কিন্ত সে তো ময়ূরের মতো সুন্দর নয়, সে কুচকুচে কৃষ্ণ বর্ণের, অসুন্দর। অতি চালাক কাক মনে মনে বুদ্ধি এটে ঠিকই ময়ূরের পেখম কুড়িয়ে নিয়ে নিজের গায়ে লাগালো এবং যথারীতি ময়ূরেরদলে ভিড়ে গেল । ঈশপের শিক্ষণীয় এ গল্পে শেষমেশ দাঁড়কাকটির কি দশা হয়েছিল তা সকলের জানা ।

বেরসিক আমাদের মন্ত্রী মহোদয় আ ক ম মোজাম্মেল হক, তিনি ময়ুররূপী দাঁড়কাকগুলো একে একেচিহ্নিত করে কাকের আসল চেহারা উন্মোচন করে চলেছেন। জানা যায়, গত এক যুগে ১৫ সহস্রাধিক অ-মুক্তযোদ্ধাকে চিহ্নিত করে সনদ বাতিল করা হয়েছে। কয়েকজন সাবেক সচিব যারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণদায়িত্বে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দৃড়তার কারণে তাদেরও সনদ বাতিল করা সম্ভব হয়েছে ।

যাঁরা মৃত্যুঝুকি নিয়ে, জীবনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে ‘ ৭১ এ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন তাঁরা বীরমুক্তিযোদ্ধা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের সেই নি:স্বার্থ ও চরম ত্যাগের ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতি একটিস্বাধীন দেশ পেয়েছে। এর পেছনে আরও রয়েছে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সর্বোচ্চ ত্যাগেরমর্মযন্ত্রণার ইতিহাস ।

অপরদিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযাদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেযারা প্রকৃত মুক্তিযাদ্ধার আসনে বসতে চায় তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শত্রু , তাদের অপরাধ ক্ষমারঅযোগ্য। অন্যের হক যারা নষ্ট করে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও তাদের ক্ষমা করেন না ।

তবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাজ তো শুধু মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী অ-মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করা নয়, আরও কাজ আছে। সকলের বিচার করতে চাইলে কারও বিচার করা যায় না। বিচার মানে তো সবইআদালত পর্যন্ত গড়ানো নয়, কেউ যদি কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চায়, সেটাও এক ধরনেরবিচার ।

ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে চাইলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, টাকাআদায়ের মামলা না-ই করতে পারে কিন্ত তারা যে ভাতা গ্রহণ করেছে সরকার সেই দাবি কখনোই ছাড়তেপারে না, কারণ এ অর্থের হকদার কেবল মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদের উত্তরাধিকারীরা। ভাতা হিসেবেগ্রহণকৃত এই টাকার দাবি গেজেটভূক্তির মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। পরিষোধ না করা পর্যন্তপ্রজন্ম পরম্পরায় এ ঋণের দায় তাদের বহন করে যেতে হবে এবং মানুষ জানবে তারা অনৈতিকভাবেপ্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থে ভাগ বসিয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ২০১৪ সালে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ারপর পরই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন — “যারা মুক্তিযোদ্ধা নন তারা কেন মুক্তযোদ্ধার সনদ নেবেন ?”

মাননীয় মন্ত্রী তাঁর কথার মর্মার্থ অনুযায়ী অসংখ্য অ-মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছেন এবং এপ্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন ।তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ” ৎঅ-মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলছে , এটি অব্যাহত থাকবে ।”

মন্ত্রী মহোদয়ের কথায় আমরা আশার আলো দেখি। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হচ্ছে তো কি হয়েছে ? আমাদের প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এভাবে আগাছা পরিস্কারের কাজ অব্যাহত রাখুক ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test