E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাহসী পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াই

২০২২ জুন ২৮ ১৫:০২:৪০
সাহসী পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াই

পীযূষ সিকদার


আমাদের দিন আসে না। দিন সেই কবে অন্ধকারের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে-দিন ধরা দেয় না! এমন ভাবনার মধ্যে যখন ডুব সাতার খেলছিলাম তখন চমক ভেঙে দেখি দিন এসেছে। হ্যাঁ, সত্যিই দিন এসেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তার উদাহরণ। মানুষ কী পারে না তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝিয়ে দিয়েছেন! 

হ্যাঁ, মানুষ পারে। বিরাট এক স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় মুঠ করে ধরেছেন। নাম তার পদ্মা সেতু। আহারে-স্বপ্নের পদ্মা সেতু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ পারে। ভাবতেই অবাক হই! এত বড় স্বপ্নকে উঁনি কিভাবে ফিল্মী কায়দায় চিত্রায়ণ ও দৃশ্যায়ণ করলেন! ভাবতেই গা শিউরে উঠে। এতো বড় স্বপ্ন দেখতে একটি মানুষ পারে! তিনি শুধু উসকে দিয়েছেন। প্রতিটি মানুষই পারে তার স্বপ্নকে পূর্ণতা দিতে। আমরাও পারবো! যার যার স্ব স্ব জায়গা থেকে স্বপ্ন দেখা ও বাস্তবায়ন করা। আমরা স্বপ্ন দেখি। পূর্ণতা দিতে ভয় পাই। ভয়ের কিছু নেই। উপর থেকে গম গম আওয়াজে ফেটে পড়ে মাননীয় শেখ হাসিনার কণ্ঠ। তোমরাও পারবে! স্বপ্ন দেখো! স্বপ্ন দেখলেই পারবে। এই দেখো আমার হাত তোমাদেরকে ছায়া দেয়।

চমকে উঠি আরবার। ঘুম ভেঙে দেখি এ যে স্বপ্ন! কেউ নেই! চারিদিকে ধুধু মরুভূমি! এ কি শুধু স্বপ্ন! স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই আমরা! পেছনে বাম হাত রেখে ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে বলে উঠে-‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম. এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’’ একটি মানুষ সাত কোটি হয়ে কথা বলে। তারই কন্যা আমাদের হস্ত কররেখায় ছায়া দেয়। সোনার বাংলা। আসলেই আমরা সোনার বাংলার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। যে কোটি কোটি মানুষকে ছায়া দেয়। ভয় নেই আর। আমরা সাহসী পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াই।

কানে কানে কে শোনায়-চমকে উঠি। শিউরে উঠি। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। কে কে? ঘুম ভেঙে দেখি কোথাও কেউ নেই! তাহলে কী স্বপ্ন! স্বপ্ন ও স্বপ্ন হাত ধরা ধরি করে হাঁটে...। আমাকে তো খুন করেছো তোমরা। আমি তোমাদেরকে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম! ভয় হয় আমার কন্যাকেও তোমরা খুন করে ফেলবা! হাওয়ায় হাওয়ায় উত্তর আসে না। আমরা ভুল করেছিলাম! আর রক্ত চাইনা! স্বপ্ন দেখতে দেখতে হুট করে উঠে বসি। না, আর রক্ত চাই না। হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভয় নেই। আমরা যে আজ রক্ত দেবার জন্য প্রস্তুত। তুমি যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলে-কুলাংগাররা হেসেছিলো! এতোদিন পর স্বপ্ন সত্যিকারে দেখিয়েদিলে। তুমি পারো। তোমাকে যে পারতেই হবে তুমিতো বঙ্গবন্ধুর কন্যা।

আমার স্বপ্নগুলি চোরাগলিতে বারবার ঢুকে পড়ছিলো! পৃথ্বিরাজ বলে উঠলো-বাবা আমি পদ্মা সেতু দেখবো। পৃথ্বিরাজকে কিভাবে বোঝাই বাবা আমার কাছে টাকা নেই। ও নাছোড়বান্দা। পৃথ্বিরাজ পদ্মা সেতু দেখবেই। এক লহমায় দেখে ফেলি পৃথ্বিরাজের চোখ ভর্তি পদ্মা। আমি ওকে পদ্মা সেতু দেখাই কিভাবে! আমি তো ওর চোখে পদ্মা সেতুকে দেখে নিয়েছি। আমার চোখে কী পদ্মাকে দেখে নিলো পৃথ্বিরাজ! ওর কান্না আর থামে না! কেনো থামে না! চোখের জলে পদ্মা হয়ে যায়! হঠাৎ একটি ভাবনা মাথায় এলো। পদ্মা সেতু করতে যেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোখের জলে ভিজেছিলো! চোখের জলেই রচিত হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

আজতো কতজনকে দেখি। এরা কোথায় ছিলো এতোদিন! আমার ও পৃথ্বিরাজের চোখের জলে গাঙ হয়। এক সময় নদীও শুকায়। পৃথ্বিরাজেরও কান্না থামে।

একটি সেতু। পুরো বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবো আমরা। এপারের মানুষ ওপারের মানুষের সাথে কথা বলতে পারবে। মনে মনে মিলন মেলা।

একদিন আমি আর পৃথ্বিরাজ এপার থেকে ওপারে হেঁটে যাবো। চোখের জল শুকাবে। সত্যিই কি চোখের জল শুকায়। যা হারালাম। সে ক্ষত কি শুকায়! আবার স্বপ্ন। চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে মাটিতে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনার বাংলা গড়বেই। জানি মনের গহীন অতলে পারবেন। পারতে যে হবে তাঁকে। নইলে রক্তভেজা বাংলার ঝণ শুধবে কে?

