E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঐক্য পরিষদের লংমার্চ এবং হিন্দু মহাজোটের পরিসংখ্যান  

২০২৩ জানুয়ারি ১০ ১৪:৩৬:৫২
ঐক্য পরিষদের লংমার্চ এবং হিন্দু মহাজোটের পরিসংখ্যান  

শিতাংশু গুহ


গত সপ্তাহে ঢাকায় দু’টি খবর জাতীয় দৈনিকগুলো গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। এগুলো সামাজিক বা অর্ধ-রাজনৈতিক। আওয়ামী লীগ-বিএনপি যেমন ক্ষমতার রাজনীতি করে, ঐক্য পরিষদ ও হিন্দু মহাজোট তেমনি সংখ্যালঘু বা হিন্দুদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে। নির্বাচনী বছর, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সাথে তাল মিলিয়ে সামাজিক সংগঠনগুলো তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামবে সেটা স্বাভাবিক। নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার আন্দোলনে এক্ষণে দেশে ঐক্য পরিষদ ও হিন্দু মহাজোট অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, হয়তো এজন্যে সরকারি দল এদের দুই প্রধান নেতা রানা দাশগুপ্ত ও গোবিন্দ প্রামাণিককে এমপি হবার প্রস্তাব দিচ্ছে?   

হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ শনিবার (৭ জানুয়ারি ২০২৩) ঢাকায় লংমার্চ’র ডাক দিয়েছিলো। শাহবাগে পুলিশ বাধা দেয়, নেতারা স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে দেন্। এদের দাবি হচ্ছে, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন। এ দু’টি ২০১৮’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ছিলো, ঐক্য পরিষদ এবার নির্বাচনের আগে এর বাস্তবায়ন চায়। এছাড়া তাঁদের অন্য দাবিতে রয়েছে সমতল আদিবাসী পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ বাস্তবায়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন। ঐক্য পরিষদ ২৪শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বিভাগীয় সদর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

হিন্দু মহাজোট সাংবাদিক সম্মেলন করে ২০২২-এ হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, গত বছর আদিবাসী-হিন্দু ধর্ষিত হয়েছে ৩৯ নারী, তন্মধ্যে গনধর্ষণ ২৭। ধর্ষণের পর ১৪ নারীকে হত্যা করা হয়েছে, মোট হত্যা ১৫৪জন। তাঁদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লিখিত বক্তব্যে মহাজোট বলেছে, ৪২৪ সংখ্যালঘুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, ৬২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সংঘবদ্ধ হামলা হয়েছে ৯৫৩টি। অপহৃত হয়েছে ১২৭, অপহরণের চেষ্টা হয়েছে ২৭ জনকে। ৪৪৫টি পরিবারকে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে। ১৫২ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৪০ জনকে। ৫১ টি মন্দিরের ভূমি দখল করা হয়েছে। মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১২৮টি, প্রতিমা ভাংচুর ৪৮১টি, প্রতিমা চুরি ৭২টি।

হিন্দু মহাজোটের পরিসংখ্যানে আরো অনেক তথ্য আছে। তারা বলেছে, দেশের মিডিয়া ও তাঁদের নিজস্ব সূত্র সারা বছরে সংগৃহিত তথ্য থেকে এ হিসাব দেয়া হয়েছে। এসব পরিসংখ্যান হেসে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই, সরকারের উচিত এগুলো তদন্ত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। হিন্দু মহাজোট আরো একটি মূল্যবান কথা বলেছে, তা হচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করেনি। এ কথাটি হিন্দুদের মনের কথা, এবং কথাটি সত্য। বাংলাদেশে কোন সরকারই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে কখনই আন্তরিক ছিলোনা, এখনো নয়? এই একটি বিষয়ে সরকার ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ ‘পাকিস্তানী দৃষ্টিভঙ্গি’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, অথবা বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন না। ৯ই জানুয়ারি ২০২৩।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test