E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সীতাকুন্ড শুধু মন্দির নয়, এটি দেশের ঐতিহ্য

২০২৪ জানুয়ারি ০১ ১৭:৩১:৪৮
সীতাকুন্ড শুধু মন্দির নয়, এটি দেশের ঐতিহ্য

শিতাংশু গুহ


বছরের প্রথম দিন, ১লা জানুয়ারী ২০২৪, সবাইকে শুভেচ্ছা, স্বাগতম। নুতন বছরে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এ আনন্দের দিনে আমায় লিখতে হচ্ছে, সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির নিয়ে। এটাই কপাল। নির্বাচন নিয়ে তো লিখেই যাচ্ছি, কি লাভ? প্লেটো বলেছিলেন, ‘যেমন নাগরিক, তেমন রাষ্ট্র’। আমি লিখলাম, ‘যেমন গণতন্ত্র, তেমন ভোট’। না, এ লেখাটি নির্বাচন নিয়ে নয়, এটি ঐতিহ্যময় চন্দ্রনাথ মন্দির নিয়ে, অন্তত: বছরের প্রথম দিন কিছু পুন্য কামাই।

আমার কথা না, একজন জহিরুল হক বাপি লিখেছেন, বছর দুই আগে কেউ একজন চন্দ্রনাথ মন্দিরে আযান দিয়েছিলো। পুলিশ তাঁকে ধরেছে। এরপর কি হয়েছে জানা যায়নি। ক’দিন আগে ক’জনা মিলে সেখানে ‘আল্লাহু-আকবার’ শ্লোগান দিলো। এরপর একজন ফেইসবুকে চন্দ্রনাথ মন্দিরে ‘বিফ বারবি-কিউ’ ইভেন্ট দিলো। আর একজন লিখলো, এখন বাকি থাকলো শুধু ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং রমনা কালীমন্দির। এগুলো নির্বাচনের ঠিক আগ-খান দিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

এ ঘটনাগুলো একটি’র সাথে আর একটি সম্পর্কিত এবং উদ্দেশ্য-প্রনোদিত তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সরকারের সিএসএ (সাইবার সিকুরিটি এক্ট) এখানে অকেজো, কাজ করেনা। প্রশাসন এসব দেখেনা। সীতাকুণ্ডের এমপি, যিনি দুইবার নির্বাচিত, এবারো আগের দুই-বারের মতোই নির্বাচিত হতে চলেছেন, তিনি সীতাকুণ্ডের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অনেকের সন্দেহ তিনি মন্দিরটি উৎখাতের চেষ্টা করছেন? একটি ভিডিওতে দেখলাম, তিনি ওসব অস্বীকার করেছেন।

সীতাকুণ্ডের ইতিহাস লিখছি না, তবে ফাল্গুন মাসে শিব-চতুর্দশীতে এখানে বিশাল মেলা হয়, পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা থেকে এবং দেশের মানুষ মিলে প্রায় ২০লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। সম্ভবত: এসময় সীতাকুণ্ডে ভাল ব্যবসা জমে। বিশ্ব এখন ব্যবসার জন্যে উন্মুক্ত, সীতাকুণ্ডে এই ব্যবসাটা যাতে আরো ভালো জমে, বুদ্ধিমান মানুষ সেই চেষ্টাই করবে। সকলের বোঝা উচিত, এই ইন্টারনেট যুগে সীতাকুণ্ডের মত মন্দির দখল করা যাবেনা।

আফগানিস্থান ‘বাহামিয়ান’ মন্দির ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। সীতাকুন্ড শুধু মন্দির নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, একটি দর্শনীয় স্পট। এটি রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। বিমানের শ্লোগান, ‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী’। আপনার হাতের মুঠোয় ইহুদীদের তৈরী ‘সেলফোন’ সকল অপকর্ম বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেবে, দিচ্ছে। ইহুদী-নাসারাদের তৈরী ‘ফেইসবুক’-যা দিয়ে আপনি ঢাকেশ্বরী-রমনা কালিবাড়ী দখল করতে চাচ্ছেন, তা কিন্তু আপনাকে ‘হাজতবাস’ নিশ্চিত করে দিতে পারে।

তাই ভালো হয়ে যান, আপনার ধর্ম আপনি পালন করুন, অন্যকে তাঁর ধর্ম পালন করতে দিন্। আজ এই পৃথিবীতে ৮শ’ কোটি মানুষের বাস, সেখানে আপনি সংখ্যালঘু। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, বর্ডারটা পেরুলেই আপনি সংখ্যালঘু, সুতরাং সংখ্যাগুরুর বড়াই বা ক্ষমতা না দেখানোই ভালো। সীতাকুন্ডকে হিন্দুর মন্দির হিসাবে না দেখে, দেশের সম্পদ হিসাবে দেখুন। সীতাকুণ্ডে আপনার প্রতিবেশীকে হিন্দু হিসাবে না দেখে প্রতিবেশী হিসাবে দেখুন।

পৃথিবীটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জায়গা। প্রতিবেশীর সাথে মিলেমিশে থাকতে হয়, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে হয়, নইলে সমস্যা বাড়ে বৈকি। চন্দ্রনাথ মন্দিরে সমস্যার আশু সমাধান হউক। সরকার সদিচ্ছা না দেখালে হিন্দুদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, পাশে অবশ্যই ভালো মুসলমানদের পাবেন। দেশে চন্দ্রনাথ মন্দিরে গরুর মাংস দিয়ে বারবিকিউ করার মানুষ যেমন আছে, জহিরুল হক বাপি’র মত মানুষও আছে। শুভশক্তি একত্রে দাঁড়ালে অশুভ-শক্তি পালিয়ে যায়। একাত্তর এর বড় প্রমান।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test