E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আদালতের পর্যবেক্ষণ অশনি সংকেত

ব্যাংকগুলোয় অপরাধের আখড়া আর কতদিন!

২০২২ আগস্ট ২৭ ১৬:২০:৫১
ব্যাংকগুলোয় অপরাধের আখড়া আর কতদিন!

চৌধুরী আবদুল হান্নান


“সবচেয়ে সাংঘাতিক ক্রাইম ( অপরাধ ) হচ্ছে ব্যাংকে। দেশটাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।” দু’জন বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি মামলার শুনানিকালে সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, দীর্ঘদিন যাবত ব্যাংকের টাকা আদায়ের মামলা এবং ব্যাংক খাতের দুরবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞ হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এমন মন্তব্য এলো। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এ মন্তব্যে বাস্তবতা প্রকাশিত এবং একটি অশনিসংকেতও।

এখনই প্রতিকারের উদ্যোগ না নিলে ব্যাংক ব্যবস্থায় শনির দশা আরও তীব্রভাবে জেকে বসবে, সন্দেহনেই। ব্যাংক সম্পর্কে আদালতের এমন পর্যবেক্ষণ নতুন নয়, প্রয়োজনে মাঝে মাঝে ব্যাংকারদের জন্য শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয় মতামত দিয়ে থাকেন।

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার মামলা রয়েছে, অধিকাংশমামলাই ১০ থেকে ৩০ বছরের পুরানো।

মামলা পরিচালনায় জনতা ব্যাংকের অবহেলা রয়েছে যা আদালতের পর্যবেক্ষণে এসেছে এবংআদালতের আদেশে এক সঙ্গে ৫০ আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে জনতা ব্যাংক। খেলাপি ঋণআদায়ে ব্যাংকের দায়ের করা মামলাগুলো অভিভাবকহীন, অনেকটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি যেন। মামলাদায়ের করার পর মনে করা হয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই; সব দায়িত্ব মামলাপরিচালনাকারী উকিল সাহেবদের। অপরদিকে অনেক উকিল সাহেব আছেন যারা ব্যাংকের মামলা পরিচালনায় আন্তরিক নন এবং কথনও কখনও বিবাদীর থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কথাও শোনা যায়।

অনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাধ সবই সংঘটিত হয় অর্থকে কেন্দ্র করে, যেখানেই অর্থ বা টাকা আছে সেখানেই অপরাধ প্রবণতা দৃশ্যমান। মধুর লোভে মাছি আসবেই, টাকা মধুর চেয়ে মিষ্টি। আর টাকাতো ব্যাংকেই থাকে, ব্যাংকগুলো এখন ঢাকনা বিহীন মধুর হাঁড়ি। চাহিদামাত্র ফেরত পাওয়ার শর্তে আমানতকারীদের জমাকৃত টাকা ব্যাংকের জীবনী শক্তি, ব্যাংক রাষ্ট্রের অর্থ ভান্ডারও।

ব্যবসার নামে এক শ্রনীর ধুরন্ধর গ্রাহক ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা অবলীলায় বের করে নিয়েযাচ্ছে, তারা এতটাই সাহসী ও বেপরোয়া যে, তারা মনে করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করলে কিছু হয়না। তারা ব্যাংক পাড়ার ঝানু ঘুঘু , খেলাপি হয়েও কীভাবে আবার নতুন ঋণ নেওয়া যায় তা তাদের বেশজানা। বেনামি ঋণ নেওয়ার কৌশলও তাদের নখদর্পণে, অলি-গলি সব পথই তাদের চেনা জানা ।

আদিকালে যখন ব্যাংক ছিল না, মানুষ টাকা পয়সা, মূল্যবান সম্পদ ঘরে রাখতো, সশস্ত্র ডাকাত এসেসব নিয়ে যেত। আধুনিক কালে ব্যাংক হয়েছে, এখন ডাকাতি করতে ঘরে ঘরে হানা দিতে হয় না, এক জায়গাতেই সব পাওয়া যায় এবং বন্দুক নিয়েও আসতে হয় না। যুগ পাল্টেছে, ডাকাতির ধরণও পাল্টেগেছে।

ব্যাংক থেকে আত্মসাতকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা মুদ্রা বাজারে প্রবেশ করে দ্রব্য মূল্যে বাড়তি চাপসৃষ্টি হয়। পরিশ্রম ছাড়া প্রাপ্ত অবৈধ এ অতিরিক্ত অর্থে সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতার জ্বালা ভোগ করতে হয় প্রতিটি নাগরিকের ।

নিত্য পণ্যের দাম যতই উর্ধ্বমুখী হোক না কেন, তাদের কোনো চিন্তা নেই, বাজারে তাদের ধাক্কায়দিশেহারা সাধারণ মানুষ।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় রয়েছে কিন্ত স্বাধীনভাবেকাজ করার সক্ষমতা নেই। যদিও আইন, বিধি-বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবেকাজ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকান্ডের জন্য সংস্থাটির নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য।

দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংককে এতো ক্ষমতা দেওয়া সত্ত্বেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদেরহীনবল বা পুরুষত্বহীনতা কেন, তা ভাবতে হবে আগে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test