E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এ মৃত্যুর দায় কে নেবে?

২০২৩ জুন ০৭ ১৯:০১:৩৭
এ মৃত্যুর দায় কে নেবে?

মীর আব্দুল আলীম


পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের সড়ক মহাসড়কে ২৪ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক রয়েছে। যা বিশ্বে আর কোথাও নেই। এসব অদক্ষ চালকদের দাপটে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছেই। লাগাম টানা যাচ্ছে না। আজ (৭ জুন) যখন এ লেখাটি লিখছি তখন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সিলেটের নাজিরবাজারে ট্রাক ও পিকআপের সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১১ জন। তাদের কারো অবস্থাই শংঙ্কামুক্ত নয়। দু’টি পরিবহনই নাকি সড়ক আইন না মেনে বেপরোয়া গতিতে চলছিলো। পিকাপ ড্রাইভারের ছিলনা কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। তাহলে এ মৃত্যুর দ্বায় কে নেবে? সবার চোখের সামনে লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে গাড়ি চালায় ওরা? দেশে অনেকসড়ক আইন হয়েছে। নয়া সড়ক আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে। বেদনার কথা হলো, এ আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে সড়কে প্রতি বছর আহত এবং নিহতের হার বাড়ছেই। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে এমনটা হচ্ছে।

আইন না মানায় প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪জন এবং আহত ৪৬৮জন। চলতি ২০২৩ সালে াানুপাতিক হারে দুর্ঘটনা আরো বেড়েছে বলে পত্রিকান্তে দেখেছি।সড়ক মৃত্যুর হার বিগত দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি। শেষ বছরের দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ৯ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। যা জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে এসময়ে।

সড়ক আইন ছিল আগেও, এখনো আছে। প্রয়োগ হয় কি কখনো? নিরাপদ সড়ক হয়তো আর হবে না। অসভ্য দেশে সড়ক নিরাপদ হয় কী করে? যে দেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা আইন বাতিল করার কথা বলে আইনের লাইসেন্স পায়, আর প্রশ্রয় পায় সেদেশে সড়ক নিরাপদ হওয়ার আশা করা মোটেও ঠিক না। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবে কতটা প্রতিফলন ঘটাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়?মনে প্রশ্ন জাগে, আদৌ কি সড়ক আমাদের জন্য নিরাপদ হবে? থামবে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল?

ভাবি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু টানেল সবকিছুইতো হচ্ছে দেশে। অসভ্য খুনে সড়ক হয়তো আদৌ নিরাপদ হবে না। এ নিয়ে মনে বড় সংশয়! এদেশের সড়ক নিরাপদ হওয়া কিন্তু খুব জরুরি। খুন খারাবির চেয়ে সড়কেই মানুষ বেশি মরছে। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে, আহত হয়ে পঙ্গু হচ্ছে শত শত মানুষ। সড়কে আইন না মানা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ এবং অবৈধ ড্রাইভার গাড়ি চালাতে গিয়ে হরহামেশাই দুর্ঘটনায় পড়ছে। সম্প্রতি উচ্চ আদালত ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না। মোটরসাইকেলে হেলমেট না থাকলে জ্বালানি তেল না দেওয়ার নির্দেশ ছিল পেট্রোল পাম্পগুলোর প্রতি। সে নির্দেশ মানা হচ্ছে। তাই মোটরসাইকেল আরোহীরা হেলমেট পরে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজেই পরিবহনের ক্ষেত্রে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি না দেওয়ার বিষয়টি জনস্বার্থে মেনে নেওয়া দরকার এবং মেনে নিলে মানুষ উপকৃত হবে। সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।

