E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জনগণের অংশগ্রহণে প্রাণ ফিরে আসুক জাতীয় নির্বাচনে

২০২৪ জানুয়ারি ০১ ১৮:০২:৩১
জনগণের অংশগ্রহণে প্রাণ ফিরে আসুক জাতীয় নির্বাচনে

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


সংবিধান অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এছাড়াও স্থানীয় সরকারের জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন রয়েছে। তবে দেশে মূল আকর্ষণের জায়গাটা হলো জাতীয় নির্বাচন একথা আমাদের না মানার কোন সুযোগ নেই কারন এর উপরই নির্ভর করে পরবর্তী নির্বাচন কোন দলের অনুকূলে হবে। যদিও তা হবার নয়। কিন্তু বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে দলীয় প্রতীক। দলীয় পদ্ধতির স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে লাভ ক্ষতির হিসাব এখনও করা হয়নি। তবে দলীয় আনুগত্য না থাকার কারনে অনেক জায়গায় সঠিক প্রার্থী নির্বাচন করা সম্ভবও হচ্ছে না। এমনকি দলীয় নমিনেশন না পাওয়ার কারনে দলীয় প্রার্থীর সাথে পেরে না উঠার কারনে যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে সাহসও পাচ্ছে না।

আমাদের দেশে প্রতিটি নির্বাচনের সাথেই জনগণের আবেগ আকাংঙ্খা জড়িয়ে রয়েছে। নির্বাচন হচ্ছে একটি উৎসব। প্রতিটি ভোটার ও জনগণ এতে শরিক হতে পারে মনের আনন্দে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে ভোটাররা দলীয় অথবা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য। ভোট কিংবা সমর্থন প্রতিটি ব্যক্তির নাগরিক অধিকার যা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। বিশেষ করে নতুন ভোটারদের মাঝে এর প্রভাব আরো বেশি। প্রথম ভোট দেয়া মানে নিজেকে দেশের নাগরিক ভাবা! অন্যদিকে এই নির্বাচন নিয়ে মাঝে মাঝে সংঘাত তৈরি হয় জনসাধারণের মাঝে। একদিকে নিজের প্রার্থীর প্রতি ভালোবাসা অন্যদিকে অবৈধ টাকার প্রভাবে নির্বাচনে চলে একধরণের যুদ্ধ। সমর্থকরা নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে রাত জেগে পাহারা দেয় নিজের এলাকা। অন্য প্রার্থী ও কর্মীদের এবং অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করা ঠেকাতে চলে প্রতিযোগিতা। এতো বলছি আনন্দময় পরিবেশের একটি নির্বাচনের কথা। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের পর বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের পর এইসব প্রচলিত বিষয়গুলি যেন হারিয়ে গেছে কোথায়। সস্তা সস্তা বুলি এখন আর জনগণ গ্রহণ করছে বলে মনে হয় না।

জাতীয় নির্বাচন বাদে বাকি নির্বাচন গুলিতে কিছুটা আনন্দঘণ পরিবেশ থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সকলের আশা ছিল এবার হয়তো পরিবেশটা ফিরে আসবে। কারো দৃষ্টিতে পরিবেশ আছে আবার কারো দৃষ্টিতে পরিবেশ ফিরে এসেছে। কেউ বলছে পরিবেশ নেই কেউবা বলছে এভাবে পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে না। নানান সমীকরণে এখনও বাঁধা এবারের নির্বাচনের ভোটের পরিবেশ। তবে একথা সত্য যে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাদের সমর্থকরা কেন্দ্রে ভোট দিতে উৎসাহ দেখাবে না। হয়তো পরিচিত কিংবা আত্মীয়তার অথবা এলাকা সূত্রে কিছু মানুষ কেন্দ্রে যাবে তবে সেখানে পরিবেশ থাকবে আনন্দহীন। আমাদের দেশে নিবন্ধিত দলের অভাব না হলেও রয়েছে জনসমর্থনযুক্ত দলের অভাব। প্রতিনিয়ত দল নিবন্ধিত হলেও এসব দলের নেই কোন ভিত্তি। নিজেদের স্বার্থের পাল্লা ভারি করার জন্য দু একজনে মিলে তৈরি হচ্ছে সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল।

