E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়

২০২২ ডিসেম্বর ০৯ ১৫:৫৮:৪০
মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


শনিবার ১০ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ২০২২। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে দিনটি পালিত হয়ে আসছে।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় একটি ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার নেতৃত্বে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ১৯৭২-এর সংবিধানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সকল মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের সংবিধান জাতিসংঘ ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকারের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ।বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর এইদিন ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ হিসেবে পালিত হয়, প্রত্যেক দেশ ও জাতিরই কিছু গৌরবোজ্জল দিন থাকে। সেই দিনগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর এই দিবসগুলোর জন্য কোন না কোন মাস দেশ ও জাতির জীবনে অতি উজ্জ্বল গর্বের মাস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। ডিসেম্বর মাস আমাদের জীবনের তেমনই একটি গর্বের মাস ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস ও ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীদের বড় দিন। বজ্র আটুনি ফস্কো গিরো। আইন যত কঠিন তা ভাঙ্গা ততই সহজ। ঘটা করে আইন করা হয় যেন তা ভাঙ্গার আনন্দ লাভের জন্য। আইন ভাঙ্গার এই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশেরে মতো বাংলাদেশেও আজ মহা সমারোহে পালিত হয় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। নারী-পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মানবাধিকারের প্রভাব অনস্বীকার্য। তাই খৃষ্টপূর্ব প্রায় ২২৮৮ থেকে ২১৩০ সালে পৃথিবীর প্রাচীনতম আইন সংকলন ব্যবলিনের রাজা হাম্মারাবীর নিয়ামাবলীতে মানবাধিকার সংরক্ষণের কথা পাওয়া যায়। খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মদিনার বহু ধর্মভিত্তিক সমাজে হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক প্রনীত ‘মদিনার সনদ-এ মদিনার সকল নাগরিকই সমান অধিকার ভোগ করবে এ কথা বলা হয়েছিল।বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে ঘোষণার ৩০টি ধারায় প্রধান প্রধান অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সংযোজন করা হয়েছে। কোনোপ্রকার বৈষম্য ছাড়াই পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের মানুষ ঐ অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে।

মান বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন...আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। আর বাংলাদেশ আগের মতো ভিক্ষার ঝুলি বহনকারী দেশ নয়, এর উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।

বিশ্ব দরবারে আরও একবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াল বাংলাদেশ, আমাদের মুকুটে যুক্ত হলো নতুন পালক। সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আগামী ২০২৩-২০২৫ মেয়াদকালের জন্য সদস্যপদ লাভ করেছে বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের জন্য এক উল্লেখযোগ্য অর্জন।

বাংলাদেশকে মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য সমর্থন দিয়েছে ১৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা, যা দেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির বহির্প্রকাশ। নির্বাচনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১৬০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে। মালদ্বীপ পেয়েছে ১৫৪ ভোট, ভিয়েতনাম পেয়েছে ১৪৫টি ভোট, কিরগিজস্তান পেয়েছে ১২৬টি, দক্ষিণ কোরিয়া পেয়েছে ১২৩ ভোট এবং আফগানিস্তান পেয়েছে ১২ ভোট।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে বিশ্বেনেতিবাচকভাবে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর যে প্রচেষ্টা চলছে, বাংলাদেশের এই বিজয় তা বাতিল করে দেয়। বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়লাভ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সম্মান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের জন্যও স্বস্তির। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের কাজ হলো সারাবিশ্বের সদস্য দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা। বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন অন্যতম।

মানবাধিকার পরিষদে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শূন্য হওয়া চারটি আসনের বিপরীতে এবার বাংলাদেশসহ সাতটি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে একটি দেশ বাহরাইন কয়েক দিন আগে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, কিরগিজস্তান, আফগানিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ হলে এ সংক্রান্ত ভোটাভুটি হয়।

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৮৯টি ভোট দেয়। বাংলাদেশ ছাড়া এ অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয় মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও কিরগিজস্তান। পঞ্চমবারের মতো জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ। জাতিসংঘের ৪৭ সদস্যের এই সংস্থায় এর আগে ২০০৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল।

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা। বিশ্ব ব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়ন করা এ সংস্থার দায়িত্ব। তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশী-বিদেশী অধিকার গ্রুপ এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার মধ্যে এবারের বিজয় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র‌্যাবের কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বিজয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াবে।

মানবাধিকার পরিষদে স্থান পেতে জাতিসংঘের কাছে মানবাধিকার উন্নয়নে জাতীয় পর্যায়ে ২০টি এবং বৈশিক পর্যায়ে ১৪টি প্রতিশ্রুতি দেয় বাংলাদেশ। এতে বলা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন ও তথ্য কমিশনসহ এ ধরনের সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী ও কার্যক্রমের দিক থেকে সক্রিয় করবে বাংলাদেশ।

ইশতেহারে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার সব নাগরিকের জন্য সুরক্ষিত হবে। বাংলাদেশ সংবিধান এর প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকারেরও নিশ্চয়তা দেয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েক লাখ লোককে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরে সরকার।

গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারের ৯টির মধ্যে ৮টি সনদে সই করেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ইসি, দুদক, পিএসসি এবং তথ্য কমিশনসহ এ ধরনের সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী এবং কার্যক্রমের দিক থেকে সক্রিয় করবে সরকার। তাদের পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও জনবল দেওয়া হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষার জন্য ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হবে।

