E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের অঙ্গীকার ‘টেকসই শান্তি’ 

২০২২ সেপ্টেম্বর ২০ ১৫:৩৫:২৩
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের অঙ্গীকার ‘টেকসই শান্তি’ 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


পৃথিবীতে বহুল উচ্চারিত একটি শব্দ শান্তি। শান্তি ছাড়া পৃথিবীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয় চরমভাবে। এ শান্তির খোঁজে আমরা প্রতিনিয়ন ছুঁটে চলছি সামনের দিকে। অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক উন্নতি সাধিত হলেও শান্তির যে উন্নয়ন তা হচ্ছে না। এতসব উন্নয়নের পরও কিন্তু সত্যিকার অর্থে শান্তি আমরা পাচ্ছি না। ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র থেকে পৃথিবী সব জায়গায় এই শান্তি শব্দটি অধরা। এ শান্তির জন্য আমরা অনেক আইন তৈরি করছি আবার নিজেদের স্বার্থের জন্য এসব আইনের তোয়াক্কা করছি না। আমরা দেখছি শান্তি শৃংঙ্খলা রক্ষায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন আইন বা নতুন নতুন চুক্তি। আবার চলছে এসব আইন বা চুক্তির বরখেলাপ। তাই আইনগুলো কাগজ নির্ভর হয়ে পড়েছে সেটি প্রায় সকল মানুষের ধারণা। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারছে না সবসময়। 

আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমান অধিকার থাকলে সব জায়গায় সমানভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে। এই কারনে বেড়ে চলছে সমাজের সর্বস্তরে অশান্তি। নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সকল স্তরকে অস্থিতিশীল করে রাখছি আমরা। মুখে মুখে শান্তির কথা বললেও অন্তরে লালন করছি না অন্যায়ের ধারণা। সব জায়গাতেই শান্তির পক্ষে বললেও নিজের বেলায় মনকে পরিবর্তন করছি। তবে এটা ঠিক আমরা কেউ অশান্তি চাই না তবে সমস্যা হলো নিজের আধিপত্য ঠিক রেখে শান্তি চাই। অন্যের যাই হউক আমারটা সবটুকুই চাই যেকোন মূল্যে। ব্যক্তি থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব জায়গা আজ অনিরাপদ মানবতা।

পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে মানবতা লঙ্ঘনের অবিযোগ তুললেও তাদের দেশে মানবতাবিরোধী ঘটনা ঘটছে অবিরত। এই শান্তির খোঁজে জাতিসংঘ অধিভূক্ত সকল দেশেই ২১ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব শান্তি দিবস। দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে শান্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। জেনে নেয়া যাক এ শান্তি দিবস পালনের ইতিহাস বা কেন আমরা এ শান্তি দিবস পালন করছি। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি যুদ্ধবিহীন বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য ও কোষ্টারিকার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

প্রস্তাব অনুসারে প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার দিনটিকে “ যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই” স্লোগানে “ আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস” হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর “ আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস” হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধ ও সংঘাত নিরসন এবং যুদ্ধরত অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাধ্যমে সেসব অঞ্চলে মানবিক সহায়তার লক্ষ্যে দিবসটি উদ্যাপিত হয়ে থাকে। এবছরও এর ব্যতিক্রম হবে না কারন নানান আয়োজনে পালিত হবে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত সকল দেশেই পালিত হবে দিবসটি গুরুত্বসহকারে। শান্তি প্রতিষ্ঠার বিবেচনায় দিবসটির তাৎপর্য অনেক সুন্দর এ কথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই এবং কাজ হউক বা না হউক যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছে সব দেশই। তবে এ দিবসের মূল বিষয়টির গায়ে কালিমা লেপে এর সৌন্দর্যের হানি ঘটানো হচ্ছে।

আধিপত্যবাদী সমাজ ব্যবস্থায় এদিবসটির গুরুত্ব অনেক বেশি তবে বাস্তবায়ন অনেক কঠিন এটা মানতে হবে। প্রতি বছরই দিবসের শুরুতে জাতিসংঘের মহাসচিব এ উপলক্ষ্যে “শান্তির ঘন্টা ” বাজান এবং বানী প্রদান করেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদীদের “ জাতিসংঘের শান্তিদূত” হিসেবে নিয়োগ করেন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। ২০০২ সালে শান্তি দিবস পালনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় পৃথিবীর আজকে যেসব দেশ যুদ্ধে লিপ্ত তারাও স্বাক্ষর করেছিলেন এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও এইসব দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শান্তি দিবস। একারনে মজার ও হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে এ দিবসের তাৎপর্য। ইরাক আফগান্তিানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন, রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ, রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে আমারা স্তম্বিত হয়ে যাই।

ডেটন চুক্তি, জেনেভা কনভেনশন, তাসখন্দ চুক্তি, প্যারিস চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তির মতো বিষয় আমরা অবলোকন করেছি কিন্তু সত্যিকার অর্থেই এসব চুক্তি ক্ষণিক সময়ের জন্য আমাদের শান্তি দিলেও সুখটা থেকে যাচ্ছে অধরা। শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য এবং যারা শান্তির বিষয়ে কাজ করে আসছে তাদের জন্য ১৯০১ সালে নোবেল পুরষ্কার প্রবর্তনের সময় থেকেই নোবেল পুরষ্কার চালু করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫০ সাল থেকে জুলি ও কুরি নামে আরেকটি শান্তি পদক চালু করা হয়। দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার কোন দিবসের আলোকেই সমাধান হচ্ছে না। যখনই সুযোগ পাচ্ছে সবলরা তখনই চালাচ্ছে নরমের উপর স্টীমরোলার। শুধু মাত্র এক দেশ যে আরেক দেশের উপর অত্যাচার করছে এমনটা নয় । সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরেই চলছে অত্যাচারের এ নির্মম বাস্তবতা।

তবে এ বছর ভিন্ন একটি মাত্রায় পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। একদিকে বিশ্ব দেখছে করোনাকালীন ভঙ্গুর অর্থনীতির পুনর্বাসন অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রেক্ষিতে শান্তি শব্দটি সকলের কাছেই আশার প্রদীপ হিসেবেই আলো প্রজ্জ্বলন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের বেঁচে থাকা যেহেতু শান্তির উপর নির্ভরশীল তাই আমাদের এ পথের বিকল্প নেই। শান্তির পথ বেছে না নিলে সংকট দীর্ঘস্থাী হবে। আর সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে চরম সংকটে পড়তে হবে পৃথিবীর মানুষকে। মানবতার সংকট, জলবায়ু পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন, অসমতা ও দরিদ্রতা বৃদ্ধি, অবিশ্বাস আর বিভক্তি আজ চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। অশান্তির এসব উপাদান আরো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্ব থেকে হিংসা, বিদ্বেষ , হানাহানি, মারামারি, অসহিষ্ণুতা ও রক্তপাত বন্ধ করতে চাইলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। আর এই টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের টেকসই নীতিও গ্রহণ করতে হবে। আর টেকসই নীতি গ্রহণের প্রাক্কালে বিশ্বের মানবসভ্যার অব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেবলমাত্র কাগজে কলমে নীতি প্রনয়ণ না করে বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হতে হবে। টেকসই নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই পৃথিবীতে ধনী গরীবের ভেদাভেদকে হ্রাস করতে হবে। কারন মানুষকে অভূক্ত রেখে সত্যিকারের আইন প্রয়োগ কখনও সম্ভব নয়। শান্তিময় একটি পৃথিবী সকলের চাওয়া যেখানে ভবিষ্যত প্রজন্ম বড় হবে আপন চাওয়ায়।

লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test