E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মামলায় আটকা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা : উত্তরণের উপায় 

২০২২ মে ১৮ ১৫:২৬:১১
মামলায় আটকা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা : উত্তরণের উপায় 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


“আগে টাকা পরিশোধ করেন , তারপর কিস্তির আবেদন করেন ।না হলে কারাগারে যেতে হবে ।”— কোনো কোনো মামলায় বিবাদি ঋণখেলাপিদের প্রতি আদালতের এমন চমৎকার পর্যবেক্ষণ লক্ষ্য করাগেছে। যার মামলা, সেই বাদীরই খোঁজ নেই, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে কীভাবে?

খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক মামলা করেই খালাস, তার যেন আর কোনো দায় নেই, যা করারব্যাংকের উকিল সাহেব করবেন — এমন মানসিকতা ব্যাংকারদের মধ্যে এখনও ব্যাপকভাবে বিদ্যমান ।

এই যদি হয় অবস্থা তা হলে যা হবার তাই হবে । খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে খেলাপিঋণ আদায়ে প্রায় পাঁচ হাজার মামলা রয়েছে ।সবচেয়ে বেশি করুণ দশা জনতা ব্যাংকের মামলাগুলোর। তাদের অধিকাংশ মামলাই ১০ থেকে ৩০ বছরের পুরোণো ।

বলা হয়েছে, মামলার তুলনায় আইনজীবী কম থাকায় যথা সময়ে মামলার খবর না নেওয়ার ঘটনাঘটেছে। খেলাপি ঋণ আদায় দ্রুততর করার জন্য অর্থঋণ আদালত গঠন করা হয়, ১২০ দিনের মধ্যেমামলা নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে । মামলা পরিচালনায় জনতা ব্যংকের অবহেলা রয়েছে যাআদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এবং আদালতের আদেশে এক সঙ্গে ৫০ আইন কর্মকর্তা নিয়োগদিতে বাঁধ্য হচ্ছে জনতা ব্যাংক ।

“ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের অনাগ্রহ “শিরোনামে ২৬ মে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এসবজানা যায় ।

অভিজ্ঞতায় দেখেছি , খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের দায়ের করা মামলাগুলো অভিভাবকহীন , পরিত্যাক্ত সম্পত্তির মতো। শাখা থেকে মামলা দায়ের করার পর মনে করা হয়, এখন ব্যাংকারদের আরকোনো দায়িত্ব নেই, দায়িত্ব সব উকিল সাহেবের ।কিন্ত অনেক উকিল সাহেব আছেন যারা মামলাপরিচালনায় আন্তরিক নন। অনেক সময় বিবাদীর থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কথাও শুনা যায় । তবে ব্যাংক-নিয়োজিত সব আইনজীবী বিবাদীর সাথে আঁতাত করেন, তা নয় ।

আদালতে আমরা কি দেখি ? দিবসের সকল মামলা শুনানি শেষে, ব্যাংকের মামলা সামনে আসে কিন্তব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি বা আইনজীবী উপস্হিত নেই ।এভাবেই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয় এবংমামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর ।

ব্যাংকের এসব টাকা তো সরকারেরই টাকা , তাই মামলা পরিচালনায় ব্যাংকের অবহেলার কারণে অনেক সময় আদালত বিরক্ত থাকেন। এমন পরিস্থিতিতেই হয়ত জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এক সাথে ৫০ আইনজীবী নিয়োগ দিতে চলেছে। তবে আইনজীবীর সংখ্যা যতই বাড়ানো হোক, ঘটনা কিন্ত একই, যতক্ষণ পর্যন্ত মূল বাদী অর্থাৎ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মামলা শুনানির দিনে আদালতে স্বয়ং উপস্থিত না হন ।

ব্যাংক কর্মকর্তা যখন মামলার বিষয়ে সরব হবেন, আদালতে একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে এবংমামলা দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে যাবে ।

ব্যাংক কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলবেন এবং তার আইনজীবী পাশে থেকে তাকেলিগ্যাল সাপোর্ট দেবেন । এভাবে মামলা পরিচালিত হতে থাকলে, ব্যাংকের অনুকূলে রায় পেতেঅস্বাভাবিক সময় লাগতে পারে না ।

তাছাড়া, ক্ষমতাবান ঋণখেলাপিদের প্রতি, অর্থ পাচারকারীদের প্রতি সমাজের সচেতন মানুষদের প্রচন্ডক্ষোভ রয়েছে , কৌশলে এবং যোগসাজশে যারা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করে নিতেপারে, ফেরত দিতে হয় না তারা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তাদের প্রতিহত করাছাড়া কোনো বিকল্প নেই এবং তারা সমাজের ছদ্মবেশী ব্যাংক ডাকাত, তাদের বিচার না হলে পুরোব্যাংকিং খাত ধসে পড়বে ।

এ সকল অপরাধীদের বিচারের আওতায় না এনে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার খেচারত জনগণের করের অর্থদিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন জোগানের মধ্য দিয়ে দিতে হচ্ছে । বর্তমানে ১০ ব্যাংকের ৩৫ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। আমানতকারীদের অর্থও ঝুঁকিতে পড়েছে, এ বিষয়ে কেউ মনোযোগদিচ্ছে না, সরকারের কেউ মুখ খুলছে না আর বাংলাদেশ ব্যাংক তো সাহসই করে না। এভাবে ভর্তুকি দিয়েদিয়ে যদি ব্যাংকগুলো সচল রাখতে হয় এবং এ খাতটি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়, তাহলেএক সময় রাষ্ট্রের কোশাগারে টান পড়বে না, তা বলা যায় না ।

মামলার শুনানিতে ব্যাংকের প্রতিনিধি প্রকারান্তরে সরকারেরও প্রতিনিধি এবং সেক্ষেত্রে তিনি আদালতে“ অ্যামিকাস কিউরি “ (আদালতের বন্ধু) এর ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হতে পারেন। অর্থাৎ যথা সময়েআদালতে সঠিক তথ্য-উপাত্ত উপস্হাপনার মাধ্যমে দ্রুত চুড়ান্ত রায়ে উপনীত হতে আদালতের সহায়কহতে পারেন ।

তাই, মামলায় সুফল পেতে হলে, কেবল আইন কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, মামলার প্রতি শুনানির দিনে ব্যাংক কর্মকর্তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলেক করতে হবে ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test