এর আগে সড়ক নিরাপদ না হওয়ার ব্যাপারে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে দোষারোপ করা হতো। এখন তিনি নেই তাহলে কার শক্তিতে পরিবহন সেক্টর মালিক শ্রমিকরা সড়ক আইন অমান্য করছে? এভাবে চললে আইন করে কোনো লাভ হবে না। আইন যেমন পাকাপোক্ত করতে হবে, আইন মানতে হবে, আইন মানাতে হবে, আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। তবেই সড়ক নিরাপদ হবে।
এদেশে কত শত রাজীবের হাত যাচ্ছে, পা যাচ্ছে, মাথা যাচ্ছে, এখলাছ উদ্দিন, ইমাম হোসেন, শারমিন, মিশুক-তারেক, সাইফুর রহমানদের জীবন যাচ্ছে। থামছেই না সড়কে মৃত্যু মিছিল। আমরা বিশেষ দু’একজনের জন্য আহ্ উহ্ করি। প্রতিদিন কত খালিদ, কত হৃদয় পঙ্গু হচ্ছে, জীবন দিচ্ছে তার খোঁজ কি রাখি? আমরা কেন মৃত্যুর মিছিল রোধ করছি না? কেবল আলোচিত ঘটনায় মন্ত্রী, এমপিরা ছুটে যান, স্বজন কিংবা লাশের পাশে। আমরা মায়া কান্না করি; লাভ কি তাতে? আমাদের সড়ক যেন এখন মরণ ফাঁদ। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন অকালে প্রাণ ঝরছে না, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারি হয়ে উঠছে না। দেশে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে তাতে, নিরাপদ সড়ক বলে আর কিছু নেই। এ অবস্থায় আজকাল আর কেউ ঘর থেকে বের হলে প্রাণটা নিয়ে ফের ঘরে ফিরতে পারবেন কি না সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।

এমন কোনো দিন নেই, যেদিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সরকার গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে পড়ে তা রহিত করতে বাধ্য হয় সরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারকে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার কাছে প্রায় জিম্মি থাকতে দেখা যাচ্ছে।

এভাবে চালকদের শাস্তি না হওয়া, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালানো, সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে ইদানীং সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ঘটনার সাথে জড়িত চালকদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার ঘটনা এদেশে বিরল। দেখা গেছে, প্রায় সব ক’টি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই চালকরা পার পেয়ে গেছে। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে।

এ তো দেখছি খুনিদের দেশ। সড়ক খুনিরা দাপটের সাথে রাস্তায় মানুষ মারছে আর আমরা সবাই তা চেয়ে চেয়ে দেখছি। সড়ক দুঘর্টনা প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্ট কারণ। তাহলে এমন মৃত্যুকে আমরা কেন খুন বলব না? সড়ক দুঘর্টনায় নিহতরা পরোক্ষভাবে হত্যারই শিকার হন। কিন্তু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জনকাক্ষিত উদ্যোগ নেই বাংলাদেশে। ফলে সড়ক দুঘর্টনা না কমে জ্যামিতিক হারেই বেড়ে চলেছে। এমন কোনো দিন নেই, যে দিন সড়ক দুঘর্টনা হচ্ছে না। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে সড়ক দুঘর্টনা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সরকার দুঘর্টনা সংঘটনকারী গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেন। এতে চালকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সড়ক দুঘর্টনায় কারো মৃত্যু ঘটলে এ জন্য চালককে নরহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে পরে তা রহিত করতে বাধ্য হয় সরকার।

এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারকে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার কাছে প্রায় জিম্মি থাকতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে দুঘর্টনা সংঘটনকারী চালকদের শাস্তি না হওয়া, ট্রাফিক আইন লংঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক কতৃর্ক গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালানো, সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে ইদানীং সড়ক দুঘর্টনা মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুঘর্টনার সাথে জড়িত চালকদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার ঘটনা এদেশে বিরল। দেখা গেছে, প্রায় সব ক’টি দুঘর্টনার ক্ষেত্রেই চালকরা পার পেয়ে গেছে। কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে। উৎকোচ কিংবা অথর্ ভাগাভাগির মধ্যে দিয়েই সমাপ্তি ঘটেছে এসব ঘটনার।