প্রতিটি সাফল্যের পেছনে ক্ষত থাকে। সেই ক্ষত শুকিয়ে উঠতে সময় লাগে। আসলে ক্ষত কি শুকায়? পৃথ্বিরাজের মতো বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার চোখে জল দেখেছি। সাগরের হুংকার দেয়া জল। সেই চোখের জলে মূল্য দিয়ে কিনে নেয়া স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

আমার ভাবনা খালি চোরাবালিতে কেবলি হাবুডুবু খায়। বিশ্বাস নেই কোথাও! বিশ্বাসঘাতকতা আছে। ভয় হয় কবে যেন আমাদের একমাত্র ভরসার জায়গা তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বাসঘাতকতার ধ্রুব তারা হয়ে জ্বলবে? না। এ আমার কল্পনা মিশ্রিত এলোমেলো ভাবনা! বিশ্বাস হয় না! বিশ্বাস করি ক্যামনে? ইতিহাস কী বলে? তাই প্রতি রাতে ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়! আবার কী ছোটবেলায় চলে যাবো। বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভয় পেয়ে অনেকেই ছবিটি লুকিয়ে ফেলছে। এরোপ্লেন উড়ছে। ঘরের ভেতরে যাই। শেখ মুজিব। আমাদের ঘরের ঠিক কর্নারে পুরো দেশ চোখে নিয়ে বসে আছেন। একটুও সরে নড়েনি। আবারও কি আগস্ট আসবে? ভয়ংকর সে দিন। ভয়ংকর সে রাত!

গভীর রাত। আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠি। উঠে বসি। মনে হচ্ছে সমস্ত দেশ আমাকে গিলে খাচ্ছে! এমন লাগে কেনো? সব ভাবনা একা আমারই কি? চ্যালাদের দেখতে দেখতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ওরা সব পারে। হ্যাঁকে না! নাকে হ্যাঁ! আবার সময় মত পায়ের উপর গড়িয়ে পড়ে! আমরা দেখি। দেখে শিখি না। আমি কাউকে উপদেশ দেয়ার জন্য এ কলম ধরিনি। কেবল নিজের সাথে নিজের অংক কষি। এ কলম ধরেছি শুধু নিজের সাথে নিজের কথা বলার জন্য।

আবার স্বপ্ন বপি। এ দেশটা একদিন ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হবে। সোনার বাংলাদেশ। এতো এতো জয়ের পর আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। টিকিয়ে রাখবে কে? অযথা ঘুম আসে। ঘুম পায়। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি। তাইতো আমাদের কিছু হয় না! স্বপ্ন কেবলি কি স্বপ্ন? জেগে স্বপ্ন দেখার নাম স্বপ্ন! তাইতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এ আরেক জিৎ-এর নাম। জিৎ তো নির্ধারিত হয় ষাট কী নব্বই মিনিটে। এ জিৎ সারা জীবনের। দু পারের মানুষের মধ্যে সোনার মেলবন্ধন।

ঘুম আসে না। অকস্মাৎ স্বপ্নের মধ্যে তলিয়ে যাই! এ খেলাতো দীর্ঘ সময়ের খেলা। দীর্ঘ সময় ধরে জিৎ হাতের মুঠোয় নিয়েছি। এই জিতের আমিও তো একজন অংশীদার। পাছে ভয় হয়। তাই ঘুমিয়ে থাকি। দিন এসেছে দিন। জেগে তাই স্বপ্ন দেখা হয় না। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি। আবার কী আসে আগস্ট!! ঘুম থেকে জেগে উঠি। না আর ঘুমাবো না! আর আগস্ট হতে দেয়া যায় না। এতো বড় স্বপ্ন যিনি দেখাতে পারেন তার সামান্য অংশীদার আমরা হবো না, তা ক্যামনে হয়! চেয়ে দেখো দেশমাতা এই যে তোমার অতন্ত্র্য প্রহরী। জেগে রয়। জেগে জেগে দেশমাতাকে ভালোবেসে ফেলে। ছোট বেলায় তোমার ছবির সাথে আমার মায়ের মুখের সামনে আনতাম। কী অদ্ভূত মিল! মা নেই। তুমি আছো। তোমাকে দেখে দেখে আজ যে দিন ফিরেছে। স্বপ্নকে মুঠ করে ধরে তোমার ইচ্ছেয় স্বপ্ন বুনে চলি-আকাশে বাতাসে সমুদ্রে...। আজ যে মা দিন ফিরেছে। তাই সাহসী পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াই। হয়ে যাই স্বপ্নের কারিগর।

লেখক : নাট্যকার ও শিক্ষক।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test