জাতিসংঘে সর্বোচ্চ ভোটে জয় শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি বিশ্বনেতাদের আস্থার প্রতিফলন। বাংলাদেশের মানবাধিকারের রেকর্ডে বিশ্ব নেতৃত্বের যে আস্থা রয়েছে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে তা হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন।

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাহসিকতা দেখিয়ে মানবাধিকার রক্ষায় এক বিরাট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রত্যয় বিদেশী দেশগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সাম্প্রতিককালে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটছে না যাতে ঢালাওভাবে বলা যায়, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামে গুম ও খুনের যে তালিকাটি বিভিন্ন দেশ এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়া হয়েছিল, সে তালিকার প্রায় অর্ধেকই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যাদের হারিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন। এমনকি বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বেশ কিছুদিন গুম হয়ে থাকার পরে উদ্ধার হয়েছেন। তাই যারা ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে গলা ফাটিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এও সত্য যে, পুলিশ হেফাজতে যে কয়টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে শাস্তিও দিয়েছে সরকার।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অযাচিত অভিযোগ আনছে। অথচ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো ঘটেছে ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে। ২০০১-এর নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা বিবেকবান মানুষদের হতভম্ব করে দিয়েছিল।

নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে অনেক সাধারণ মানুষের ওপর চালানো হয়েছিল নির্যাতনের স্টিমরোলার। গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল অনেক নারী। নির্বাচনপরবর্তী এরূপ সহিংসতা ছিল মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন, সেই বিষয়গুলো পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে নিহায়ত বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক সংঘর্ষ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ও ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট পুরো দেশ প্রত্যক্ষ করেছিল একটি প্রথিতযশা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হত্যার ঘৃণ্য নীলনক্সা।

বর্তমান সরকারের সময়কালে দেশ ভালো চলছে না, দেশ ভালো নেই, মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন বক্তব্য ও প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বহির্বিশ্বে চাপ তৈরির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পর্যালোচনা করলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যারা নালিশ করেন, তারা ব্যক্তি, রাজনৈতিক নাকি দেশের স্বার্থে তা করেন।

রাজনৈতিক দলগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতিক্রমে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পাচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর অনেক অভিযোগ থাকলেও দেশে শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত গণমাধ্যম রয়েছে। ৫৪৪টি দৈনিক, ৩৫৭টি সাপ্তাহিক, ৬২টি পাক্ষিক ও ৯৩টি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। ৩৩টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সচল আছে, যাতে সরকারের নীতি ও কার্যক্রম নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মানবিক পদক্ষেপ সারাবিশ্বে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশ্বে মানবাধিকারের অনেক দেশ যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য শুধু মায়াকান্না করেই থেমে যায়, সেখানে বাংলাদেশ সেই ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি। বরং মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ঘটনা ফলাও করে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তা অনন্য নজির হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সব সময়ই এগিয়ে আছে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পঞ্চমবারের মতো এই কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবদান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাউন্সিলের দায়িত্ব পালনে আমাদের সক্ষমতার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর আস্থার প্রমাণ। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় জাতিসংঘের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

পরিশেষে বলতে চাই, মানবাধিকার দিবসটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। সচেতন মহলের জানা যে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার একে অপরের পরিপূরক হিসেবে একটি অপরটিকে অধিকতর সমৃদ্ধ করে তোলে। গণতন্ত্র ব্যতিরেকে মানবাধিকার যেমন কল্পনা করা যায় না, তেমনি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সাবলীল-স্বাভাবিক গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করাও দুরূহ ব্যাপার। তথাপিও উন্নত বিশ্বের বহু গণতান্ত্রিক দেশে মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত-সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিতকল্পে গৃহীত মানবাধিকার ঘোষণাটি কালের বিবর্তনে আজ বিশ্বব্যাপী প্রচন্ড হুমকির সম্মুখীন। মানবাধিকার আজ মুখরোচক কথা হিসেবে পরিগণিত। ক্ষমতালিপ্সু কতিপয় হিংস্র দানবরূপী মানুষ আধিপত্য বিস্তারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালাচ্ছে পরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধন।

পশ্চিমা বিশ্ব তথাকথিত মানবাধিকারের তকমা লাগিয়ে ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। সিরিয়া ও ইয়েমেনের লাখ লাখ নাগরিকের ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের অসহনীয় কাতরতার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে মানবতা। বিশ্বময় মানবতার ফেরিওয়ালারাই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণে ব্যতিব্যস্ত-লিপ্ত রয়েছে।আর আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দিন। এদিন বিশ্বের মানচিত্রে সৃষ্টি হয় নতুন একটি সার্বভৌম দেশ, বাংলাদেশ। যা বাঙালি জাতিকে এনে দেয় আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন সেসব শহীদকে বিন্ম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। বিজয়ের পর ৫১ টি বছর পেরিয়ে গেলেও রক্তক্ষরণ আজো থামেনি। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিজয়ের এ দিনে সবার অঙ্গীকার- ‘সুন্দর ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার।

লেখক : মানবাধিকার কর্মী, গবেষক ও কলামিষ্ট, প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test