E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পরিকল্পিত জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তর করতে হবে 

২০২২ জুলাই ১২ ১৬:৫৫:৫৮
পরিকল্পিত জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তর করতে হবে 

প্রভাষক নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


১১ জুলাই বাংলাদেশেসহ বিশ্বের সকল দেশেই পালিত হলো বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এবছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘৮০০ কোটির পৃথিবী: সকলের সুযোগ, পছন্দ ও অধিকার নিশ্চিত করে প্রাণবন্ত ভবিষ্যৎ গড়ি।’  এ সুন্দর ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিপাদ্যে অনেকগুলি বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে প্রতিপাদ্য বিষয়টি অত্যন্ত গ্রহনযোগ্য বলেই মনে হয়। সকলের অধিকারের সমতার বিষযটি এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা এ বিষয়ে সঠিক কোন পদক্ষেই গ্রহণ করতে পারছি না। বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে এ দিবসটি অনেক তাৎপর্য বহন করে থাকে। প্রতিদিনই বাড়ছে জনসংখ্যা কিন্তু সে হারে বাড়ছে না মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর গভর্নিং কাউন্সিলে জনসংখ্যা ইস্যুতে গুরুত্ব দেয়া জরুরি মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষে বিশ্বব্যাপি ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ দিবসটি পালিত হয়েছে আসছে প্রতিবছরই নতুন আঙ্গিকে। সঠিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য জনসংখ্যার সঠিক ব্যবহার কিভাবে করা যায় সেই লক্ষে প্রতি বছরই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হয় এ জনসংখ্যা দিবস। এ দিবসের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করাই মূল লক্ষ্য। 

যেসব দেশে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে সেসব দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপটা একটু বেশি। অন্যদিকে কিছু কিছু দেশে জনসংখ্যা কমছে তাই তাদেরও ভিন্ন নীতি অনুসরণ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে কিছু কিছু দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশে যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে তা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যা দিবসের আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে চলে আসে তা হলো বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার সার্বিক অবস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কি হারে বাড়ছে জনসংখ্যা ? জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে প্রতিবছর। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ১৪ এপ্রিল বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন-২০২২ প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীর বর্তমান মোট জনসংখ্যা ৭৮৭.৫০ কোটি, যার মধ্যে গত এক বছরে বেড়েছে ৭ কোটি, বৃদ্ধির হার ১.১ %। গড় আয়ু- নারী ৭৫, পুরুষ-৭১, সার্বাধিক জন্মহারের দেশ বাহরাইন (৪.৩%), সর্বনি¤œ লিথুনিয়া (১.৫%) । পৃথিবীর জনসংখ্যা বিচারে বৃহৎ দশটি রাষ্ট্র হলো চীন ১৪৪ কোটি ৪২ লাখ, ভারত ১৩৯ কোটি ৩৪ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র ৩৩ কোটি ২৯ লাখ, ইন্দোনেশিয়া ২৭ কোটি ৩৪ লাখ, পাকিস্তান ২২ কোটি ৫২ লাখ, ব্রাজিল ২১ কোটি ৪০ লাখ, নাইেজেরিয়া ২১ কোটি ২৪ লাখ, বাংলাদেশ ১৬ কেটি ৬৩ লাখ, রাশিয়া ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ও মেক্সিকো ১৩ কোটি ৩ লাখ জনসংখ্যা রয়েছে।

জনসংখ্যার দিক দিয়ে বৃহত্তম দেশ হচ্ছে চীন। ৯৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ১১ বর্গ কিলোমিটারের এ দেশটিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে ১০ জনেরও কম লোক। অন্য দিকে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গ কিলোমিটারের ( সিআই ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক ২০২১ অনুসারে) ছোট আমাদের এ দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় ১ হাজার ১শ ২৫ জনের মতো লোক। উপরের পরিসংখ্যানের সাথে আমাদের বাংলাদেশের বাংলাদেশের অবস্থান কি রকম সেটা ভেবে দেখার বিষয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম আর মোট জনসংখ্যা ১৬.৬৩ কোটি, বৃদ্ধির হার ১.১%, গড় আয়ু- নারী ৭৫ বছর এবং পুরুষ ৭১ বছর , নারীর প্রতি প্রজনন হার ২ জন, ৬৫ বা তার বেশি বয়সের মানুষ ৫.৩%। এই অধিক জনসংখ্যার দেশটিতে প্রতিনিয়তই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে । লক্ষণীয় বিষয় হলো বহু চেষ্টার করেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ, বাল্য বিয়ে ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার বিষয়গুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। তবে আশার কথা হলো এত সমস্যার পরও স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.৪৮% যা বর্তমানে কমে এসেছে ১.১% যা থেকে আশার সঞ্চার হচ্ছে আমাদের মাঝে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত যেসব দেশের জনসংখ্যা হ্রাস পাবে তাদের মধ্যে বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, মলডোভা, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন, হাঙ্গেরি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন দ্বীপগুলো অন্যতম। আর এর মধ্যে এশিয়ার দেশ জাপানের অবস্থান দশম। এসব দেশে জনসংখ্যা কমলেও শুধুমাত্র অভিবাসন নীতি বা বিদেশীদের গ্রহণের মাধ্যমে জনসংখ্যার স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। এখন প্রশ্ন হলো কেন কমছে জনসংখ্যা ? শুধুই কি প্রাকৃতিক কারন ? গবেষণা বলছে নগরায়ন, শিল্পায়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থানে নারীর অগ্রযাত্রা, নারীর ক্যারিয়ার, শিশু লালন পালন ও শিক্ষার ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, কাজের সন্ধানে দেশ ত্যাগ, ভোগবাদীতা, জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়ায় উন্নত দেশের অনেক নারী সন্তার ধারণ এমনকি বিয়েতে পর্যন্ত আগ্রহ হারাচ্ছে। এসব কারণে বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। সময়ের প্রেক্ষাপটে আজ অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে।

একদিকে যেমন বাড়ছে জনসংখ্যা অন্যদিকে আবার হ্রাসও পাচ্ছে জনসংখ্যা উভয় সংকটে বিশ্ব। জনসংখ্যা অধিক বৃদ্ধি যেমন আমরা চাই না তেমনি চাই না জন্যসংখ্যা একেবারেই কমে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে একেক দেশের চাওয়াটা একেক রকম। প্রতি বছরই ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধানের আলোকে প্রতিপাদ্য তৈরি করে জনসংখ্যা দিবস পালিত হয়ে থাকে তবে এ গুরুত্বপূর্ণ দিবসটির প্রয়োজনীয়তা সাধারণ মানুষের কাছে আরো বেশি করে সামনে আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশে যেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা এখন সম্ভব হয়নি তাই এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিয়ে জনসাধারণের নিকট পৌঁছতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে দেশে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে থাকবে। দেশের উন্নয়নের জন্য যত পরিকল্পনাই করি না কেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। আর যেসব জন্যসংখ্যা রয়েছে তাদের কর্মমূখী করে জনসম্পদে রুপান্তর করতে হবে। মনে রাখতে হে যে পরিকল্পিত জনসংখ্যা দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত এটা মাথায় রেখে আমাদের মত জনবহুল দেশে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test