E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেষ বেলায় ভোটের চিত্র 

২০২৪ জানুয়ারি ০৫ ১৬:৫৩:২৩
শেষ বেলায় ভোটের চিত্র 

শিতাংশু গুহ


নির্বাচনটি এসেই গেল, কাল রবিবার ৭ই জানুয়ারী ভোট। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ৪ঠা জানুয়ারী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণটি ভাল হয়েছে। তিনি বলেছেন, “চলার পথে যদি কোন ভুল-ভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে আপনারা ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন—এটাই আমার আবেদন। আবার সরকার গঠন করতে পারলে, ভুলগুলি শোধরাবার সুযোগ পাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন”।

বিএনপি ৬ই জানুয়ারী শনিবার ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘন্টা, অর্থাৎ সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত হরতাল আহবান করেছে। নির্বাচন বর্জন ও গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই সাথে নির্বাচন বর্জনকারী জোট আহুত ‘অসহযোগ’ তো চলছেই। এঁরা এখনো আশায় আছে, আমেরিকা তাঁদের জন্যে কিছু করবে। নির্বাচন হয়ে গেলে এদের হতাশা বাড়বে।

ওয়ালস্ট্রীট জার্নাল সদ্য বলেছে, শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত বিজয়ী হতে চলেছেন। শেখ হাসিনা’র বিজয় মানে বাইডেনের পরাজয়। লেখক ও কলামিস্ট সদানন্দ ধুমে মতামত কলামে লিখেছেন, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনার দুর্বলতা যাই হোক না কেন, তার বিকল্প আরো খারাপ। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দিয়েছিল। তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের দমন করেছেন এবং দেশকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছেন।

ইতিমধ্যে প্রায় ৪শ’ পর্যবেক্ষক দেশে পৌঁছেছেন। নিন্দুকরা বলছেন, সরকার এদের কাউকে কাউকে ভাড়া করে এনেছেন। জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোতো নিনো জানিয়েছেন। তিনি মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সহযোগী। জাতিসংঘ আশা করছে, নির্বাচন সুষ্ঠূ, স্বচ্ছ ও অবাধ হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের জন্য ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৯৭০ জনের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে।

নির্বাচনের সাথে সাথে বিশ্ব এ সময়ে আর একটি বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি দৃষ্টি রাখছে। সেটি হলো, বাংলাদেশের আদালত নোবেল বিজয়ী ড: মোহাম্মদ ইউনুস-কে ৬মাসের কারাদন্ড দিয়েছে। আপীলের সুযোগ আছে, তবে এ রায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করছে। যতই বলা হোক না কেন, আদালতের রায়, সরকারের করার কিছু নেই? বিশ্ব তা মানতে নারাজ। তাঁরা এটিকে ‘কাজীর বিচার’ মনে করছেন। এ সময়ে এই বিচারের কি এমন প্রয়োজন ছিলো কেজানে? এক সাথে এতগুলো ফ্রন্ট খোলার দরকারটা বা কি?

শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী মাঠ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা অনেকেই কেটে পড়ছেন। তবে নৌকা প্রতীক পাওয়া ২৬জন বহাল তবিয়তে আছেন। তাঁরা কোথাও যাচ্ছেন না, বা যাওয়ার সুযোগ নেই। শুরুতে বলা হয়েছিলো, শেখ হাসিনা যাদেরকে নৌকা দিয়েছেন, তাঁদের নির্বাচিত হবার গ্যারান্টি দেননি। এখন মনে হচ্ছে, হাওয়া পাল্টাচ্ছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ১০জন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বহিস্কার করেছে। নির্বাচন কমিশনের আচরণে কিছুটা স্বনির্ভরতা টের পাওয়া যাচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের ডাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের রাষ্ট্রদূত যাননি। নির্বাচনটি হয়তো ভালোই হবে? নির্বাচনের পরে কি হবে সেটি ভিন্ন প্রশ্ন?

নুতন সরকার ক্ষমতাসীন হলে, পরিস্থিতি ভিন্নতর হতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক অবরোধ দেবে বলে মনে হয়না। দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার রাতারাতি ধপাস করে পড়ে যাবেনা। নির্বাচনে না এসে বিএনপি ভুল করেছে। ২০২৪-এর মে-মাসে ভারতে নির্বাচন, মোদী জয়ী হচ্ছেন। নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচন। হোয়াইট হাউস রিপাবলিকানদের হাতে যাবার সম্ভবনা উজ্জ্বল। এমনটি ঘটলে শেখ হাসিনা লাভবান হবেন। এবারের নির্বাচনটি হয়তো অংশগ্রহণমূলক হচ্ছেনা, তবে এটিকে অবৈধ বলা যাবেনা।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test