সরকারি হিসাবে গত ১০ বছরে সড়ক দুঘর্টনায় মানুষ মারা গেছে ৩৪ হাজার ৯১৮ জন। প্রতি বছর মারা যায় ৩ হাজার ৪৯১ জন। থানায় মামলা হয়েছে এমন দুঘর্টনার হিসাব নিয়ে পুলিশ এ তথ্য দিয়েছে। বেসরকারি হিসাবে প্রতি বছর সড়ক দুঘর্টনায় মারা যাচ্ছে ২০ হাজার ৩৪ জন। প্রতিদিন গড়ে মারা যায় প্রায় ৫৫ জন। পুলিশের দেয় তথ্য ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকার কারণ হল, দুঘর্টনার পর পুলিশকে ৬৭ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এ ঝামেলার কারণে অনেক দুঘর্টনায় মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ রেকডর্ভুক্ত করে না।

যা হোক, পুলিশের দেয় তথ্যানুযায়ী ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পযর্ন্ত সড়ক দুঘর্টনায় মারা গেছে প্রায় ২ হাজার ১৪০ জন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে ১ হাজার ১৮৬ এবং সামান্য আহত হয়েছে ১৫৭ জন। অন্য একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পযর্ন্ত দেশে সড়ক দুঘর্টনা ঘটেছে ৭২ হাজার ৭৪৮টি। মারা গেছে ৫২ হাজার ৬৮৪ জন। আহত ও পঙ্গু হয়েছে আরও কয়েক হাজার মানুষ। ২০০৯ সালের এক আন্তজাির্তক পরিসংখ্যানে দেখা যায় এশিয়া, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার ১৫টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুঘর্টনায় মৃত্যুর সংখ্যা নেপালে বেশি, দ্বিতীয় বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম যুক্তরাজ্যে। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার নিবন্ধিত যানবাহনের দুঘর্টনায় নেপালে মারা যায় ৬৩ জন এবং বাংলাদেশে ৬০ জন। যুক্তরাজ্যে এ হার মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

ওই গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, সড়ক দুঘর্টনার শিকার ব্যক্তিদের প্রায় ৩২ শতাংশ ১৬ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় দেশে যানবাহন দুঘর্টনায় বছরে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় এবং আহত ও পুঙ্গ হয়ে পরনিভর্রশীল জীবন কাটাতে বাধ্য হয় এর চাইতেও অনেক বেশী মানুষ। সড়ক দুঘর্টনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায়, সড়ক দুঘর্টনায় ফি বছর ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদহানি হয়। এটি দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৯৫ শতাংশের সমান। বাংলাদেশে সড়ক দুঘর্টনায় প্রাণহানির হার উন্নত দেশসমূহের তুলনায় শতকরা ৫০ ভাগ বেশি।

এক গবেষণা জরিপ হতে জানা যায়, ৪৮ শতাংশ সড়ক দুঘর্টনার জন্যে দায়ী যাত্রীবাহী বাস, ৩৭ শতাংশ দায়ী ট্রাক। এক গবেষণায় দেখা যায়, নানা কারণে দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরযানে ১০০টি ভয়াবহ দুঘর্টনা ঘটছে। উন্নত দেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক হাজার মোটরযানে দুই দশমিক পাঁচ ভাগ থেকে তিন দশমিক পাঁচ ভাগ। অন্যদিকে আমাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার যানবাহনে ১৬৩ জন দুঘর্টনার শিকার হচ্ছেন। সরকারি হিসাব মতে, ১৯৯৯ সালে ৪ হাজার ৯১৬ জন, ২০০০ সালে ৪ হাজার ৩৫৭ জন, ২০০১ সালে ৪ হাজার ৯১ জন, ২০০২ সালে ৪ হাজার ৯১৮ জন, ২০০৩ সালে ৪ হাজার ৭ ৪৯ জন, ২০০৪ সালে ৩ হাজার ৮২৮ জন, ২০০৫ সালে ৩ হাজার ৯৫৪ জন, ২০০৬ সালে ৩ হাজার ৭৯৪ জন, ২০০৭ সালে ৪ হাজার ৮৬৯ জন, ২০০৮ সালে ৪ হাজার ৪২৬ জন, ২০০৯ সালে ৪ হাজার ২৯৭ জন, ২০১০ সালে ৫ হাজার ৮০৩ জন, ২০১১ সালে ৩ হাজার ৬৮৮ জন, ২০১২ সালে ৫ হাজার ৯১১ জন, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৮৬৫ জন এবং ২০১৪সালে ৩ হাজার ৯৭৫ জন, ২০১৫ সালে ৮ হাজার ৬৪২ জন, ২০১৬ সালে ৭ হাজার ৪২৭ জন, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৬৯৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ২০১৮তে চলতি জুন পযর্ন্ত হিসাবে বিগত বছরের তুলনায় সড়ক দুঘর্টনা বেড়েছে। প্রতিবছরই এভাবে সড়ক দুঘর্টনায় মানুষ মরছে আর তা রোধ করা যাচ্ছে না কেন? অদক্ষ ও দুই নম্বরী লাইসেন্স প্রাপ্ত চালকগণই যে এসব দুঘর্টনার জন্যে দায়ী তা বলাই বাহুল্য। এর প্রতিকার কেউ করছে না।

