E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জেনারেল জিয়ার আর্থ রাজনীতির গতিধারা

২০২২ জুন ০৫ ১৮:৪৩:১৯
জেনারেল জিয়ার আর্থ রাজনীতির গতিধারা

আবীর আহাদ


জেনারেল জিয়া একটা দর্শনের প্রচলন করেছিলেন। সেটা হলো: "Money is no problem"! সেই দর্শন চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি সেটি ক্ষমতার সাথে জড়িতদের কাছে একটা আদর্শিক প্রক্রিয়া হিশেবে গণ্য হয়ে আসছে। সেই প্রক্রিয়ায় অনেক উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিক মন্ত্রী এমপি আমলা ব্যবসায়ী ঠিকাদার প্রকৌশলী শিল্পপতিসহ সরকারের আত্মীয়-স্বজন সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট করে শত শত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের কাছে টাকা আসলেই কোনো সমস্যা নেই। টাকা দিন পদপদবী নিন, অবাধ লুটপাট করুন, কমিশন দিন! এই দেয়া-নেয়ার ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে দেশে লুটপাটের অর্থনীতি। এমনই অঢেল টাকা যা দেশের মধ্যে রাখার জায়গা না-থাকাতে বিরাট অংশ নানান অনৈতিক পন্থায় সুইস ব্যাংক, পানামা ব্যাঙ্কসহ আমেরিকা কানাডা দুবাই ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া মালায়েশিয়া সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশে পাচার করে সেসব দেশের ব্যাঙ্ক ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে।

কারা এসব অবৈধ অর্থের মালিকসহ পাচারের সাথে জড়িত তাদের খবর অবশ্যই সরকারের নখদর্পণে রয়েছে। তাছাড়া বিগত কিছুদিন পূর্বে সুইস ও পানামার ব্যাঙ্কে কাদের অর্থ রয়েছে সে-বিষয়ে পানামা পেপার্স নামক মিডিয়ায় খবরও প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দুদক এসবের খবর অবশ্যই জানে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এ যাবতকালের মধ্যে ১৫/১৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এসব অর্থে লণ্ডন, দুবাই, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন বড়ো বড়ো শহরে বাঙালি/বেগমপল্লীও গড়ে উঠেছে। অনেক লুটেরা আছে, যারা বিদেশে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের রাজকীয় জীবন যাপনে রেখে নিজে একলা দেশের মাটিতেও রাজকীয় জীবনযাপন করছে এবং লুটপাট করে চলেছে। এসব দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াদের কার্যকলাপ দেখে মনে হয়, তারা বাংলাদেশকে অবাধ লুটপাটের ক্ষেত্র বলে গণ্য করে।

আসলেই বাংলাদেশ এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, যেখানে অর্থের বিনিময়ে রাজনীতি ও প্রশাসনের পদপদবী লাভ করে সেখান থেকে শত শত কোটি টাকা কামাই করা যায়! চরম অসৎ উপায়ে এমনতর অর্থ লুটপাট করলেও তারা ধরাছোঁয়ার উর্দ্ধে থেকেই যায়! এমন এক অর্থলিপ্সুতায় বাংলাদেশ অবস্থান করছে যে, দশ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়মূল্য একশো কোটি এক কোটি টাকার মালামাল ক্রয়মূল্য দশ কোটি একটা পাঁচশো টাকার বালিশ ছয় হাজার টাকা, একটা দশ হাজার টাকার নারকোল গাছ নয় লক্ষ টাকা, একটা কম্পিউটার মেরামতে পঁচিশ লক্ষ টাকা, একটা বিশ হাজার টাকার পর্দা পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা এমনিভাবে হাজার হাজার সরকারি ছোট বড় ও মেগা প্রকল্প ও মালামাল ক্রয় খাতের মূল্য শত/হাজার গুণ বাড়তি ব্যয় দেখিয়ে শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে এসবের সাথে জড়িতরা রাতারাতি বিরাট ধনিকে পরিণত হচ্ছে! যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে অতি দ্রুততম সময়ে ধনিকশ্রেণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এছাড়া ব্যাঙ্ক ও শেয়ারবাজার লুটসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাত থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এসবই হলো জেনারেল জিয়ার আর্থরাজনীতির ধারাবাহিকতার ফল।

এসব দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াদের লুটপাটের কিছু কিছু খবর প্রকাশিত হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথবা বলা চলে লুটেরাদের সাথে ভাগাভাগির প্রক্রিয়ায় সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে ।

এ প্রক্রিয়ায় জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের বুকে আরেকটি মিনি পাকিস্তান সৃষ্টি করে পশ্চিম পাকিস্তানিদের ফেলে-যাওয়া জাতীয়করণকৃত শিল্প কলকারখানা ব্যাঙ্ক বীমাসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সাবেক মালিকদের হাতে তুলে দেন। পাকিস্তান থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এদেশে এসে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আমলের বাঙালি উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিয়ে আবার পাকিস্তানে ফিরে যান। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তাদের কাছ থেকে তার পার্টি বিএনপির নামে বিপুল অর্থ কমিশন লাভ করেন। অপরদিকে রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতিকে জটিল করে দিয়ে নিজের একক ক্ষমতা পাকাপোক্ত রাখার লক্ষ্যে ঐ অর্থ দিয়ে বিভিন্ন দলের রাজনীতিকদের ক্রয় করে তাদের দিয়ে বিএনপিকে সাজান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে দুর্বল করার জন্য অর্থ ছিটিয়ে সেই দলের মধ্যে আন্ত: দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করেন যাতে কোনো দল তার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত করতে না পারে। অন্যদিকে ছাত্র ও যুব সমাজের মধ্যে বিপুল অর্থ, মাদক ও অস্ত্র তুলে দিয়ে দেশকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেন যাতে অন্য কোনো দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে দাঁড়াতে না পারে। এরই কাছাকাছি প্রক্রিয়ায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পদদলিত করে জেনারেল জিয়ার আদর্শের সৈনিক দেশের দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্র, লুটেরা ব্যবসায়ী, স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও নিরাপত্তা দিয়ে তাদের বশংবদ করে রেখেছে। এবং এটাই দু:খজনক সত্য এই যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ও সাধারণ জনগণের ওপর নির্ভর না করে তারা ঐসব অপশক্তির যোগসাজসে ক্ষমতায় টিকে থাকার অশুভ পরিকল্পনা নিয়ে রাজনীতিতে অবস্থান করছে! আসলে জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন তারাও অনুসরণ করে চলেছে।

বাংলাদেশে এই যে অবৈধ অর্থের অবাধ প্রবাহের গতিপ্রকৃতি সেটাই হলো জেনারেল জিয়াউর রহমানের আর্থসামাজিক দর্শন, যার ওপর নির্ভর করে আমাদের দেশে লুটপাটের অবাধ রাজত্ব গড়ে উঠেছে। আর এভাবে বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় পার্টির পথ ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সযতনে দূরে সরিয়ে দিয়ে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দর্শন সার্থকভাবে অনুসরণ করে চলেছে!

লেকক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test