E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পটিয়া উপজেলায় একটি বালক বিদ্যালয় জাতীয়করণ প্রসঙ্গে

২০২২ জুন ১১ ১৬:৪৩:১৩
পটিয়া উপজেলায় একটি বালক বিদ্যালয় জাতীয়করণ প্রসঙ্গে

জসীম উদ্দিন টিপু


দীর্ঘ প্রায় তিন যুগের বেশি সময় ধরে পটিয়ায় একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে 'পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়' ও 'আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়' এর শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহল। 

১৯৮০ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে পটিয়া কলেজকে জাতীয়করন করায় একটি বিদ্যালয় জাতীয়করণ এর বিষয়টি সামনে চলে আসে। তখনকার বিএনপি দলীয় সাংসদ মরহুম নজরুল ইসলাম চৌধুরী পটিয়াতে একটি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এর জন্য দফায় দফায় পার্শ্ববর্তী দু'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সাথে বৈঠক করেন।

তখন পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম মোহাম্মদ আবুল কাশেম সাহেব এবং আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মরহুম মোহাম্মদ মুছা সাহেব কিন্ত পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে দফায় দফায় এমপি মহোদয় সভা করলেও কোন সমাধান বের করা সম্ভব হয় নি। তখন কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করনের কোন নীতিমালা ছিলো না।

সরকারের নির্বাহী আদেশে যে কোন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হতো। এক পযায়ে দু'প্রতিষ্ঠানের দ্বন্ধের কারণে ১৯৮১ সালে এমপি মহোদয় এর বাবার নামে আবদুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়।

একটি বালক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এর বিষয়ে তৎকালীন এমপি সাহেব এর সমঝোতা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের উপর মহলের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. হাফেজ আহমদ ১৯৮২ সালে পটিয়া পিটিআই এ দু'প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের সাথে দীর্ঘ সময় মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এমপি মরহুম নকরুল ইসলাম চৌধুরী মহোদয় ও পটিয়া মহকুমা প্রশাসক সাহেব। ঐ বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো।

ক. দু' প্রতিষ্ঠানকে একিভূত করে একিভূত নামে বালক উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হবে।
খ. একিভূত বিদ্যালয়ের নাম দেয়া হয় ' পটিয়া মডেল ইউনাইটেড আবদুস সোবহান গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল'।
গ. নব নামকরনকৃত বিদ্যালয়ের নামে দু'প্রতিষ্ঠানকে সকল জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেয়া।

পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মহাপরিচালক মহোদয় চিটি দিলে কোন প্রতিষ্ঠানই তা বাস্তবায়ন না করায় পটিয়াতে কোন বালক বিদ্যালয় আর জাতীয়করণ হয়নি।পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক বিশাল জনসমুদ্রে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মরহুম এইচ এম এরশাদ ঘোষনা দেন,যদি দু'প্রতিষ্ঠান এক হয়ে আসেন তাহলে জাতীয়করণ করা হবে'। কিন্তু বাস্তবে তা আর হয়নি। এরপর বিভিন্ন সময়ে দু'টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সরকারের আমলে এককভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েও সফলকাম হয়নি।

সর্বশেষ পটিয়ার সাংসদ আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরী'র উদ্যোগে পটিয়া পৌরসভা কার্যালয়ে দু'প্রতিষ্ঠান এর প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় এমপি মহোদয়,পৌর মেয়র অধ্যাপক মো: হারুনুর রশিদ, ইউএনও জনাব রোকেয়া পারভীন সহ দু'বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি গণ উপস্থিত থাকলেও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। মনে হয় এটা করা সম্ভবও হবে না। কেননা বর্তমান সরকার স্কুল কলেজ জাতীয়করণ এর জন্য একটি নীতিমালার ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি উপজেলায় একটি কলেজ ও একটি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেমতে পটিয়া উপজেলায় পটিয়া সরকারি কলেজ ও আবদুর রহমান সরকারি বালিকা বিদ্যালয় আছে। তাই আরও একটি বালক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেও চলে। তারপরও সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তে যে কোন সময় যে কোন কিছু করা সম্ভব।

প্রায় তিনযুগ পার হয়ে গেলেও কোন বালক বিদ্যালয় জাতীয়করণ না হওয়ায় পটিয়াবাসি অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যেমনি বঞ্চিত হয়েছে পটিয়া জেলা না হওয়ায়। দু'প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ এর বিষয়ে প্রতিযোগিতায় থাকার বিষয়টি আমলে না নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয়করণের বিদ্যমান চাহিত তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বিবেচনা করে যোগ্যতম প্রতিষ্ঠানকে কিংবা পূর্বের সিদ্ধান্ত মতে একিভূত নামের প্রতিষ্ঠান কে জাতীয়করণ এর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এ জন্য সাহসী সিদ্ধান্তটি নিতে হবে পটিয়ার মাননীয় সাংসদ আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরী মহোদয়কে।

লেখক : অধ্যক্ষ, আব্দুল জলিল চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম।

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test