দেশে সন্ত্রাস দমনে যদি বিশেষ র‌্যাব বাহিনী গঠন করা যায়, দুঘর্টনা রোধে এ জাতীয় বাহিনী নয় কেন? এক হিসেবে দেখা গেছে, দেশে সন্ত্রাসীদের হাতে শতকরা ৩০ জন লোক মারা গেলে সড়ক দুঘর্টনায় মারা যায় ৭০ জন। ৩০ জনের জীবনসহ অপরাপর জানমাল রক্ষায় সরকারের একটি বাহিনী থাকলে শতকরা ৭০ জনের জীবনসহ অসংখ্য আহত ও ডলারে কেনা পরিবহন রক্ষায় সরকার সড়ক দুঘর্টনা রোধে বাহিনী গঠন করছে না কেন? দেশের মানুষের জানমাল রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দুঘর্টনা রোধে চরমভাবে ব্যথর্ সরকারকে দেশের মানুষের স্বাথের্ যথাসম্ভব দ্রুত ভাবতে হবে। আমরা জেনেছি, কেবল সড়ক দুঘর্টনায়ই দেশে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটছে। এ হিসেবে মাসে ৯০০ জন এবং বছরে ১০ হাজার ৮০০ জন মারা যাচ্ছে। তবে বিআরটিএ’র পরিসংখ্যানমতে, এ সংখ্যা দিনে ১৬ এবং বছরে পাঁচ হাজার ৭৬০ জন।

আইন না মানাই হচ্ছে সড়ক দুঘর্টনার মূল কারণ। এ ক্ষেত্রে সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশসহ চলমান প্রশাসন এ আইন প্রয়োগে ব্যথর্ হলে প্রয়োজনে তাদের ঢেলে সাজাতে হবে, অন্যথায় দুঘর্টনা রোধে নতুন করে যাের্বর মতো দুঘর্টনা রোধে বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হবে। দুঘর্টনার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে — ১. ত্রুটিপূণর্ যানবাহন চলাচল, ২.মোবাইল ফোন ব্যবহার, ৩.অতিরিক্ত যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন, ৪. ট্রাফিক আইন না মানা, ৫. নিয়োজিতদের দায়িত্বে অবহেলা, ৬. চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা ও অসতকর্তা এবং ৭. অরক্ষিত রেললাইন। আর এসব কারণে প্রতিদিনই ঘটছে হতাহতের ঘটনা।

এদেশে সড়ক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক নয়, তা হচ্ছে মানবসৃষ্ট কারণে। এই হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা পরোক্ষভাবে হত্যারই শিকার। কিন্তু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ নেই। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে।

দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে, ঘটবেও। কেন তা রোধ করা যাচ্ছে না? আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় দেশে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রুখতে হবে? আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবহন মালিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছ থেকে সমন্বিত আন্তরিক, সচেতন, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি।

লেখক : সমাজ গবেষক, সাধারন সম্পাদক-কলামিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test