দলের প্রধান নেতার পদ পদবী চলে গেলে কিংবা প্রধান মারা গেলে দলে দেখা দেয় বিভক্তি কিংবা ভাঙ্গন। এসব দল অধিক পরিমাণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় না। কারন এসব দল নির্বাচনে আসলো কিনা তা সাধারণ মানুষের বিবেচ্য বিষয় নয়। আবার এইসব দল নির্বাচন বর্জন করলেও জনমনে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। তবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই বড় দল অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন সুন্দর হয় না। বাংলাদেশে প্রতিবারেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে। আমরা বলেও থাকি এবারের পরিবেশ ভিন্ন এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ধারা খুব একটা পুরাতন না হলেও প্রাথমিক হালটাই ধরতে পারছি না। ক্ষমতায় যাওয়া এবং এক দল অন্য দলের প্রতি অবিশ্বাস প্রতিবারই নির্বাচনের সময় বিভিন্ন দলের মাঝে সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি করে। এক দল অন্য দলের উপর দোষ চাঁপাতে ব্যস্ত থাকে। যে কোন মূল্যে যে কোন পস্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার মোহে অন্ধ হয়ে যায়। নিজেদের আচরণ ও পদ্ধতিই সবসময় সঠিক বলে মনে হয় এবং অন্য দলের বিষয় গুলি একেবারেই অযোক্তিক ধরে নেওয়া হয়। তাই ভোটের ধারায় প্রতিবারই পরিবর্তন হয়। যে যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন প্রত্যেক ভোটারই ভোট দিতে চায় একটি সুন্দর পরিবেশে।

এবারের নির্বাচনে বড় বিরোধী দল অংশগ্রহণ করে নাই। নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বানচালের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সীমিত পরিসরে। তাদের দাবী বর্তমান সরকার জনগণের দাবীর প্রতি নজর না দিয়ে এককভাবে নির্বাচনের পায়তারা করছে । তাই এই নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং নাগরিকরা ভোট প্রদান হতে বিরত থাকবেন। অন্যদিকে বর্তমান সরকার বলছে বিরোধী দলের দাবী ভিত্তিহীন। সংবিধান অনুযায়ী এ দাবীর কোন সুযোগ নেই। বিভিন্ন পক্ষ থেকে বারবার আলোচনার কথা বলা হলেও দুপক্ষই সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন। সরকার বড় দলকে বাদ রেখেই নির্বাচনের পথে হেঁটেছেন। নিজের দলের লোকজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা ভোট প্রদানের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যাতে আন্তর্জাতিক ভাবে এ নির্বাচনকে জনগণের দ্বারা অংগ্রহণমূলক বলা যায়। না হলে হয়তো বহি:বিশ্বে এর গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরা যাবে না।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টিসহ আরো কয়েকটি ছোট দলের বেশকয়েকটি আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় সেইসব আসনে কেমন সুষ্ঠ নির্বাচন সরকার উপহার দিতে পারে কারন যেসব আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে সেইসব আসনে জোটের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা প্রত্যেকেই রয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে যা বিভিন্ন মিডিয়া থেকে জানা যায়। সবজায়গাতেই আওয়ামীলীগের দলীয় লোকজন এবং সমর্থকরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন না বলেও জানা যায়। এখন একদিকে স্বচ্ছ অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থী। তাই আগ্রহ থেকেই যায় মহাজোটের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে। যদিও সেটা মোটামুটি নিশ্চিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। সেই জন্য হয়তো বড় কোন ঝুঁকি নিতেই চাইবেন না প্রধানমন্ত্রী। তাই জনসাধারণের চাওয়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জনসাধারণের অংশগ্রহণে সুন্দর একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সেই ক্ষেত্রে ইসি এবং সরকারকে পরিবেশ তৈরি করে দিতে কারন সামনে আরো জটিল অবস্থা ধারণ করতে পারে। ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মতামত প্রতিফলিত হবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test